গণভবনে লুটের পর ফেরত আসা জিনিস ব্যবহার অনুপযোগী

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ০৫
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৩৫

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে লুট হওয়া জিনিসপত্রের অনেক কিছুই ফেরত এসেছে। তবে সেগুলোর বেশির ভাগই ব্যবহার উপযোগী নয়। আবার যারা ফেরত দিয়ে যাচ্ছে, তাদের কেউ স্বীকার করছে না, জিনিসপত্রগুলো কারা লুট করেছে। কেউ কেউ বলছে, এগুলো কিনেছে; কেউ বলছে, অন্যরা দিয়েছে ফেরত দেওয়ার জন্য। গণভবনে জিনিসপত্র ফেরত নেওয়ার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী এবং দায়িত্বরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গণভবন কমপ্লেক্সের দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) সদস্যরা। তাঁদের সহযোগিতায় কাজ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার গণভবনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরত আসা জিনিসপত্র গণভবন কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো করে রাখা হচ্ছে। দুজন শিক্ষার্থী জিনিসপত্র জমা নিয়ে সেসবের তালিকা করে রাখছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এর পরপরই গণভবন অরক্ষিত হয়ে পড়ে। দিনভর চলে লুটপাট। গণভবনে দায়িত্বরত পিজিআর সদস্য তাজুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিদিনই মানুষ এসে জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে যাচ্ছে; শিক্ষার্থীরা সেগুলো জমা রাখছেন।

দায়িত্বরত আরেক পিজিআর সদস্য সজীব বলেন, ‘ভেতরে কিছু শিক্ষার্থী ভবন পরিষ্কারের কাজ করছেন। এ ছাড়া আমরা অনুমতি ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।’

এদিকে জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে আসা অনেকে সেগুলো লুটের কথা স্বীকার করছেন না। আগারগাঁও তাওহিদ ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক আব্দুল হালিম গতকাল কাপ-পিরিচ ও বই ফেরত দিয়েছেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সেদিন ছাত্ররা বইগুলো ছিঁড়ে ফেলছিল। তখন আমি তাদের বলি, তোমরা এগুলো নষ্ট কোরো না, আমাকে দাও। আর কাপ-পিরিচগুলো ছাত্ররা আমাকে দিয়েছে ফেরত দেওয়ার জন্য। এত দিন আমার শরীর অসুস্থ ছিল। তাই আজ ফেরত দিলাম।’

মোহাম্মদপুরের সোহেল মিয়া গতকাল ফ্রিজ ফেরত দেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ফ্রিজটা আমি লুট করি নাই। সেদিন আমি আসাদ গেটে ছিলাম। হাজার হাজার মানুষ ছিল এই এলাকায়। সূত্রাপুরের এক লোক ফ্রিজটা নিয়ে এসে বিক্রি করতে চায়। আমি ১২ হাজার টাকায় কিনে নিই। কিন্তু জিনিসটা বাসায় নেওয়ার পর আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই আজকে ফেরত দিয়েছি।’

রোববার (১১ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ৪০ শতাংশ জিনিসপত্র ফেরত এসেছে বলে জানান সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা মোহাম্মদপুর কলেজের শিক্ষার্থী মুয়াইমেন রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ শতাংশ ফেরত দিয়ে গেছে। ফ্রিজ, এসি, সোফা, ট্রাংকসহ অনেক কিছু ফেরত এসেছে। তবে সেগুলো এখন ব্যবহারের মতো অবস্থায় নেই। একটি জার্মান শেফার্ড কুকুরও নবোদয় হাউজিং থেকে সেনাসদস্যরা গিয়ে ফেরত এনেছেন।’

গতকাল ফিরিয়ে দেওয়া লুটের মালপত্রের তালিকা করছিলেন শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া আখতার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ একটা ফ্রিজ ফেরত এসেছে। এ ছাড়া শাড়ি, কাপ, পিরিচ, বইসহ অনেক কিছু এসেছে। আমরা প্রতিদিন আসা জিনিসপত্রের তালিকা করি। এরপর আমাদের সিনিয়রদের কাছে জমা দিই।’ 

লুট হওয়া জিনিসপত্র ফেরত পাচ্ছে না আনসার
গণভবন কমপ্লেক্স লুটের দিন সেখানে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের বাসস্থানও লুট হয়। গণভবনের জিনিসপত্র ফেরত এলেও এই আনসার সদস্যরা তাঁদের জিনিসপত্র ফিরে পাচ্ছেন না। গতকাল কমপ্লেক্সের প্রবেশপথে নিজের মালপত্র খুঁজতে এসেছিলেন আনসার সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ১২ জন আনসার সদস্য গণভবনে ছিলেন। ৫ আগস্ট দায়িত্ব পালনকালে অফিসার থেকে শুরু করে সবার মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ করেন। দুপুর হতেই অনেকেই সেখান থেকে চলে যান। বেলা পৌনে ২টা নাগাদ সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা সাদাপোশাকে গণভবন থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। 

নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত ৯টায় যখন আমাদের থাকার জায়গায় ফিরি, দেখি আগুন জ্বলছে। আমাদের জিনিসপত্র কিছুই নাই।’

গণভবনে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন আনসার সদস্যের ট্রাংকে ২০১৭ সাল থেকে সঞ্চয়ের ৫ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকাও তিনি পাননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত