রানা আব্বাস
প্রশ্ন: মিরপুর টেস্টের পর বিরাট কোহলি জার্সি উপহার দিল আপনাকে। এই উপহারের গল্পটা শুনতে চাই।
মেহেদী হাসান মিরাজ: ওর কাছে ওয়ানডে সিরিজের সময় আমি একটা জার্সি চেয়েছিলাম, স্বাক্ষরসহ। সিরিজ শেষ হওয়ার পর সেটা ডেকে দিয়েছে।
প্রশ্ন: এই সিরিজে ভারত আপনাকে একটু আলাদাভাবে দেখল কি না।
মিরাজ: ওরা আমাকে আলাদাভাবে দেখেছে। এই জিনিসটা আমারও বেশ ভালো লেগেছে। ওয়ানডে সিরিজ জিতলাম, মিরপুর টেস্টটাও প্রায় জিতে গিয়েছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত হয়নি।
প্রশ্ন: মিরপুর টেস্টের কোন পর্যায়ে মনে হয়েছে আর জেতা হচ্ছে না?
মিরাজ: সব সময় জয়ের বিশ্বাসটা ছিল। এই উইকেটে এমন একটা ব্যাপার ছিল, যেকোনো সময় ওদের উইকেট পড়ে যেতে পারে। আর একটা উইকেট পড়ে গেলেই ১০ রান করাও কঠিন ছিল। শেষের দুজন টেলেন্ডার ব্যাটার। যেকোনো সময় ভালো দুটো বলে আউট হয়ে যেতে পারত। আমাদের সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। এসব খেলায় সুযোগগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফিফটি-ফিফটি সুযোগকে শতভাগে পরিণত করতে হয়। শেষের দিকে ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। সুযোগগুলো মিস না হলে জিততে পারতাম। তবু ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা লড়াই করছি। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকেও আমরা ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: ভারতকে টেস্টেও হারানোর বড় সুযোগ হাত ছাড়া হলো?
মিরাজ: এর আগে আমরা অনেকভাবে হেরেছি। এবার একটা সুযোগ ছিল, হয়নি। কিন্তু এবার আমরা এতটা কাছে গেছি, আমার বিশ্বাস সামনে আমরা জিতব।
প্রশ্ন: এটাই এই সিরিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি?
মিরাজ: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। প্রাপ্তির জায়গা থেকে দেখলে আরও অনেক কিছু আছে। অভিষেকেই জাকির যেমন সেঞ্চুরি করেছে, সৌরভ ভাই (মুমিনুল হক) রানে ফিরেছে। বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। তাইজুল ভাই অসাধারণ করছে, আমিও সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট পাইছি, টেস্টে ১১টা। বোলাররাও এই সিরিজে রান করেছে। এই ছোট ছোট অবদানগুলো অবশ্যই টেস্ট সিরিজের প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: ৫০ ওভারের ক্রিকেটে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি নিজেদের করে নিতে পারে বাংলাদেশ, টেস্টে সেখানেই ঘাটতি। এটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মিরাজ: দেখুন, ওয়ানডেতে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো। এই ফরম্যাটকে আমরা এত সুন্দরভাবে মাথার ভেতর নিয়ে ফেলেছি এবং গুছিয়ে ফেলেছি, জানি যে এটা কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, কীভাবে খেলতে হয়। আর টেস্ট ক্রিকেট কিন্তু দেখা যায় পাঁচ দিন ধরে খেলতে হয়। ভালো খেলাটা পাঁচ দিন টেনে নিতে হয়। পাঁচ দিন সব সময় একই রকম যায় না। ভালো-খারাপ মিলিয়ে যায়। পাঁচ দিনই কোনো না কোনো কিছু ঘটে। ওই পাঁচ দিন শারীরিক, মানসিক, ফিটনেস, স্কিল—সবকিছুর ধারাবাহিকতা প্রয়োজন হয়। টানা পাঁচ দিন খেলতে গেলে আপনাকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হতে হবে। আপনি যদি মানসিকভাবে ডাউন থাকেন, শরীর সমর্থন না দেয়…এসব অনেক বিষয় একটা টেস্ট ম্যাচে জড়িত। আমরা উন্নতি করছি, এখন বুঝতে পারি কীভাবে টেস্ট জিততে হয়, কীভাবে খেলতে হয়। এখানে দিনে দিন আমরা উন্নতি করছি। হয়তো যতটা দ্রুত হওয়া দরকার তার চেয়ে একটু ধীরে হচ্ছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে এটা আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।
আরেকটা জিনিস দেখুন, আগে আমাদের প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে অনেক সময় লাগত। দেড় দিন, দুই দিন খেলে হয়তো অলআউট করতে পারতাম। এখন হয়তো আমরা প্রথম ইনিংসে এক দিনের ভেতর কিংবা দেড় দিনে অলআউট করতে পারছি।অলআউট করতে না পারলে রান আটকে রাখছি। এসব উন্নতির ছাপ। নিউজিল্যান্ডে আমাদের ব্যাটাররা প্রায় পৌনে ২০০ ওভার ব্যাটিং করেছে। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় এটা সহজ না। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে প্রায় জিততে জিততে হেরে গেছি। আগে তো এ রকম হয়নি। দেখা যেত, বেশির ভাগ ফলোঅন বা ইনিংস ব্যবধানে হেরে যেতাম। টেস্ট জেতা আসলেই সহজ না। ওয়ানডে আপনি একদিন হুট করে ভালো খেললে জিতে গেলেন, টেস্টে এটা সম্ভব না। উন্নতির ছাপগুলো অব্যাহত থাকলে সামনে আমরা আরও ভালো করব। আমাদের ক্রিকেটারদের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন এসেছে এসব কারণে।
প্রশ্ন: এই ভারত সিরিজে নিজেকে কি একজন ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য ছিল?
মিরাজ: ম্যাচে অবদান রাখা আর ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেওয়া, দুটো দুই রকম ব্যাপার। আমাদের এখনকার দলে শুধু আমি নই; এখন প্রায় সবারই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা আছে। ১১ জনের সবাই ম্যাচজয়ী। শুধু ১১ জন নয়, বলব, ১৫ জনের যে স্কোয়াড থাকে সবার এখন এই সামর্থ্য আছে, যে কেউ যেকোনো দিন ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাসটা আমাদের ভেতর এখন বেড়েছে। আগে হয়তো এটা কম ছিল। আপনার বিশ্বাসের পরিমাণ যত বেশি থাকবে, তত পারফর্ম ও ম্যাচ জেতার পরিমাণ বাড়বে। সবাই এখন এই বিশ্বাস করে যে মিরাজ কিংবা লিটন কিংবা মোস্তাফিজ যেকোনো সময় ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। এটা সম্পূর্ণ একজন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে। আমি এভাবে নিজেকে বোঝাই, নিজেকে নিয়ে কাজ করি।
প্রশ্ন: বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি জানতে চাই, টেস্ট ক্রিকেটে বছরটা বাংলাদেশের কেমন কাটল?
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের উন্নতটা ভালো হচ্ছে। বলব না, আমরা মাঠে নামলেই জিতে যাব। যদি দেখেন, নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয়টায় আমরা বাজেভাবে হেরেছি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা লড়াই করতে পারিনি। কিন্তু যদি আমরা ১০টা টেস্ট খেলি তাহলে আমাদের উন্নতির ধারাটা ঠিক থাকবে। হয়তো এক-দুইটা ম্যাচ জিতব। কিছু ম্যাচে উন্নতির ধারা থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের এ বছর প্রাপ্তি হলো, আমাদের কিছু তরুণেরা ভালো করছে। টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের সঙ্গে পাঁচ দিন টিকে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ দিনের ভেতর চার দিন লড়াই করে যাওয়া, জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা—এগুলো আমি মনে করি জেতার অংশই।
প্রশ্ন: সাদা বলের ক্রিকেটে দলের পারফরম্যান্স নিয়েও যদি বলতেন।
মিরাজ: দল হিসেবে ওয়ানডেতে আমরা বরাবরই ভালো। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতেছি, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এ বছর জিম্বাবুয়েতে একটা সিরিজ হেরেছি। টেস্টেও আমাদের ছোট ছোট প্রাপ্তি আছে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয় অনেক বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপে আগে কখনো সুপার টুয়েলভে ম্যাচ জিততে পারিনি। এবার আমরা সেটা পেরেছি। এই যে শুরু হলো। সবকিছুর শুরু করাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনার যদি শুরুই না হয়, বড় কিছু অর্জন করতে পারবেন না। এবার আমরা একটুর জন্য সেমিফাইনাল খেলতে পারিনি। সামনে হয়তো সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলব।
প্রশ্ন: এ বছর আপনার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে যদি জানতে চাই?
মিরাজ: নিজের কথা বললে, টিম ম্যানেজমেন্ট এ বছর আমার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা করছে, এটা আমার খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে আমাকে ওপেনিংয়ে সুযোগ দিয়েছে। কতটা খেলতে পারছি, তার চেয়েও যেটা বড় ব্যাপার দুবাই ও নিউজিল্যান্ডে নেটে আমি ব্যাটিংয়ের যে সুযোগ পেয়েছি ওটাই আমাকে অনেক কাজে দিয়েছে। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে এটা আমাকে অনেক সহায়তা করছে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনাকে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে খেলানো নিয়ে আলোচনা হয় যথেষ্ট। আপনি যে পজিশনে নিয়মিত খেলেন না, সেখানে নিজেকে সঁপে দিয়ে ক্যারিয়ারও ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়ে যায়!
মিরাজ: জানতাম, টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে আমাকে টানা খেলানো হবে না, যতই ভালো করি। তবু আমি দলের স্বার্থে মেনে নিয়েছিলাম। আমি কখনোই কোনো কিছুতে না করিনি। এশিয়া কাপে (২০১৮) আমাকে এক দিন আগে জানানো হয়েছিল ফাইনালে ওপেন করতে হবে। আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। এখানে হয়তো ক্যারিয়ারের ঝুঁকি থাকে কিন্তু আমি এসব নিয়ে চিন্তা করিনি। আমার কাছে সব সময়ই দল আগে।
প্রশ্ন: ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। এই বিশ্বকাপ আবার অনেকটা পরিচিত কন্ডিশনে। নতুন বছরে তাহলে কী স্বপ্ন দেখছেন?
মিরাজ: অবশ্যই স্বপ্ন দেখছি বিশ্বকাপে আমরা ভালো করব। শুরুতে আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেরা চারে যেন খেলতে পারি। ৫-৭ বছর ওয়ানডেতে আমরা যেমন খেলছি এটা আমরা আশা করতেই পারি। এটার জন্য আমাদের সবাইকে পারফর্ম করতে হবে। একজনের ওপর নির্ভর করে আমরা সেরা চারে খেলতে পারব না। সবাইকে অবদান রাখতে হবে। আমাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে নেই, সবার অবদান রাখাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: মিরপুর টেস্টের পর বিরাট কোহলি জার্সি উপহার দিল আপনাকে। এই উপহারের গল্পটা শুনতে চাই।
মেহেদী হাসান মিরাজ: ওর কাছে ওয়ানডে সিরিজের সময় আমি একটা জার্সি চেয়েছিলাম, স্বাক্ষরসহ। সিরিজ শেষ হওয়ার পর সেটা ডেকে দিয়েছে।
প্রশ্ন: এই সিরিজে ভারত আপনাকে একটু আলাদাভাবে দেখল কি না।
মিরাজ: ওরা আমাকে আলাদাভাবে দেখেছে। এই জিনিসটা আমারও বেশ ভালো লেগেছে। ওয়ানডে সিরিজ জিতলাম, মিরপুর টেস্টটাও প্রায় জিতে গিয়েছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত হয়নি।
প্রশ্ন: মিরপুর টেস্টের কোন পর্যায়ে মনে হয়েছে আর জেতা হচ্ছে না?
মিরাজ: সব সময় জয়ের বিশ্বাসটা ছিল। এই উইকেটে এমন একটা ব্যাপার ছিল, যেকোনো সময় ওদের উইকেট পড়ে যেতে পারে। আর একটা উইকেট পড়ে গেলেই ১০ রান করাও কঠিন ছিল। শেষের দুজন টেলেন্ডার ব্যাটার। যেকোনো সময় ভালো দুটো বলে আউট হয়ে যেতে পারত। আমাদের সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। এসব খেলায় সুযোগগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফিফটি-ফিফটি সুযোগকে শতভাগে পরিণত করতে হয়। শেষের দিকে ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। সুযোগগুলো মিস না হলে জিততে পারতাম। তবু ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা লড়াই করছি। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকেও আমরা ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: ভারতকে টেস্টেও হারানোর বড় সুযোগ হাত ছাড়া হলো?
মিরাজ: এর আগে আমরা অনেকভাবে হেরেছি। এবার একটা সুযোগ ছিল, হয়নি। কিন্তু এবার আমরা এতটা কাছে গেছি, আমার বিশ্বাস সামনে আমরা জিতব।
প্রশ্ন: এটাই এই সিরিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি?
মিরাজ: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। প্রাপ্তির জায়গা থেকে দেখলে আরও অনেক কিছু আছে। অভিষেকেই জাকির যেমন সেঞ্চুরি করেছে, সৌরভ ভাই (মুমিনুল হক) রানে ফিরেছে। বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। তাইজুল ভাই অসাধারণ করছে, আমিও সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট পাইছি, টেস্টে ১১টা। বোলাররাও এই সিরিজে রান করেছে। এই ছোট ছোট অবদানগুলো অবশ্যই টেস্ট সিরিজের প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: ৫০ ওভারের ক্রিকেটে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি নিজেদের করে নিতে পারে বাংলাদেশ, টেস্টে সেখানেই ঘাটতি। এটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মিরাজ: দেখুন, ওয়ানডেতে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো। এই ফরম্যাটকে আমরা এত সুন্দরভাবে মাথার ভেতর নিয়ে ফেলেছি এবং গুছিয়ে ফেলেছি, জানি যে এটা কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, কীভাবে খেলতে হয়। আর টেস্ট ক্রিকেট কিন্তু দেখা যায় পাঁচ দিন ধরে খেলতে হয়। ভালো খেলাটা পাঁচ দিন টেনে নিতে হয়। পাঁচ দিন সব সময় একই রকম যায় না। ভালো-খারাপ মিলিয়ে যায়। পাঁচ দিনই কোনো না কোনো কিছু ঘটে। ওই পাঁচ দিন শারীরিক, মানসিক, ফিটনেস, স্কিল—সবকিছুর ধারাবাহিকতা প্রয়োজন হয়। টানা পাঁচ দিন খেলতে গেলে আপনাকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হতে হবে। আপনি যদি মানসিকভাবে ডাউন থাকেন, শরীর সমর্থন না দেয়…এসব অনেক বিষয় একটা টেস্ট ম্যাচে জড়িত। আমরা উন্নতি করছি, এখন বুঝতে পারি কীভাবে টেস্ট জিততে হয়, কীভাবে খেলতে হয়। এখানে দিনে দিন আমরা উন্নতি করছি। হয়তো যতটা দ্রুত হওয়া দরকার তার চেয়ে একটু ধীরে হচ্ছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে এটা আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।
আরেকটা জিনিস দেখুন, আগে আমাদের প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে অনেক সময় লাগত। দেড় দিন, দুই দিন খেলে হয়তো অলআউট করতে পারতাম। এখন হয়তো আমরা প্রথম ইনিংসে এক দিনের ভেতর কিংবা দেড় দিনে অলআউট করতে পারছি।অলআউট করতে না পারলে রান আটকে রাখছি। এসব উন্নতির ছাপ। নিউজিল্যান্ডে আমাদের ব্যাটাররা প্রায় পৌনে ২০০ ওভার ব্যাটিং করেছে। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় এটা সহজ না। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে প্রায় জিততে জিততে হেরে গেছি। আগে তো এ রকম হয়নি। দেখা যেত, বেশির ভাগ ফলোঅন বা ইনিংস ব্যবধানে হেরে যেতাম। টেস্ট জেতা আসলেই সহজ না। ওয়ানডে আপনি একদিন হুট করে ভালো খেললে জিতে গেলেন, টেস্টে এটা সম্ভব না। উন্নতির ছাপগুলো অব্যাহত থাকলে সামনে আমরা আরও ভালো করব। আমাদের ক্রিকেটারদের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন এসেছে এসব কারণে।
প্রশ্ন: এই ভারত সিরিজে নিজেকে কি একজন ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য ছিল?
মিরাজ: ম্যাচে অবদান রাখা আর ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেওয়া, দুটো দুই রকম ব্যাপার। আমাদের এখনকার দলে শুধু আমি নই; এখন প্রায় সবারই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা আছে। ১১ জনের সবাই ম্যাচজয়ী। শুধু ১১ জন নয়, বলব, ১৫ জনের যে স্কোয়াড থাকে সবার এখন এই সামর্থ্য আছে, যে কেউ যেকোনো দিন ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাসটা আমাদের ভেতর এখন বেড়েছে। আগে হয়তো এটা কম ছিল। আপনার বিশ্বাসের পরিমাণ যত বেশি থাকবে, তত পারফর্ম ও ম্যাচ জেতার পরিমাণ বাড়বে। সবাই এখন এই বিশ্বাস করে যে মিরাজ কিংবা লিটন কিংবা মোস্তাফিজ যেকোনো সময় ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। এটা সম্পূর্ণ একজন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে। আমি এভাবে নিজেকে বোঝাই, নিজেকে নিয়ে কাজ করি।
প্রশ্ন: বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি জানতে চাই, টেস্ট ক্রিকেটে বছরটা বাংলাদেশের কেমন কাটল?
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের উন্নতটা ভালো হচ্ছে। বলব না, আমরা মাঠে নামলেই জিতে যাব। যদি দেখেন, নিউজিল্যান্ডে প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয়টায় আমরা বাজেভাবে হেরেছি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা লড়াই করতে পারিনি। কিন্তু যদি আমরা ১০টা টেস্ট খেলি তাহলে আমাদের উন্নতির ধারাটা ঠিক থাকবে। হয়তো এক-দুইটা ম্যাচ জিতব। কিছু ম্যাচে উন্নতির ধারা থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের এ বছর প্রাপ্তি হলো, আমাদের কিছু তরুণেরা ভালো করছে। টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের সঙ্গে পাঁচ দিন টিকে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ দিনের ভেতর চার দিন লড়াই করে যাওয়া, জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা—এগুলো আমি মনে করি জেতার অংশই।
প্রশ্ন: সাদা বলের ক্রিকেটে দলের পারফরম্যান্স নিয়েও যদি বলতেন।
মিরাজ: দল হিসেবে ওয়ানডেতে আমরা বরাবরই ভালো। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতেছি, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এ বছর জিম্বাবুয়েতে একটা সিরিজ হেরেছি। টেস্টেও আমাদের ছোট ছোট প্রাপ্তি আছে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয় অনেক বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপে আগে কখনো সুপার টুয়েলভে ম্যাচ জিততে পারিনি। এবার আমরা সেটা পেরেছি। এই যে শুরু হলো। সবকিছুর শুরু করাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনার যদি শুরুই না হয়, বড় কিছু অর্জন করতে পারবেন না। এবার আমরা একটুর জন্য সেমিফাইনাল খেলতে পারিনি। সামনে হয়তো সেমিফাইনাল, ফাইনাল খেলব।
প্রশ্ন: এ বছর আপনার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে যদি জানতে চাই?
মিরাজ: নিজের কথা বললে, টিম ম্যানেজমেন্ট এ বছর আমার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা করছে, এটা আমার খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে আমাকে ওপেনিংয়ে সুযোগ দিয়েছে। কতটা খেলতে পারছি, তার চেয়েও যেটা বড় ব্যাপার দুবাই ও নিউজিল্যান্ডে নেটে আমি ব্যাটিংয়ের যে সুযোগ পেয়েছি ওটাই আমাকে অনেক কাজে দিয়েছে। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে এটা আমাকে অনেক সহায়তা করছে।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনাকে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে খেলানো নিয়ে আলোচনা হয় যথেষ্ট। আপনি যে পজিশনে নিয়মিত খেলেন না, সেখানে নিজেকে সঁপে দিয়ে ক্যারিয়ারও ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়ে যায়!
মিরাজ: জানতাম, টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে আমাকে টানা খেলানো হবে না, যতই ভালো করি। তবু আমি দলের স্বার্থে মেনে নিয়েছিলাম। আমি কখনোই কোনো কিছুতে না করিনি। এশিয়া কাপে (২০১৮) আমাকে এক দিন আগে জানানো হয়েছিল ফাইনালে ওপেন করতে হবে। আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। এখানে হয়তো ক্যারিয়ারের ঝুঁকি থাকে কিন্তু আমি এসব নিয়ে চিন্তা করিনি। আমার কাছে সব সময়ই দল আগে।
প্রশ্ন: ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। এই বিশ্বকাপ আবার অনেকটা পরিচিত কন্ডিশনে। নতুন বছরে তাহলে কী স্বপ্ন দেখছেন?
মিরাজ: অবশ্যই স্বপ্ন দেখছি বিশ্বকাপে আমরা ভালো করব। শুরুতে আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেরা চারে যেন খেলতে পারি। ৫-৭ বছর ওয়ানডেতে আমরা যেমন খেলছি এটা আমরা আশা করতেই পারি। এটার জন্য আমাদের সবাইকে পারফর্ম করতে হবে। একজনের ওপর নির্ভর করে আমরা সেরা চারে খেলতে পারব না। সবাইকে অবদান রাখতে হবে। আমাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে নেই, সবার অবদান রাখাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে