Ajker Patrika

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা

সম্পাদকীয়
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ-সংক্রান্ত তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল। তার একটি ছিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে। ম্যাথিউ মিলার এই প্রশ্নের একটি সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেও জবাবটি তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের পাঁচ সাংবাদিকের নাম করে এবং আরও কয়েকজনের কথা উল্লেখ করে ম্যাথিউ মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘তাঁদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই অবস্থা নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো উদ্বেগ আছে কি না।’

জবাবে ম্যাথিউ মিলার যা বলেছেন, তা মোটা দাগে এ রকম: ‘বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে ও প্রচার করে।’ তবে সূক্ষ্মভাবে দেখলে তাঁর বলা বাক্যটি ছিল, ‘উই ওয়ান্ট টু সি প্রেস ফ্রিডম ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অফকোর্স অ্যাক্রোস দ্য ওয়ার্ল্ড।’ অর্থাৎ ‘আমরা বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত দেখতে চাই এবং অবশ্যই সারা বিশ্বেই তা দেখতে চাই।’

কূটনৈতিক ভাষার সহজ অনুবাদে বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন মানবাধিকার কিংবা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে, তখন তাদের বারোয়ারি বলার ধরনটা হলো, ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এই সংকট আছে’। কিন্তু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি আলাদাভাবে প্রথম বাক্যটি বলেছেন। এরপর যোগ করেছেন সারা বিশ্বের কথা। এ কারণেই এই একটি বাক্য তাৎপর্যময়।

ইউনূস সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের ছবি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতার প্রকাশ দেখেছে মানুষ। পৃথিবীব্যাপী পরিচিতি আছে ড. ইউনূসের। সুতরাং তাঁর সরকারের ব্যাপারে কথা বলার সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে হিসাব করেই কথা বলবে, সেটা নতুন করে বলার কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নামটি আলাদা উচ্চারণ করে ম্যাথিউ মিলার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্য কতখানি, তা কি বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেন?

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরির কথা কে না জানে? কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সেখানে সমুন্নত রয়েছে, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো সাংবাদিককে যেসব অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা হাস্যকর। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে এইসব গ্রেপ্তার নাটক যায় না। একসময় এই নাটক নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠবে। সাংবাদিকতার বাইরে তাঁরা কোনো অপরাধ করে থাকলে তা নিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়, কিন্তু সাংবাদিকতার কারণে গ্রেপ্তার করা যায় না। আমাদের দেশে তোষামোদি সাংবাদিকতা সব সময়ই ছিল, বিগত সরকারের আমলে তা আরও অনেক দূর এগিয়েছে। সেটা রুচির বিকৃতি, ফৌজদারি অপরাধ নয়। তাই হত্যা মামলায় যেনতেনভাবে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হলে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব বলেই পরিগণিত হবে।

সাংবাদিকেরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু যে আইনে চলছে এই গ্রেপ্তার নাটক, সেটাও কি আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত