ড. মইনুল ইসলাম
স্বাধীনতা ঘোষণার ৫২তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে আইএমএফ ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। অতএব, স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশে পুঁজি পাচার এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে হুন্ডির বেলাগাম আধিপত্যের মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে হলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানি খাতে ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় এবং ফরমাল চ্যানেলে ১৯৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে সুবাতাস ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতেও যার কিছুটা রেশ মিলছে।
স্বস্তিকর অবস্থায় অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন এবং পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি নিতে হবে।২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করলেও গত চার বছরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্মর্তব্য, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করেছিল। ওই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ওই ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশিপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে পরিকল্পিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করায় আবার দেশে দুর্নীতির তাণ্ডব পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ১২ নম্বর দেশের অবস্থানে রয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) বলেছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।
২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মোতাবেক ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। (সরকারের ঘোষণা মতে, রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশে কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে। ফলে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। অর্থমন্ত্রীর মতে, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসে।
আমার মতে, অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে। এর মানে, ফরমাল চ্যানেলে প্রতিবছর ২১-২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও আরও কমপক্ষে ২২ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসছে! বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, সেটার জন্য দায়ী চারটি প্রধান পুঁজি পাচার প্রক্রিয়া: এক. আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আড়ালে ওভারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার, দুই. রপ্তানিতে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার, তিন. রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না এনে বিদেশে রেখে দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক এবং চার. দেশের ব্যাংকঋণ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক হুন্ডিওয়ালাদের ঋণের টাকা প্রদানের মাধ্যমে এর সমপরিমাণ ডলার হুন্ডির প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে।
এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডির প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো।
অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদিও দাবি করে থাকেন যে তাঁকে কেনা যায় না; তবু সাধারণ জনগণের মনে যে বিশ্বাসটা গেড়ে বসেছে সেটা হলো, দুর্নীতির ব্যাপকতা বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমল থেকেও বেশি।
গত এক বছরে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার একদা-সমৃদ্ধ অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার ‘মেল্টডাউন’। দেশটির এই দেউলিয়াত্ব ডেকে এনেছে করোনাভাইরাস মহামারি, উল্টাপাল্টা নানা প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের হিড়িক, হঠাৎ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ করহারকে ১৫ থেকে ৮ শতাংশে নামানো এবং রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দুটো হঠকারী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সভরেন বন্ডের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা প্রচুর বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করেছিল, যেগুলোর ম্যাচুরিটি ২০২২ সাল থেকে শুরু হলেও ওই সব বন্ডের অর্থ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য শ্রীলঙ্কার নেই। এর পাশাপাশি করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটনসহ রপ্তানি খাতের বিপর্যয় এবং ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের ধস অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। এই ‘মেল্টডাউন’-উদ্ভূত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে শ্রীলঙ্কার নিষ্কৃতি পেতে কত বছর লাগে, সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। (অবশ্য, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা আইএমএফ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার ‘বেইল আউট’ ঋণ পাওয়ায় ২০২৪ সাল থেকে আবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে)।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে ২০২০ সাল থেকে কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু জিডিপি আর হয়তো তেমন বাড়বে না। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার অবচয়নের মতো চলমান সংকটের মোকাবিলা করতে হলেও বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপি ও জিএনআইয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২ থেকে ৬ শতাংশের রেঞ্জে থাকবে বলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, যার প্রধান কারণ ছিল এলএনজি, তেলসহ পেট্রোলিয়াম পণ্য, ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও সারের নাটকীয় আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি।
একই সঙ্গে আমদানি এলসি ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পুঁজি পাচারও এর জন্য দায়ী ছিল। সরকার ২০২২ সালের আগস্ট থেকে কঠোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করায় গত পাঁচ মাসে এলসি খোলার হার প্রায় ৯ শতাংশ কমে এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ‘এলসি ওভারইনভয়েসিং মনিটরিং’ ব্যবস্থা জোরদার করায় ওভারইনভয়েসিংও খানিকটা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সরকার যদি এই পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন ও পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর দমন কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি জুনের মধ্যেই ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের সংকট নিরসনের পথে এগিয়ে যাবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের বিশ্বাস।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই প্রাক্কলন ঘোষণা করেছে যে আগামী জুলাই নাগাদ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। আমার মতে, ওপরে উল্লিখিত দুর্নীতি ও পুঁজি পাচার দমনকে অগ্রাধিকার দিলেই এই লক্ষ্য অর্জিত হবে, অন্য কোনো পথে নয়। ইতিমধ্যে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশ পেয়ে গেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে শ্লথ করবে। আর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার মতো কঠোর দমনব্যবস্থা নিলে আগামী মাসগুলোতে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়তে শুরু করবে। তাহলে ২০২৩ সালের ৩০ জুন নাগাদ আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করবে ইনশা আল্লাহ। আগামী দুই বছর যদি বাংলাদেশ ৬-৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হয়তো শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে যাবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা ঘোষণার ৫২তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে আইএমএফ ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। অতএব, স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশে পুঁজি পাচার এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে হুন্ডির বেলাগাম আধিপত্যের মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে হলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানি খাতে ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় এবং ফরমাল চ্যানেলে ১৯৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে সুবাতাস ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতেও যার কিছুটা রেশ মিলছে।
স্বস্তিকর অবস্থায় অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন এবং পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি নিতে হবে।২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করলেও গত চার বছরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্মর্তব্য, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করেছিল। ওই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ওই ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশিপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে পরিকল্পিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করায় আবার দেশে দুর্নীতির তাণ্ডব পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ১২ নম্বর দেশের অবস্থানে রয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) বলেছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।
২০২১ সালের আগস্টের ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মোতাবেক ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। (সরকারের ঘোষণা মতে, রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশে কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৭-৮ টাকা রয়ে গেছে। এই দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙা করছে। ফলে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে বাধ্য। অর্থমন্ত্রীর মতে, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসে।
আমার মতে, অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে। এর মানে, ফরমাল চ্যানেলে প্রতিবছর ২১-২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও আরও কমপক্ষে ২২ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসছে! বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, সেটার জন্য দায়ী চারটি প্রধান পুঁজি পাচার প্রক্রিয়া: এক. আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আড়ালে ওভারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার, দুই. রপ্তানিতে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার, তিন. রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না এনে বিদেশে রেখে দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক এবং চার. দেশের ব্যাংকঋণ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক হুন্ডিওয়ালাদের ঋণের টাকা প্রদানের মাধ্যমে এর সমপরিমাণ ডলার হুন্ডির প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৪ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে।
এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণগ্রহীতারা। হুন্ডির প্রক্রিয়ায় যে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সিআইডি, তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো।
অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্ কা বাত্’ বানিয়ে রেখে পুঁজি পাচার সমস্যার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদিও দাবি করে থাকেন যে তাঁকে কেনা যায় না; তবু সাধারণ জনগণের মনে যে বিশ্বাসটা গেড়ে বসেছে সেটা হলো, দুর্নীতির ব্যাপকতা বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমল থেকেও বেশি।
গত এক বছরে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার একদা-সমৃদ্ধ অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার ‘মেল্টডাউন’। দেশটির এই দেউলিয়াত্ব ডেকে এনেছে করোনাভাইরাস মহামারি, উল্টাপাল্টা নানা প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের হিড়িক, হঠাৎ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ করহারকে ১৫ থেকে ৮ শতাংশে নামানো এবং রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অরগানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দুটো হঠকারী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সভরেন বন্ডের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা প্রচুর বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করেছিল, যেগুলোর ম্যাচুরিটি ২০২২ সাল থেকে শুরু হলেও ওই সব বন্ডের অর্থ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য শ্রীলঙ্কার নেই। এর পাশাপাশি করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটনসহ রপ্তানি খাতের বিপর্যয় এবং ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্সের ধস অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। এই ‘মেল্টডাউন’-উদ্ভূত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে শ্রীলঙ্কার নিষ্কৃতি পেতে কত বছর লাগে, সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। (অবশ্য, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা আইএমএফ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার ‘বেইল আউট’ ঋণ পাওয়ায় ২০২৪ সাল থেকে আবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে)।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে ২০২০ সাল থেকে কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু জিডিপি আর হয়তো তেমন বাড়বে না। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার অবচয়নের মতো চলমান সংকটের মোকাবিলা করতে হলেও বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপি ও জিএনআইয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২ থেকে ৬ শতাংশের রেঞ্জে থাকবে বলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, যার প্রধান কারণ ছিল এলএনজি, তেলসহ পেট্রোলিয়াম পণ্য, ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও সারের নাটকীয় আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি।
একই সঙ্গে আমদানি এলসি ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পুঁজি পাচারও এর জন্য দায়ী ছিল। সরকার ২০২২ সালের আগস্ট থেকে কঠোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করায় গত পাঁচ মাসে এলসি খোলার হার প্রায় ৯ শতাংশ কমে এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ‘এলসি ওভারইনভয়েসিং মনিটরিং’ ব্যবস্থা জোরদার করায় ওভারইনভয়েসিংও খানিকটা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সরকার যদি এই পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন ও পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর দমন কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি জুনের মধ্যেই ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের সংকট নিরসনের পথে এগিয়ে যাবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের বিশ্বাস।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই প্রাক্কলন ঘোষণা করেছে যে আগামী জুলাই নাগাদ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। আমার মতে, ওপরে উল্লিখিত দুর্নীতি ও পুঁজি পাচার দমনকে অগ্রাধিকার দিলেই এই লক্ষ্য অর্জিত হবে, অন্য কোনো পথে নয়। ইতিমধ্যে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশ পেয়ে গেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে শ্লথ করবে। আর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার মতো কঠোর দমনব্যবস্থা নিলে আগামী মাসগুলোতে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়তে শুরু করবে। তাহলে ২০২৩ সালের ৩০ জুন নাগাদ আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করবে ইনশা আল্লাহ। আগামী দুই বছর যদি বাংলাদেশ ৬-৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হয়তো শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে যাবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে