ক্রেতা কিনছেন দ্বিগুণ দামে

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, ১২: ০৫
Thumbnail image

গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদের দেখা না মিললেও কয়েক দিন ধরে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে বাড়ছে ডাবের চাহিদা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডাবের চাহিদা মেটাতে ট্রাক ভরে সরবরাহ করছেন ঝালকাঠির ডাব ব্যবসায়ীরা। তাপমাত্রা বাড়তেই আকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে ডাবের দাম বেড়েছে। কিন্তু গাছমালিক থেকে ক্রেতার হাতে যেতেই ডাবের দাম হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বেশি, কিন্তু জোগান কম। তা ছাড়া পরিবহন খরচসহ অন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়তি।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে নারকেলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৯৫ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ৩০০ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২২০ হেক্টর, কাঠালিয়া উপজেলায় ২৬২ হেক্টর। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে।

তবে গরম পড়তে না পড়তেই ডাবের চাহিদা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বাগান ঘুরে ডাব কিনছেন। কিন্তু গাছমালিক থেকে ক্রেতার হাতে যেতেই ডাবের দাম হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ।

খুচরা ক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ডাবের আকার অনুযায়ী ৩০-৩৫ টাকা দরে কিনছি। গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম হিসাব করে ৪৫ টাকা করে পাইকারি ক্রেতার কাছে বিক্রি করি। পাইকারেরা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।’

পাইকারি ক্রেতা সাইদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৪৫ টাকায় কিনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মোকামে পৌঁছে দিতে হয়। পরিবহন খরচের সঙ্গে রয়েছে চাঁদা। এতে প্রতিটি ডাবে ৫০ টাকারও বেশি খরচ পড়ে। খুচরা বিক্রেতারা ৫৫ টাকা করে কিনে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রয় করেন।’

তবে চাষিদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ঘুরে ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে দাম যাচ্ছে বেড়ে। এতে প্রকৃত চাষি যেমন ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, তেমনি ভোক্তারাও ঠকে যাচ্ছেন।

ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড়ে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছিলেন আনোয়ার মিয়া। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ডাব বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘মাঝারি আকারের ডাবের দাম একটু বেড়েছে। অন্য সময় যে ডাব ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়, বর্তমানে তা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটু বড় আকারের ডাবের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা।’

ডাবের দাম বেড়েছে কেন জানতে চাইলে আনোয়ার মিয়া জানান, গরমে ডাবের চাহিদা বেশি। চালান আগের মতো নাই। পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিটি ডাব (ছোট-বড় মিলিয়ে) ৪৫ টাকা দরে কিনতে হয়। আকার অনুযায়ী দাম কমবেশিতে বিক্রি করতে হয়।

এদিকে গরমে উপকারিতার কথা জানিয়ে ডাবের পানি পানের বিষয়ে সর্তকতামূলক পরামর্শ দিয়েছেন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমাম হোসেন জুয়েল। তিনি বলেন, ‘ডাবের পানিতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম হার্টের রোগীর জন্য ভালো। তবে শরীরে যদি পটাশিয়াম বেশি থাকে, তাহলে ডাবের পানি পান করা উচিত না। এ ছাড়া যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও ডাবের পানি পান করা উচিত না।’

ডাবের পানির অন্য পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, গরমের জন্য অনেকের ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা হতে পারে। ডাবের পানি শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করে। ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফ্লোরাইডসহ নানা খনিজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ডাবের পানি তা পূরণ করতে পারে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সাজেদা বেগম বলেন, ‘ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ডাবের পানি খুব কার্যকর পানীয়। একটি ডাবের পানিতে চারটি কলার সমান পটাশিয়াম রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা। ফলে শরীরকে সতেজ করে এবং শক্তি দেয়। উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাবের পানিতে, যা হাড়কে করে মজবুত। সেই সঙ্গে ত্বক, চুল, নখ ও দাঁতের পুষ্টি জোগায় ডাবের পানি।’

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল বলেন, ‘জেলায় ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে নারকেলের বাগান রয়েছে। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে, যা ঝালকাঠির জনগণের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত