ড. আর এম দেবনাথ
ডাকাতি, একদম দিনদুপুরে ডাকাতি। এক-দুই টাকা নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা। হিসাবে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। ১ বিলিয়ন মানে শতকোটি টাকা। তার অর্থ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ১ ডলার আবার প্রায় ১২০ টাকা। তাহলে মোট কত টাকার ডাকাতি হয়? পাঠক, এবার হিসাব করতে পারেন ঠিক কত টাকার ডাকাতি। ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেকের বেশি টাকা। চলতি বছরে আমাদের এডিপির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এবার ভাবুন, কত বড় ডাকাতি!
কোত্থেকে এই ডাকাতি হলো? বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে? না, ওখান থেকে নয়। তাহলে কি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে? না, তা-ও নয়। ডাকাতিটি হয়েছে আমাদের রপ্তানি খাতে। অত্যন্ত মূল্যবান, এই মুহূর্তে আরও বেশি মূল্যবান, ডলার আয়ে; অর্থাৎ রপ্তানি আয়ে। কীভাবে তা সম্ভব হলো? সম্ভব হলো ‘তথ্য জালিয়াতির’ কারণে। ‘তথ্য জালিয়াতি’ না অন্য কিছু, তা একমাত্র সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। আপাতত ধরে নিচ্ছি ‘তথ্য জালিয়াতি’।
এটাই দৃশ্যত মনে হচ্ছে গত ৪ জুলাইয়ের একটি পত্রিকার এক প্রতিবেদন পাঠ করে। প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের হিসাব সংশোধন, নতুন হিসাবে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, বিওপির অনেক হিসাবনিকাশ পাল্টে গেছে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চুপচাপ।’ অনেক বড় শিরোনাম! শিরোনাম পাঠ করেই বোঝা যায় ঘটনাটি, ‘ডাকাতি’টি কত বড়। এ নিয়ে এখন হচ্ছে চর্চা, আলোচনা, সমালোচনা। তাহলে কোথায় কী হচ্ছে? সরকারি সব তথ্য-পরিসংখ্যানেরই কি এই অবস্থা? তাহলে তো সর্বনাশ! সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে।
একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘রপ্তানির তথ্যে যদি এই গড়বড় হয়ে থাকে, তাহলে জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণ বাড়বে, কমবে মাথাপিছু আয়। রপ্তানির তুলনায় আমদানির হিসাবে পরিবর্তন না হওয়ায় বাণিজ্যঘাটতিও বাড়বে। কমে আসবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বাজেটের সব প্রাক্কলনও পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
বোঝাই যায়, রপ্তানি আয়ের অঙ্কে পরিবর্তন বা হ্রাস হলে সরকারি অনেক তথ্য সংশোধন করতে হবে। উন্নয়নের চিত্র যাবে বদলে। কত বড় ‘তথ্য জালিয়াতি’ যে এত বড় পরিবর্তন ঘটবে? খবরের কাগজে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানির পরিমাণ বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে এক কথা, বিপরীতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমাদের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে ইপিবি বলছে, এই সময়ে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তার মানে ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের হেরফের।
বিশাল পার্থক্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন পার্থক্য যে সরকারি দলের ‘বিরোধীদলীয় কণ্ঠ’ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পর্যন্ত ‘খেপে লাল’। তিনি বলেছেন, ‘এটা ছোটখাটো কোনো ভুল না। সংখ্যাও অনেক বড়। কোনো আমলা কাউকে খুশি করার জন্য এমনটা করেছে কি না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বিশাল আমলাতন্ত্রের বিরাট দপ্তরগুলো যথাযথ কাজের উপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্ন উঠবে।’
সম্ভবত মান্নান সাহেব এখন কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এহেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং সাবেক আমলার মুখ থেকে এ কথা বলা হলে সমালোচকদের আর বলার কিছু থাকে না। করার থাকে শুধু আফসোস। আর প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কোথায় কী হচ্ছে, ঘটছে? সরকার কী চায় আর মাথাভারী প্রশাসন, আমলাতন্ত্র কী চায়? এত বেতন-ভাতা দিয়ে পোষা আমলাতন্ত্র আসলে কী চায়? তবে কি কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই ঘটানো হচ্ছে?
অঘটনের উদাহরণ অনেক। তথ্য জালিয়াতির উদাহরণ অনেক। আমার মনে আছে, একবার খাদ্যমন্ত্রী এবং তৎকালীন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে প্রকাশ্য সভায় বাহাস হয়েছিল। বাহাসটি ছিল উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়ে। আমাদের খাদ্য চাহিদা, চাল চাহিদার একটা হিসাব আছে। লোকসংখ্যার তথ্যও আছে। সঙ্গে আছে চাল উৎপাদনের তথ্য। চাল আমদানির তথ্যও আছে। একজন মন্ত্রী বললেন, হিসাবে আমাদের চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। না, তা নেই। হয় চাহিদার তথ্যে গন্ডগোল, নয়তো উৎপাদনের তথ্যে গন্ডগোল। এই বাহাসের কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। চালও আমাদের আমদানি করতে হয়, প্রচুর পরিমাণ গমও আমদানি করতে হয়। একমাত্র ‘ওপরওয়ালা’ ছাড়া আর কেউ আসল কথা জানে না।
আসা যাক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের (ডলার) হিসাবায়নে। আমাদের আমলা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় প্রায় প্রতিদিন ডলার রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করত। দেখা যাচ্ছিল শনৈঃ শনৈঃ বাড়ছিল আমাদের রিজার্ভ। একসময় গিয়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর যায় কোথায়? সরকারের পোষ্য ব্যবসায়ীরা বলতে শুরু করলেন, এত ডলার দিয়ে আমরা কী করব? বেশি ডলার হাতে থাকা মানেই অদক্ষতা, ক্ষতি! অতএব তাঁদের ডলারে ঋণ দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিতে তা দিল। এই ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর দক্ষতার নামে চাকরির মেয়াদ বাড়াচ্ছিলেন। অবশেষে আবার ধরা খেয়ে গেলাম আইএমএফের কাছে। তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমাদের হিসাবায়ন পদ্ধতি ভুল, আন্তর্জাতিক রীতিনীতিবিরুদ্ধ। ব্যস, এক ধাক্কায় রিজার্ভের পরিমাণ নেমে গেল মারাত্মকভাবে। বর্তমানে এ নিয়ে চলছে সংকট।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এখন সবার—মধ্যবিত্ত, গরিব, শ্রমজীবী মানুষের নাভিশ্বাস। প্রশ্ন এই যে দিনের পর দিন তথ্য জালিয়াতি করে আমাদের সর্বনাশ করা হলো, এর জন্য কি কারও বিচার হয়েছে? কাউকে কি জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে? না, তা করা হয়নি।
আসা যাক রাজস্ব আয়ের দিকে। মনে পড়ে, একবার সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে। তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এই কারণে যে রাজস্ব আয়ের প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। এই যে পরিসংখ্যানগত গরমিল, গোঁজামিল, জালিয়াতি—এতে জড়িত সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তারা একেক জন একই বিষয়ে অনেক কথা বলে। কোনো সমন্বয় নেই। কেউ কারও কথা শোনে না। রাজনীতিবিদেরা এসবে মাথা ঘামান না। তাঁরা ব্যস্ত প্রকল্প নিয়ে, দেশের মানুষের ‘সেবায়’। এই ফাঁকে দেশে তথ্য ও পরিসংখ্যানজগতে তৈরি হয়েছে এক অরাজকতা। এর অবসান হওয়ার দরকার নয় কি? অবশ্যই। সুষ্ঠু পরিসংখ্যান, নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান ছাড়া কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়। একসময় দেখা যাবে ‘ভুল সবই ভুল’। হিসাবের খাতায় যা লেখা তার সবই ভুল। তখন আর শুদ্ধ করার সময় থাকবে না।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ডাকাতি, একদম দিনদুপুরে ডাকাতি। এক-দুই টাকা নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা। হিসাবে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। ১ বিলিয়ন মানে শতকোটি টাকা। তার অর্থ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ১ ডলার আবার প্রায় ১২০ টাকা। তাহলে মোট কত টাকার ডাকাতি হয়? পাঠক, এবার হিসাব করতে পারেন ঠিক কত টাকার ডাকাতি। ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেকের বেশি টাকা। চলতি বছরে আমাদের এডিপির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এবার ভাবুন, কত বড় ডাকাতি!
কোত্থেকে এই ডাকাতি হলো? বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে? না, ওখান থেকে নয়। তাহলে কি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে? না, তা-ও নয়। ডাকাতিটি হয়েছে আমাদের রপ্তানি খাতে। অত্যন্ত মূল্যবান, এই মুহূর্তে আরও বেশি মূল্যবান, ডলার আয়ে; অর্থাৎ রপ্তানি আয়ে। কীভাবে তা সম্ভব হলো? সম্ভব হলো ‘তথ্য জালিয়াতির’ কারণে। ‘তথ্য জালিয়াতি’ না অন্য কিছু, তা একমাত্র সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। আপাতত ধরে নিচ্ছি ‘তথ্য জালিয়াতি’।
এটাই দৃশ্যত মনে হচ্ছে গত ৪ জুলাইয়ের একটি পত্রিকার এক প্রতিবেদন পাঠ করে। প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের হিসাব সংশোধন, নতুন হিসাবে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, বিওপির অনেক হিসাবনিকাশ পাল্টে গেছে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চুপচাপ।’ অনেক বড় শিরোনাম! শিরোনাম পাঠ করেই বোঝা যায় ঘটনাটি, ‘ডাকাতি’টি কত বড়। এ নিয়ে এখন হচ্ছে চর্চা, আলোচনা, সমালোচনা। তাহলে কোথায় কী হচ্ছে? সরকারি সব তথ্য-পরিসংখ্যানেরই কি এই অবস্থা? তাহলে তো সর্বনাশ! সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে।
একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘রপ্তানির তথ্যে যদি এই গড়বড় হয়ে থাকে, তাহলে জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণ বাড়বে, কমবে মাথাপিছু আয়। রপ্তানির তুলনায় আমদানির হিসাবে পরিবর্তন না হওয়ায় বাণিজ্যঘাটতিও বাড়বে। কমে আসবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বাজেটের সব প্রাক্কলনও পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
বোঝাই যায়, রপ্তানি আয়ের অঙ্কে পরিবর্তন বা হ্রাস হলে সরকারি অনেক তথ্য সংশোধন করতে হবে। উন্নয়নের চিত্র যাবে বদলে। কত বড় ‘তথ্য জালিয়াতি’ যে এত বড় পরিবর্তন ঘটবে? খবরের কাগজে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানির পরিমাণ বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে এক কথা, বিপরীতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমাদের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে ইপিবি বলছে, এই সময়ে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তার মানে ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের হেরফের।
বিশাল পার্থক্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন পার্থক্য যে সরকারি দলের ‘বিরোধীদলীয় কণ্ঠ’ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পর্যন্ত ‘খেপে লাল’। তিনি বলেছেন, ‘এটা ছোটখাটো কোনো ভুল না। সংখ্যাও অনেক বড়। কোনো আমলা কাউকে খুশি করার জন্য এমনটা করেছে কি না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বিশাল আমলাতন্ত্রের বিরাট দপ্তরগুলো যথাযথ কাজের উপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্ন উঠবে।’
সম্ভবত মান্নান সাহেব এখন কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এহেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং সাবেক আমলার মুখ থেকে এ কথা বলা হলে সমালোচকদের আর বলার কিছু থাকে না। করার থাকে শুধু আফসোস। আর প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কোথায় কী হচ্ছে, ঘটছে? সরকার কী চায় আর মাথাভারী প্রশাসন, আমলাতন্ত্র কী চায়? এত বেতন-ভাতা দিয়ে পোষা আমলাতন্ত্র আসলে কী চায়? তবে কি কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই ঘটানো হচ্ছে?
অঘটনের উদাহরণ অনেক। তথ্য জালিয়াতির উদাহরণ অনেক। আমার মনে আছে, একবার খাদ্যমন্ত্রী এবং তৎকালীন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে প্রকাশ্য সভায় বাহাস হয়েছিল। বাহাসটি ছিল উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়ে। আমাদের খাদ্য চাহিদা, চাল চাহিদার একটা হিসাব আছে। লোকসংখ্যার তথ্যও আছে। সঙ্গে আছে চাল উৎপাদনের তথ্য। চাল আমদানির তথ্যও আছে। একজন মন্ত্রী বললেন, হিসাবে আমাদের চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। না, তা নেই। হয় চাহিদার তথ্যে গন্ডগোল, নয়তো উৎপাদনের তথ্যে গন্ডগোল। এই বাহাসের কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। চালও আমাদের আমদানি করতে হয়, প্রচুর পরিমাণ গমও আমদানি করতে হয়। একমাত্র ‘ওপরওয়ালা’ ছাড়া আর কেউ আসল কথা জানে না।
আসা যাক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের (ডলার) হিসাবায়নে। আমাদের আমলা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় প্রায় প্রতিদিন ডলার রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করত। দেখা যাচ্ছিল শনৈঃ শনৈঃ বাড়ছিল আমাদের রিজার্ভ। একসময় গিয়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর যায় কোথায়? সরকারের পোষ্য ব্যবসায়ীরা বলতে শুরু করলেন, এত ডলার দিয়ে আমরা কী করব? বেশি ডলার হাতে থাকা মানেই অদক্ষতা, ক্ষতি! অতএব তাঁদের ডলারে ঋণ দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিতে তা দিল। এই ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা বছরের পর বছর দক্ষতার নামে চাকরির মেয়াদ বাড়াচ্ছিলেন। অবশেষে আবার ধরা খেয়ে গেলাম আইএমএফের কাছে। তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমাদের হিসাবায়ন পদ্ধতি ভুল, আন্তর্জাতিক রীতিনীতিবিরুদ্ধ। ব্যস, এক ধাক্কায় রিজার্ভের পরিমাণ নেমে গেল মারাত্মকভাবে। বর্তমানে এ নিয়ে চলছে সংকট।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এখন সবার—মধ্যবিত্ত, গরিব, শ্রমজীবী মানুষের নাভিশ্বাস। প্রশ্ন এই যে দিনের পর দিন তথ্য জালিয়াতি করে আমাদের সর্বনাশ করা হলো, এর জন্য কি কারও বিচার হয়েছে? কাউকে কি জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে? না, তা করা হয়নি।
আসা যাক রাজস্ব আয়ের দিকে। মনে পড়ে, একবার সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে। তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এই কারণে যে রাজস্ব আয়ের প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। এই যে পরিসংখ্যানগত গরমিল, গোঁজামিল, জালিয়াতি—এতে জড়িত সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তারা একেক জন একই বিষয়ে অনেক কথা বলে। কোনো সমন্বয় নেই। কেউ কারও কথা শোনে না। রাজনীতিবিদেরা এসবে মাথা ঘামান না। তাঁরা ব্যস্ত প্রকল্প নিয়ে, দেশের মানুষের ‘সেবায়’। এই ফাঁকে দেশে তথ্য ও পরিসংখ্যানজগতে তৈরি হয়েছে এক অরাজকতা। এর অবসান হওয়ার দরকার নয় কি? অবশ্যই। সুষ্ঠু পরিসংখ্যান, নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান ছাড়া কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়। একসময় দেখা যাবে ‘ভুল সবই ভুল’। হিসাবের খাতায় যা লেখা তার সবই ভুল। তখন আর শুদ্ধ করার সময় থাকবে না।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে