১৮ পাহাড় কেটে বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোড

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১০: ৫৩
Thumbnail image

প্রায় ১৮টি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছিল বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড। পাহাড়ের ওপর আঘাতের দায়ও দিতে হচ্ছে বারবার। বৃষ্টি হলেই প্রায় সময়ই পাহাড় ধস হচ্ছে। এতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে সড়ক।

জানা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে দুই পাশে ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে পাহাড়গুলো কেটেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় এই ১৮টি পাহাড় কাটা হয়েছিল।

আগামী বর্ষার আগে এই সড়ক ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ জন্য খাড়া করা পাহাড়গুলো কেটে সমান করতে চায়। গত রোববার পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন নতুন করে পাহাড় কাটার বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে (পাহাড় কাটা) কথা হয়েছে। এখন এমন একটা ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা মাটি ধসে মানুষের মৃত্যু না হয়। এ বিষয়ে আমরা একমত।’

বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ‘পাহাড়গুলো যথাযথভাবে কাটা হয়নি। যদিও এই পাহাড় কাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা করেছে। কিন্তু ১০ কোটি টাকা জরিমানা করার পরও পাহাড়গুলো এত খাড়া কেন? এটা তো সোজা হওয়ার কথা, ঠিকঠাক হওয়ার কথা ছিল।’

সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট অংশ থেকে নগরীর বায়েজিদ পর্যন্ত ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। শুরুতে দুই লেনের সড়ক করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের অক্টোবরে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ কোটি টাকা।

২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও সেই অনুযায়ী কাজ করেনি সিডিএ। এ কারণে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করায় ২০১৭ সালে সিডিএকে দুই দফায় নোটিশ দেওয়া হয়। জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এরপরও থামেনি পাহাড় কাটা। ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে শুনানি শেষে ‘পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ও ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করায়’ সিডিএকে আবারও ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদনের চেয়ে ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭২০ ঘনফুট বেশি পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছিল অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। পাশাপাশি হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের নির্দেশনা না মেনে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়া করে পাহাড় কাটার প্রমাণ মেলে। এ জন্য বৃষ্টি হলেই সড়কের বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। ধস-আতঙ্কে এখনো পুরোপুরিভাবে সড়কটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

গত বছর ধসে পড়ার ঝুঁকি কমাতে সড়কের দুই পাশ থেকে আরও ২ লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রস্তাব পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিল সিডিএ। এবার পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিও পাহাড় কাটার কথা বলল।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘পাহাড় কর্তন বা যেকোনো পরিবর্তন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব যেহেতু অবগত, তাই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করব। তারা নির্ধারণ করবে কতটুকু পাহাড় কাটতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত