Ajker Patrika

জার্মানিতে বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা

নাদিম মজিদ
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩, ১১: ০০
জার্মানিতে বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা

জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে পুরো ইউরোপকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দেশ। সে দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জার্মানির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রেলওয়ে বিভাগে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ড. মাসুদ কবির। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জার্মানিতে বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা নিয়ে লিখেছেন নাদিম মজিদ

ইউরোপের দেশ জার্মানি। এ দেশে স্কিল জনশক্তির অভাব রয়েছে। তারা সব সময় দক্ষ জনশক্তিকে তাদের দেশে আকর্ষণ করে থাকে। এ জন্য যেমন স্কলারশিপ এবং ফান্ডিং রয়েছে, আবার স্কলারশিপ বা ফান্ডিংয়ের বাইরেও বিনা খরচে জার্মানিতে যাওয়ার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। যাঁরা জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁদের জানা আছে স্কলারশিপ/ফান্ডিং ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে দীর্ঘ ওয়েটিং পিরিয়ডের কথা। এই দীর্ঘ ওয়েটিং পিরিয়ড কমানোর জন্য অনেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন বা নেওয়ার চেষ্টা করেন। না বুঝে কাজ করার কারণে কোনো কোনো উদ্যোগ উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

না খরচে জার্মানিতে আসার উপায় 
আমরা জানি যে, জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসায় আসার সময় যদি কোনো ফান্ডিং থাকে, তাহলে জার্মান দূতাবাস তাদের ভিসা ফাস্ট-ট্রেক করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে (সচরাচর ২-৮ সপ্তাহ) দিয়ে দেয়। এখানে পয়েন্ট হচ্ছে দুটো: এক নম্বর হলো একটি ফান্ডিং, আরেকটি হলো ভিসা পাওয়ার জন্য ওয়েটিং পিরিয়ড। কেউ ফান্ডিং পেলে খুব দ্রুত ভিসা হয়ে যায় জার্মানিতে। জার্মানিতে আসার জন্য অনেকেই জার্মানির ব্যাংকে যে টাকা (প্রায় ১৩.৫ লাখ) ব্লক করে, তা জোগাড় করতে পারেন না। তাঁদের জন্য এই বিনা খরচে আসার উপায়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

জার্মানিতে বিনা খরচে আসার উপায়গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়: 
১. Ausbildung
Ausbildung মানে হলো, আপনি কোনো বিষয়ের ওপর কাজ করবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে কিছু থিওরিও শিখবেন। এ ক্ষেত্রে যে কোম্পানিতে আপনি Ausbildung করবেন, ওই কোম্পানি আপনাকে মাসে মোটামুটি ৭৫০ ইউরো থেকে ১১০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন দেবে। এই বেতন বা ফান্ডিংটা আপনি পেলে মোটামুটি আপনার জার্মানিতে আসার জন্য খুব বেশি টাকা ব্যাংকে রাখতে হবে না। ধরুন, আপনি ৮০০ ইউরো বেতন পেলেন Ausbildung-এ, তা হলে আপনাকে বাকি প্রায় ১৩৪ ইউরো মাসিক হিসাবে ১ বছরে ১৬০০ ইউরো ব্যাংকে রাখতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার প্রধান যোগ্যতাগুলো হলো, কমপক্ষে ১০ বছরের পড়াশোনা, জার্মান ভাষার B১ (B২ হলে বেটার) সার্টিফিকেট। আপনার জার্মান ভাষার সার্টিফিকেট থাকলে জার্মান কোম্পানিগুলোতে আবেদন করে Ausbildung পেতে পারেন। Ausbildung পেলে ওটার কন্ট্রাক্টসহ দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভিসা ইন্টারভিউ পাবেন। 

২. ডুয়েল স্টাডি 
ডুয়েল স্টাডি হলো একটি পড়াশোনার পদ্ধতি, যেখানে অর্ধেক সময় কোম্পানিতে কাজ করবেন, আর অর্ধেক সময় ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করবেন। এই ডুয়েল স্টাডি ব্যাচেলরস বা মাস্টারস হতে পারে। ডুয়েল স্টাডিতেও আপনাকে কোম্পানি থেকে বেতন দেওয়া হয়। এটা প্রায় ৭৫০ থেকে ১৫০০ ইউরো হতে পারে মাসে। এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ, যেখানে পড়াও যায়, আবার টাকাও পাওয়া যায়। ডুয়েল স্টাডির বেশির ভাগ জার্মান ভাষায় হয়। তবে ইংলিশ দিয়েও কোথাও কোথাও ডুয়েল স্টাডিতে পড়ানো হয়। এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পড়াশোনাকালে চাকরি, আপনার নিজের অভিজ্ঞতা বাড়াচ্ছে, আর পাস করার পর জব পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট সুবিধা পাবেন। আবার কেউ যদি এভাবে বেতনসহ ডুয়েল স্টুডিতে চান্স পান, তা হলে তিনি খুব দ্রুত জার্মান ভিসা ইন্টারভিউ পাবেন এবং প্রায় বিনা খরচে পাবেন। 

ড. মাসুদ কবির৩. স্কলারশিপ
জার্মানিতে অনেক ধরনের স্কলারশিপ আছে, যার কিছু অংশ DAAD ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। কিন্তু DAAD ওয়েবসাইটের বাইরেও অনেক স্কলারশিপ আছে। সাধারণত জার্মানিতে ২০০ ইউরো থেকে ২০০০ ইউরো পর্যন্ত স্কলারশিপ পেতে পারেন কেউ। কারও স্কলারশিপ হলে তিনি জার্মান ভিসা ইন্টারভিউ কল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পেতে পারেন। 

৪. ইন্টার্নশিপ
অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে ইন্টার্নশিপ নিয়ে আসেন। মাস্টারস বা ব্যাচেলরসে পড়াকালে যদি কেউ জার্মানিতে ইন্টার্নশিপ নিয়ে আসেন, তা হলে তিনি এখানে থেকেই রেসিডেন্সির সময় বাড়িয়ে পরবর্তী পড়াশোনা সরাসরি শুরু করতে পারবেন। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা কেন জানি ইন্টার্নশিপের ব্যাপারটি খুব একটা জানেন না, যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত জার্মানি আসছেন ইন্টার্নশিপ নিয়ে। জার্মানিতে এক বছর পর্যন্ত ইন্টার্নশিপ করা যেতে পারে। 

শর্তগুলো

  • এমন কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হবে, যেটা জার্মান সংস্থা আনাবিন (Anabin) দ্বারা স্বীকৃত।
  • এমন কোনো স্টাডি করছেন, যেটা জার্মান সমতুল্য (যেমন ৪ বছরের ব্যাচেলরস বা মাস্টারস)।
  • ব্যাচেলরে কমপক্ষে ৪ সেমিস্টার শেষ করেছেন।
  • আনাবিনের এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘suchen’ অপশনে গিয়ে ‘Bangladesh’ লিখে ‘Suche Starten’-এ প্রেস করে দেখতে পারবেন আপনার ইউনিভার্সিটি এই তালিকায় আছে কি না। 
     
    কীভাবে কী করতে হবে:
  • জব বা কোম্পানি ওয়েবসাইট থেকে একটা ইন্টার্নশিপ খুঁজে আবেদন করা।
  • ইন্টারভিউয়ের পর সিলেক্টেড হলে Arbeitsamt-এ কন্ট্রাক্টসহ আবেদন করা।
  • আবেদন করার পর সেই অনুমতিসহ দূতাবাসে ভিসার জন্য দাঁড়ানো। 

কোথায়, কীভাবে আবেদন করতে হয়
পারমিশনের জন্য Arbeitsamt-এ আবেদন করার ওয়েবসাইট 

কী কী লাগবে

  • ওয়েবসাইটে দেওয়া অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ।
  • দেশের যে ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা করছেন, ওখান থেকে একটা ফরম পূরণ করা যেটা Arbeitsamt-এর ওয়েবসাইট এ দেওয়া আছে।
  • ইউনিভার্সিটিতে পড়ার প্রমাণ।
  • একটা ইন্টার্নশিপ প্ল্যান, যেটা কি না Arbeitsamt থেকে দেওয়া একটা ফরমে থাকবে।
  • পাসপোর্টের কপি।
  • অ্যাগ্রিমেন্ট ঘোষণার একটা ফরম।
  • আনাবিন ওয়েবসাইটে দেওয়া ইউনিভার্সিটির নামের স্ক্রিনশটের কপি। 

নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক ইন্টার্নশিপের অ্যাড দেখতে পাবেন: 
https://www.stepstone.de/jobs/praktikum-softwareentwicklung
https://www.jobvector.de/stellensuche

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত