গুদামে তেল, বাজারে সংকট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১৫: ১৮
Thumbnail image

পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় পৃথক অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুত করা ১ লাখ ৩২ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পৃথক অভিযানে এসব তেল জব্দ করা হয়। গত বুধবার বিকেল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এসব অভিযান চালানো হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

পাবনায় গোয়েন্দা পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পৃথক অভিযানে ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুত করা ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ লিটার ভোজ্যতেলের সন্ধান মিলেছে। এ সময় তেল মজুতের দায়ে পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়।

পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মিলনস্থল কাশিনাথপুর বাজারে কিছু ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে মজুত করে বলে খবর পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে এমন কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। অভিযানে ব্যবসায়ী সুনীল সাহা ওরফে ব্যাংক সুনীল ও লক্ষ্মণ সাহার গোডাউনে ৪৫ হাজার ২০০ লিটার এবং মীর স্টোরের মালিক আবুল খায়েরের গোডাউন থেকে ৩২ হাজার ৮০০ লিটার সয়াবিন, পাম অয়েল ও সুপার অয়েল উদ্ধার করা হয়।

অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ব্যবসায়ীদের মোট ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী ও সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরুজ্জামান। এ সময় স্থানীয় থানা-পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী বলেন, কাশিনাথপুর বাজারের বেড়া উপজেলা অংশে ব্যবসায়ী সুনীল সাহা ও লক্ষ্মণ সাহার গোডাউন থেকে মোট ২২৬ ড্রাম তেল উদ্ধার করা হয়। এক ড্রামে আনুমানিক ২০০ লিটার তেল থাকে। সে হিসেবে এই দুজনের গোডাউন থেকে উদ্ধার করা মোট তেলের পরিমাণ ৪৫ হাজার ২০০ লিটার। পরে তাঁদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরুজ্জামান বলেন, কাশিনাথপুর বাজারের সাঁথিয়া উপজেলা অংশে ব্যবসায়ী মীর স্টোরের মালিক মীর আবুল খায়েরের গোডাউন থেকে ১৬৪ ড্রাম তেল উদ্ধার করা হয়। সে হিসেবে উদ্ধার করা তেলের পরিমাণ ৩২ হাজার ৮০০ লিটার। পরে তাঁর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পরে উদ্ধার করা ৭৮ হাজার লিটার তেল ওই তিন ব্যবসায়ীকে তিন দিনের মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা-পুলিশের তত্ত্বাবধানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া একই দিন রাত নয়টার দিকে পাবনা শহরের দিলালপুর এলাকায় ব্যবসায়ী উত্তম কুমার কণ্ডুর গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৪৬ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্যতেলের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ব্যবসায়ী উত্তমকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসনাত।

এর আগে গত বুধবার দুপুরে সুজানগর পৌর সদরে ঘোষ স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী দুলাল ঘোষের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ১৩৭ লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম।

সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘোষ স্টোরের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ব্যবসায়ী দুলাল অন্য এক ব্যক্তির বাড়ি গোডাউন হিসেবে নিয়ে সেখানে তেল মজুত করেছিলেন। এসব তেল ঈদুল ফিতরের আগে কিনে তিনি অধিক মুনাফার লোভে অবৈধভাবে মজুত করে রেখে স্থানীয় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করছিলেন।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলা থেকে মেসার্স কাজল স্টোর নামের একটি দোকানের গুদামে সাড়ে ৪ হাজার লিটার সয়াবিন জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বটতলা হাট এলাকার একটি বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তেলগুলো উদ্ধার করেন ভোক্তার সহকারী পরিচালক উসমান গণি।

অপরদিকে নওগাঁয় শহরের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তিনটি পৃথক প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে মজুত করা ৭৫৩ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে নির্ধারিত মূল্যে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শামীম হোসেনের নেতৃত্বে শহরের গোস্তহাটি ও আটাপট্টিতে অভিযান চালিয়ে এসব ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়।

সহকারী পরিচালক মো. শামীম হোসেন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় আটাপট্টি এলাকায় কিরণ ট্রেডার্স ও রঞ্জিত পাল এবং গোস্তহাটির মোড় এলাকায় আজাদ স্টোর থেকে কারণ ছাড়া মজুত করে রাখা মোট ৭৫৩ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে বাইরে বের করা হয়। পরে দোকানের কর্মচারীদের দিয়ে প্রকাশ্যে নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত