‘বারবার ধর্ষণে অতিষ্ঠ হয়ে দোকানিকে হত্যা’

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১২: ৩১
Thumbnail image

টাকা চুরির অভিযোগ এনে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দোকানি প্রায় সময় রাতে ধর্ষণ করতেন জিসানকে (২০)। এসব সহ্য হতো না তাঁর। একদিন দোকানিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। বাজার থেকে কেনা ছুরি দিয়ে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু একদিন ধর্ষণের সময় ওই দোকানিকে উপর্যুপরি ছুরি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

গত ১ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার দাইয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ শাহাদাত হোসেন (৩২) নামের ওই মুদি দোকানির লাশ উদ্ধার করে। নিহতের দোকানের পেছনেই একটি টয়লেটে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। সূত্রবিহীন ওই হত্যাকাণ্ডে পাঁচ দিন পর গোয়েন্দা পুলিশ মো. আদনান ওরফে জিসানকে তাঁর দুলাভাইয়ের বাসা আনোয়ারা থেকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত যুবক চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার বৈলতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা। আর নিহত দোকানি শাহাদাত নোয়াখালীর সুবর্ণচর থানার দক্ষিণ চর মুজিব গ্রামের বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ধর্ষণে অতিষ্ঠ হওয়ার পর জিসান এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। যেভাবে ছুরি মারা হয়েছে তাতে দোকানি শাহাদাতের ওপর প্রচণ্ড আক্রোশ থাকার বিষয়টি ধরা পড়েছে।

মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, দোকানে কেনাকাটার সূত্র ধরে ৪-৫ মাস আগে শাহাদাতের সঙ্গে জিসানের পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই মাস আগে আসামি জিসান রাতে বাসায় ঢুকতে না পেরে শাহাদাতের বাসায় আশ্রয় নেন। ওই সময় জিসানকে দোকানে টাকা চুরির অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখিয়ে শাহাদাত তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে শাহাদাত প্রায়ই রাতে জিসানকে নিজ বাসায় ডেকে এনে দোকানের পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করতেন। পুলিশের ভয়ে এগুলো তাঁকে সহ্য করতে হতো।

গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান বলেন, অতিষ্ঠ হয়ে একদিন দোকানিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিসান। এ জন্য নিউমার্কেট থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন। এত দিন শাহাদাত ফোন করে জিসানকে ডেকে নিতেন। কিন্তু গত ৩১ জুলাই রাতে জিসান নিজেই ফোন করে শাহাদাতের দোকানে আসার কথা বলেন। পরে জিসান দোকানে পৌঁছালে রাত ১টা ২০ মিনিটে শাহাদাত দোকান বন্ধ করে পেছনে থাকা একটি টয়লেটের ভেতর নিয়ে যান। সেখানে ধর্ষণের সময় জিসান ছুরি বের করে শাহাদাতের পেটে সজোরে ঢুকিয়ে দেন। পরে দোকানির গলা চেপে ধরে পেট, বুকে একাধিকবার ছুরি মারেন। শাহাদাতের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জিসান সেখানে ৭-৮ মিনিট অবস্থান করেন। পরে ছুরি পাশের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে শাহাদাতের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যান জিসান। একদিন পর শাহাদাতের লাশ পাওয়া যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সামীম কবির বলেন, জিসান ভিকটিমকে আগেও একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। ক্রাইম পেট্রলসহ বিভিন্ন ক্রাইম সিরিয়াল দেখে তিনি হত্যার প্রস্তুতি নেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মামলাটি ক্লু-লেস ছিল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ভিকটিমের মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে জিসানের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। নিহত শাহাদাতের বাড়ি নোয়াখালী হলেও হালিশহর গুলবাগ আবাসিক এলাকায় বাবার সঙ্গে থাকতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত