Ajker Patrika

সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

রেলের শহর হিসেবে বিখ্যাত নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর। শুধু রেলের নয়, এ শহরের গলিঘুঁজির বুকে লুকিয়ে আছে দারুণ সব গল্প, সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৬৩ সাল। সৈয়দপুর তখনো শহর হয়ে ওঠেনি। রেলওয়ে স্টেশন তখনো তৈরি হয়নি। সেই সময় বেশ ফাঁকা জায়গায় একটি মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন হাজি বাকের এবং হাজি মুকু নামের দুজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। জনশ্রুতি আছে, এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুষ্টির চাল সংগ্রহের মাধ্যমে মসজিদটি নির্মিত হয়।

এর নির্মাণে আরও অর্থের প্রয়োজন হলে এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় তাঁদের এক মাসের উপার্জন দান করেছিলেন মসজিদের জন্য। এর স্থপতি হিসেবে মো. মখতুল ও নবী বক্স নামের দুজনের নাম জানা যায়। শণ ও বাঁশ দিয়ে প্রথমে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদের প্রথম পর্বের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার প্রায় ১৫ বছর পর ১৮৭৮ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন তৈরি হয়।

ধীরে ধীরে মসজিদটিতে টিনের দোচালা ঘর তৈরি হয়। এর অনেক পর, ১৯২০ সালে হাজি হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। হাজি আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন বলে জানা যায়। এরপর ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। আদি ও প্রথম বর্ধিতাংশ চুন সুরকি দিয়ে তৈরি। এই মসজিদের পুরো অবয়ব রঙিন উজ্জ্বল চীনামাটির পাথরের টুকরোয় ঢাকা। ফলে এর নাম হয়ে যায় চিনি মসজিদ। প্রায় ১৬০ বছরের পুরোনো এ মসজিদে একসঙ্গে পাঁচ শর বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

সৈয়দপুর রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে রেললাইনের সমান্তরালে যে রাস্তা সোজা ওয়াপদা এলাকায় হাইওয়ের সঙ্গে মিশেছে, সেই রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলে পড়বে খ্রিষ্টানদের কবরস্থান। জায়গাটির নাম ইসলামবাগ। এখানে কবরস্থানটির ঠিক পাশে ইতিহাসের গল্পের মতো দাঁড়িয়ে আছে চিনি মসজিদ। মোগল স্থাপত্যরীতিতে দোতলা এই মসজিদের ২৭টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে। আশপাশে একসময় অবাঙালি জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্য ছিল। মসজিদ ঘেঁষে ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বামে একটি ইমামবাড়া রয়েছে। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গা ঘেঁষে ১২টি দোকানঘর। এসব দোকানের ভাড়া এবং মুসল্লিদের চাঁদা মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস। তার ওপর নির্ভর করে মসজিদের সব ব্যয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড।

স্থানীয় প্রবীণ মানুষদের কাছে জানা যায়, বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো এক সময় ২৫ টনের মতো চীনামাটির পাথর দান করে।এ ছাড়া এটি তৈরিতে কলকাতা থেকে ২৪৩টি সংকর পাথর এনে লাগানো হয়। মসজিদের দেয়ালে ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, একটি বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদতারাসহ বিভিন্ন চিত্র আঁকা আছে। এটি তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়। এর মেঝেও মার্বেলে তৈরি। এগুলো তৈরি করা হয় প্রায় ৬০ বছর আগে।

তার আগে এর মেঝে ছিল মোজাইকের তৈরি। এখনো প্রাচীন অংশের বারান্দার খিলানের ৮টি কলামে মোজাইকের চমৎকার ফিনিশিং দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস আহমেদ জানান, মসজিদের প্রাচীন ভবন নির্মাণ করেন শঙ্কু নামের এক হিন্দু নির্মাণশ্রমিক। দৈনিক ১০ আনা মজুরি ছিল তাঁর। 

এই প্রাচীন মসজিদ দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা আসেন নিয়মিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মিডিয়া ছুটায় দেব, চেনো আমাদের’—সাংবাদিককে হুমকি কুড়িগ্রামের এসপির

মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা

সৌদি রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের ভিত্তিতেই মডেল মেঘনা কারাগারে

মডেল মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে সুরাহার চেষ্টা করেছিল পুলিশ

বান্দরবান, মণিপুর, মিজোরাম ও রাখাইন নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে: বজলুর রশীদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত