খরতাপে ধরা-মাঝে শান্তির বারি প্রত্যাশা

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ০৯
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ০৮

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পঙ্‌ক্তি ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। নতুন বছরকে সামনে নিয়ে নানা রকম আয়োজন চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা প্রাঙ্গণে। দিনের শুরু থেকে চৈত্রের দাবদাহ শুরু হয়। দুপুর গড়াতে গড়াতে মনে হয় আকাশ থেকে আগুনের ফুলকি ঝরছে। তবে বিকেল গড়ালে প্রকৃতি কিছুটা কোমল হয়ে আসে। বাতাসে ভেসে আসছে তখন বৈশাখের সুর! শোনা যায় নববর্ষের আওয়াজ। আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। ঋতুরাজ বসন্তের বিদায় আর গ্রীষ্মের শুরুতে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য চলছে প্রস্তুতি, প্রাণের উৎসবে মাতবে বাঙালি।

গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায়—প্রস্তুতির মহাকর্মযজ্ঞে ব্যস্ত রয়েছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে জলরং-অ্যাক্রিলিক দিয়ে চলছে কাজ। তৈরি করছে হাতি, ঘোড়া, পুতুল, পাখি, বাঘ, ময়ূর, চালা, ডালা, হাঁড়ি-পাতিল, চুলা—আরও কত কী! এবার উৎসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চারুকলার ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিল্পী, কলাকুশলী এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। জয়নুল গ্যালারির পাশে বিক্রি হচ্ছে তৈরি করা নানা মোটিফ। এসব বিক্রি করে মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ বহন করা হয়। মায়ের কোলে শিশু, টেপা পুতুল, নীল গাই, ময়ূর, ভেড়া, বাঘ ও হরিণ’—এবার এই ছয়টিকে প্রধান মোটিফ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকেরা।

মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ওম প্রকাশ বলেন, ‘যুদ্ধবিগ্রহ থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীতে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সে বিষয়গুলো সামনে রেখে আমাদের কাজ চলছে, প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ। অন্যবারের চেয়ে এবারের আয়োজন অনেক বেশি গুরুত্ববহ বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের আয়োজনের বৈচিত্র্যময়তা এবারের বৈশাখের আনন্দ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা রাখছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে এ যুদ্ধের স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। অন্যান্য যুদ্ধের চেয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বেশি, পৃথিবীতে একটি সংকট চলছে, শান্তির সংকট! তাই রবীন্দ্রনাথের পঙ্‌ক্তি ‘‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি”—যার মূল কথা হলো, পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক। আমরাও চাই পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।’

নিসার হোসেন আরও বলেন, ‘মোটিফগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণে দেখেছি, যাতে কোনো ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে সবার অংশগ্রহণে আয়োজন সমৃদ্ধ হয়। লোকশিল্পের বিষয়, হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে।’

আগামীকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হবে। শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। নতুন বছরের শুরুর দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নববর্ষের দিন মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন ক্যাম্পাস এলাকায় চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

হুমকি, জিডি
মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি দিয়ে একটি উড়ো চিঠি ও পাশে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আয়োজক কমিটির সদস্য আবতাহী রহমান।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে অর্থ ও নিরাপত্তা কমিটির দায়িত্ব পালনের সময় ১১ এপ্রিল রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে চারুকলার পশ্চিম পাশের দেয়ালে রঙের কাজ তদারকির সময় প্লাস্টিক চেয়ারের ওপর একটি সাদা কাগজ ও পঞ্চাশ টাকার নোট পাই। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কাজটা শিরকের, এখানে এসে ক্ষতি করো না তোমাদের, হামলা হতে পারে এনিটাইম ওই দিনের, দাজ্জালী বাহিনী পাবে না টের মোদের।’ পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের প্রক্টরিয়াল টিমের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্দেশে জিডির আবেদন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় জিডিতে। 
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ জানান, জিডি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত