ডলারের নতুন দামে ঝুঁকিতে রেমিট্যান্স

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২২, ০৬: ১৫
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১২: ৫২

বাজারে ডলারের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দাম ঠিক করে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো বাড়তি দামে ডলার কিনতে পারছে না। কারণ, প্রবাসীরা আগের তুলনায় ৪ থেকে ৫ টাকা কম দামে ডলার পাঠাতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। আর নির্ধারিত দাম কার্যকর হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকেই আমদানির বিল পরিশোধ করছে। আর খোলা বাজারে ডলারের ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা একেবারে কম। সব মিলে নতুন দাম কার্যকরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের দাম বেঁধে দেওয়াটা বাজার ধ্বংসের শামিল। কারণ, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বেঁধে দেওয়া দামে আগের মতো ডলার সংগ্রহ করতে পারবে না। প্রবাসীরা আগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ টাকা কম দামে বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে চাইবেন না। এতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ কমে যাবে। আর একান্তই যাঁরা কম আয় করেন, তারা হয়তো বৈধ চ্যানেলে কিছু টাকা পাঠাতে পারেন। সব মিলে রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমে যাবে।’

দাম বেঁধে দেওয়াতে কারা লাভবান হবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারা লাভবান হবেন তা বলা মুশকিল। তবে যারা বৈধ চ্যানেলে আয় পাঠাতে চান, তারা ক্ষতির শিকার হবেন। সেই সঙ্গে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর ব্যবসা কমে যাবে। আর ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমে যাবে। এতে বৈধ চ্যানেলে র‍েমিট্যান্স পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আয় কমবে। এক পর্যায়ে রেমিট্যান্সে ধাক্কা লাগবে। সুতরাং ডলারের দাম বেঁধে না দিয়ে উন্মুক্ত রাখা উচিত।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোলা বাজারে ফের বাড়ছে ডলারের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় দেড় থেকে দুই টাকা। খোলা বাজারে ডলারের দাম সাড়ে ৯৭ টাকায় ওঠে। তবে আন্তব্যাংকে বেঁধে দেওয়া দামেই ডলার কেনাবেচা করেছে ব্যাংকগুলো।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘বর্তমান সংকটে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে যত বেশি দেরি হবে, সমস্যা তত দীর্ঘায়িত হবে। ডলারের দামকে এভাবে বেঁধে রাখা উচিত হয়নি।’

গত রোববার আন্তব্যাংকে কেনাবেচার জন্য ডলারের একক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল থেকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা। এর মাধ্যমে আরেক দফা কমানো হয় টাকার মান, প্রায় ১ টাকা ১০ পয়সা। প্রবাসী আয় আহরণ ও রপ্তানিকারকদের বিল নগদায়নের ক্ষেত্রে এই হার অনুসরণ করবে ব্যাংকগুলো। আর আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির রেট হবে সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো বৃদ্ধি করতে আমরা প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে একক বিনিময় হারে লেনদেন করা এবং সেই হার আন্তব্যাংকের মধ্যে লেনদেনে কমপক্ষে শূন্য দশমিক এক শতাংশের কম ব্যবধানের প্রস্তাব করেছি।’

রাজধানীর মতিঝিলের খোলা বাজারের ব্যবসায়ী মনির উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই দিনে ডলারের দাম দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে। ব্যাংকে একক দাম নির্ধারণের সঙ্গে খোলা বাজারের সম্পর্ক নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা একদিকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির কথা বলছি, আবার অন্যদিকে সংরক্ষণবাদী নীতিও নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো বাজার মুক্ত করে দেওয়া।’

রেমিট্যান্স সম্পর্কিত সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন 

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সবাই যদি এক দামে প্রবাসী আয় আনে, তাহলেই সংকটের সমাধান হবে। আর প্রবাসীরা আগ্রহ কমালে প্রবাসী আয় কমতে পারে।’

মার্কিন ডলার সম্পর্কিত পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত