কিং এডওয়ার্ড ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ১০
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৩১

ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ষষ্ঠ কিং এডওয়ার্ড ভবনটি। প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো ভবনটি ১৪ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও সেখানে আতঙ্ক নিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন বানানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কিং এডওয়ার্ড ভবন ভেঙে সেখানে ১৬ তলা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে খসড়া ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। একটি ১৬ তলা ভবন, দুটি বেসমেন্ট ও একটি সেমি বেসমেন্ট তৈরি করতে ২৯১ কোটি ৪৬ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রাক্কলনটি প্রশাসনিক অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের জন্য পাঠানো হয়েছে। অর্থের ছাড় ও ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেলেই ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কিং এডওয়ার্ড ভবনটি ভেঙে সেখানে ১৬ তলা ভবন করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেলেই তা সম্ভব হবে।
হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্মরত একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী জানান, কিং এডওয়ার্ড ভবনে দায়িত্ব পড়লে সবাই আতঙ্কে থাকেন। প্রায়ই দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। পাশের নিউম্যান ভবনটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ভবনটির নিচতলায় একটি বেসরকারি ব্যাংক, অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি, চর্ম ও যৌন বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক, হেপাটোলজি বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া ভবনের দোতলা এবং তৃতীয় তলায় রয়েছে আবাসিক।

জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ জুন কিং এডওয়ার্ড ভবনের লিফটে বিদ্যুতায়িত হয়ে একজন আউটসোর্সিং কর্মচারী মারা যান। ওই ঘটনায় সে বছরের ৬ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) হাসপাতাল পরিদর্শন ও বৈঠক করেন। বৈঠকে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ভবনটি মেরামত করা হলেও দুই-তিন বছরের বেশি সময় ব্যবহার করা যাবে না।

এর আগে ২০০৩ সালে ভবনের দোতলার পলেস্তারা ধসে হৃদ্‌রোগ বিভাগের এক চিকিৎসক আহত হয়েছিলেন। তখন গণপূর্ত অধিদপ্তর ভবনটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে কয়েক বছরের মাথায় ভবনটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। পরে আবার তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রত্নসম্পদ ও সংরক্ষণ) আমিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের কিং এডওয়ার্ড ও নিউম্যান ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তির তালিকায় নেই।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিচালককে দেওয়া এক চিঠিতে অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী উল্লেখ করেন, কিং এডওয়ার্ড ভবনটি প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো। এর ছাদ দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেয়ালের অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। ভবনটি সাধারণ মেরামত করে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। ভূমিকম্পজনিত যেকোনো সময়ে ধসে পড়তে পারে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অবিলম্বে খালি করা এবং সেটি ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে গণপূর্ত অধিদপ্তর কোনো দায় নেবে না।

জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতাল ১৮৫৮ সালে চালু হয়। কিং এডওয়ার্ড ভবন ছাড়াও এখানে আছে শত বছরের বেশি পুরোনো নিউম্যান ভবন, হেয়ার ওয়ার্ড, প্রেমচাঁদ ওয়ার্ড, রায়বাহাদুর রেবতী মোহন লেবার ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত