Ajker Patrika

মুসলিম বিশ্বে যেভাবে হাসপাতাল গড়ে ওঠে

মো. ফজলুল আলম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ২১: ১১
মুসলিম বিশ্বে যেভাবে হাসপাতাল গড়ে ওঠে

যেভাবে শুরু: সময় যত গড়াচ্ছে, পৃথিবীর চিকিৎসাব্যবস্থা সমৃদ্ধির সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে অনেক বিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসাব্যবস্থা বর্তমান কাঠামোয় এসে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থার সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও উপকারী রূপ বলা যায় হাসপাতালব্যবস্থাকে। ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখি, মহানবী (সা.) ব্যক্তিগত সেবা-শুশ্রূষার গণ্ডি পেরিয়ে বৃহৎ পরিসরে হাসপাতালব্যবস্থা চালু করেন। যুদ্ধের ময়দানে আহত সাহাবিদের চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ তাঁবু ও একদল অভিজ্ঞ সাহাবিকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। তাঁদের অগ্রভাগে থাকতেন নারী সাহাবিরা। 

বিশেষায়িত হাসপাতাল: এসব হাসপাতালব্যবস্থা ছিল ভ্রাম্যমাণ। প্রয়োজনের তাগিদে যুদ্ধের ময়দানের কাছাকাছি সাময়িক সময়ের জন্য এই ক্যাম্পগুলো গড়ে তোলা হতো। কালের পরিক্রমায় ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানা বিস্তৃত হতে থাকে বহুদূর পর্যন্ত। মুসলিমরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে পৃথিবীর আনাচকানাচে। নতুন পরিবেশে দেখা দিতে থাকে নতুন সমস্যা। পরিচয় ঘটে নানা রোগ-বালাইয়ের সঙ্গে। ভিন্ন ভিন্ন খলিফার শাসনামলে ইসলামি খেলাফতের রাজধানীও স্থানান্তরিত হতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে। ফলে প্রতিটি অঞ্চলে গড়ে ওঠে হাসপাতাল।

উমাইয়া ও আব্বাসি আমলে: ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি হয় উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের শাসনামলে, ৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে। এটি নির্মিত হয় সিরিয়ার দামেস্কে। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল-মানসুর খেলাফতের রাজধানী বাগদাদে স্থানান্তর করেন। ৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জিন্দি-শাপুর মেডিকেল স্কুলের প্রধান, জুদিস ইবনে বাবতিশুকে রাজ-চিকিৎসক নিয়োগ দেন এবং বাগদাদের গৌরব ও সমৃদ্ধি অনুযায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেন।

৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা হারুন অর-রশিদ শাসনভার গ্রহণ করার পর ইবনে বাবতিশুর নাতি ও রাজ-চিকিৎসক জিবরিলকে ‘বাগদাদ হাসপাতাল’ নামে একটি আধুনিক হাসপাতাল তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাগদাদে নির্মিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের নাম ‘আল-আদুদি হাসপাতাল’। ৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন বাদশাহ আদুদ আদ-দাওলা। মোঙ্গলদের বাগদাদ আক্রমণের সময় ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হালাকু খান সেটি ধ্বংস করে দেন। 

বারো শতকে: ১১৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ক্রুসেডের সময় জেরুজালেমে খ্রিষ্টানরা সেন্ট জন হাসপাতাল নির্মাণ করে। পরে ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সালাহুদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম বিজয় করলে সেটির নামকরণ করা হয় ‘সালাহিনা হাসপাতাল’। তিনি তা আরও বিস্তৃত ও আধুনিক করে গড়ে তোলেন। প্রায় তিন শ বছর হাসপাতালটির কার্যক্রম চলে।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে সিরিয়ার দামেস্কে নির্মিত হয় ‘আন-নুরি হাসপাতাল’, যেটির নামকরণ করা হয় নুরুদ্দিন জেংকির নামে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয় একটি মেডিকেল কলেজ। এখান থেকেই ডাক্তারি পড়েছিলেন ইবনে-নাফিসের মতো স্বনামধন্য চিকিৎসক, যাঁকে আজও ফুসফুসের কার্যকলাপ-প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক হিসেবে সারা বিশ্ব মনে রেখেছে। এখনো এই হাসপাতালের ভগ্নাংশ রয়েছে সেখানে।

মিসর ও অন্যান্য শহরে: মিসরের মুসলিম সেনাপতি আল-মানসুর কালাউন খ্রিষ্টানদের সঙ্গে যুদ্ধে আহত হলে তাঁকে আন-নুরি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানের সেবার মান ও পরিবেশ তাঁকে এতই মুগ্ধ করে যে তিনি মিসরে এমন একটি হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন। পরে ১২৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মিসরের শাসনভার গ্রহণ করে তিনি ‘আল-মানসুরি’ নামে একটি হাসপাতাল স্থাপন করেন। এখানে তিনি ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেন। ইবনে বতুতা ও কালকশান্দির মতে, এটি সে সময়ের সেরা হাসপাতাল। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি এখানেই প্রথম মানসিক চিকিৎসাসেবাও চালু হয়। কায়রোতে নির্মিত এ হাসপাতালটি এখনো চক্ষু-গবেষণা ও চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়া তিউনিসিয়া, মরক্কো ও আন্দালুসিয়ার মতো শহরগুলোতে অসংখ্য বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হয়, যেগুলো শত শত বছর ধরে ইসলামি সভ্যতা ও স্থাপত্যশিল্পের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত