সাবেক মেয়রের ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

ফরিদপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ২৩

বোয়ালমারীতে লাইসেন্স না থাকা এবং কাঠ পোড়ানোয় একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময় ভাটায় বানিয়ে রাখা কাঁচা ইটও বিনষ্ট করা হয়। জানা গেছে, ভাটাটি বোয়ালমারী পৌরসভার সাবেক মেয়র আ. শুকুর শেখের।

গত রোববার বিকেলে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামে রাজ ব্রিকসে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর এ অভিযান চালায়। তবে শুকুর শেখের ছেলে শাহিনুজ্জামানের দাবি, ভাটার লাইসেন্স আপডেট থাকার পরও কোনো অগ্রিম নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁদের ভাটার চিমনি, ক্লিম ও কাঁচা ইট বিনষ্ট করেছে। এতে তাঁদের প্রায় তিন থেকে চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলে ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় জ্বালানির সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে চলতি ভরা মৌসুমে এখনো অনেকেই উৎপাদনে যেতে পারেনি। কেউ ১৫ দিন বা এক সপ্তাহ আগে থেকে ভাটায় আগুন দিয়েছে। তবে যেসব ভাটা চালু হয়েছে সেগুলোয় জ্বালানি হিসেবে কয়লার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অন্যদিকে, উজাড় হচ্ছে বাগানের গাছপালা।

কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ইট তৈরি করে রাখা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির অভাবে চালু হওয়া সব কটি ভাটায় এখনো আগুন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো ভাটার সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লাকড়ি। আর শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইট তৈরি এবং রোদে শুকানোর কাজে। চালু থাকা ১৪টি ভাটার মধ্যে অন্তত ১১টি ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে। সব ভাটায় কাঠ-লাকড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।

একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, এ বছর জ্বালানির অভাব ও উচ্চমূল্যের কারণে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ ধীরে চলছে। গত বছর যেখানে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় এক টন কয়লা ক্রয় করা হতো বর্তমানে সেখানে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কয়লার টন কেনা লেগেছে। বাড়তি টাকা দিয়েও এ মুহূর্তে কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও ডলার সংকটের কারণে এলসি করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আবার শ্রমিকদের প্রতিদিন মজুরি এখন ৭০০-৮০০ টাকার বেশি দেওয়া লাগে। বিভিন্ন কারণে ইতিমধ্যে এ উপজেলায় দুটি ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

ফরিদপুর জজকোর্টের আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘কোনো কোনো ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার এবং তিন ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ কেটেও ব্যবহার করার বিষয়টি জানতে পেরেছি, যা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এদিকে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সদর দপ্তরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে ফরিদপুর সদর, মধুখালী, বোয়ালমারী ও ভাঙ্গা উপজেলায় ইতিমধ্যেই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। সোমবার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় রাজ ব্রিকসে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত