চরমোনাইকে ঠেকাতে ‘নৌকার ভর ছারছিনায়’

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩, ১২: ১৫

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার মেয়র পদপ্রার্থী চরমোনাই পীরের ভাই ফয়জুল করিম ধর্মীয় প্রভাব কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, তাঁকে মোকাবিলায় একই ধরনের প্রভাব প্রয়োগের কৌশল নিয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে হাতপাখার পক্ষে চরমোনাই পীরের মুরিদদের ধর্মীয় আবেগ থাকায় তা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকার খোকনের জন্য। এটি এড়াতে তিনি ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের আরেক পীরের দরবার ছারছিনায় গিয়ে দোয়া নিয়েছেন। পাশাপাশি ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

নৌকার প্রার্থীর এই পদক্ষেপকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দাবি করে প্রচারের একটি সূত্র জানিয়েছে, চরমোনাইয়ের বিকল্প হিসেবে ছারছিনাকে সামনে আনা হচ্ছে। কারণ, নগরে ছারছিনার মুরিদদের একটি বলয় রয়েছে। তবে হাতপাখার অনুসারীদের মতে, ছারছিনার বরিশালে কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই।

ধর্মীয় আবেগের এই প্রয়োগ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদনে বলেন, হাতপাখা প্রার্থীর শতাধিক প্রচার মাইকে গান বাজিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অপরদিকে গত বুধবার প্রার্থী খোকন ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে বৈঠকে দাবি করেন, একটি পক্ষ ইসলাম থেকে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে চায়। তারা আওয়ামী লীগের নামে নানা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। যেসব দল ধর্মের কথা বলে তারা ইসলামের জন্য কী করেছে? তাই আলেমদের এই অপশক্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 
খোকন নগরীর বিএম স্কুলে এ বৈঠক করেন। পরে রাতে তিনি ছারছিনা দরবার শরিফে গিয়ে পীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং নির্বাচন উপলক্ষে দোয়া চান। এ সময় বরিশালের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা মওলানা নুরুর রহমান বেগ উপস্থিত ছিলেন। নুরুর রহমানের কারণে ছারছিনার মুরিদদের একটি বলয় রয়েছে নগরীতে।

নৌকার মেয়র প্রার্থীর এমন প্রচার সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আফজালুল করিম বলেন, ‘ছারছিনার পীর বুজর্গ ব্যক্তি। এ নগরে তাঁর অসংখ্য মুরিদ আছে। যে কারণে তাঁর কাছে দোয়া চাইতে প্রার্থী গিয়েছিলেন। তিনি ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সঙ্গেও সভা করেছেন। ছারছিনা ও ইমাম-মোয়াজ্জিনদের কাছে যাওয়া প্রচার ও সমর্থন পাওয়ার একটা অংশ। এটি নির্বাচনী কৌশল। ছারছিনা জানে যে হাতপাখা ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিচ্ছে।

হাতপাখার ধর্মীয় প্রভাব মোকাবিলায় এমন ধর্মীয় তৎপরতা কি না, জানতে চাইলে আফজালুল বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে আমরা আছি, নানা দিক নিয়ে কাজ করছি। সবকিছুর ফল দেখবেন ভোটে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে হাতপাখার প্রার্থীর মিডিয়া উপকমিটির সদস্য এইচ এম সানাউল্লাহ বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী বুঝে গেছেন যে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিকল্প নেই। যে কারণে ছারছিনার কাছে গিয়ে মৌসুমি ধার্মিক সাজছেন। আসলে ছারছিনার কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বরিশালে নেই।’

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সানাউল্লাহ বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ছারছিনা পীরের কাছে গেলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ডেকে সভা করলেন। এসব কর্মকাণ্ড কি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়? আসলে যাঁরা এমনটা প্রচার করেন, তাঁরা মৌসুমি ধার্মিক। হাতি মার্কার প্রার্থীর বাড়ি মেঘনার ওপার। তিনি কোনো পক্ষের হয়ে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

অন্যদিকে উপকমিটির সদস্যসচিব নাসির উদ্দিন নাইছ বলেন, ছারছিনা পীরের নগরে ভোটার নেই। বরিশালের ধর্মপ্রাণ মানুষ ফয়জুল করিমের সঙ্গেই আছেন। কেন না নগরে চরমোনাইয়ের ধর্মীয় প্রভাব বেশি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত