ভোটের মারামারিতে ৩৫ জন আহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭: ৫৮
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৫৪

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার মাত্রা ততই বাড়ছে। চতুর্থ ধাপের এই উত্তেজনার সঙ্গে যোগ হয়েছে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের উত্তাপও। এরই মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় এক কলেজছাত্রসহ দুজনের প্রাণ গেছে। এ ছাড়া ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘর্ষ, নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত সোমবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ-সহিংসতায় অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া যশোরের কেশবপুরে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছেলের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের জরিপেরডাঙ্গী গ্রামে গত মঙ্গলবার রাতে দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রায়হান (২০) নামের গুরুতর আহত একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, চরবিষ্ণপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রফিক মিয়া ও মোয়াজ্জেম হোসেন। দুজনের সমর্থকেরা সোমবার রাতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আটটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে গত ২৮ নভেম্বর ভোট হয় হামিরদী ইউপিতে। এতে সদস্যপদে বিজয়ী হন আলম মোল্লা। গতকাল আলম মোল্লার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত প্রার্থী বাবর আলীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ মন্ডল।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নে সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান মান্নান মোল্লার নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাফিজুর রহমান পাল্টা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। এদিকে রাজশাহীর চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের নির্বাচনী কার্যালয়ে সোমবার দিবাগত রাতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হকের কর্মী-সমর্থকেরা আগুন দিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জিয়াউল হক।

আ.লীগের প্রার্থীর ছেলের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
যশোরের কেশবপুরের সাতবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুন্নাহার লিলির ছেলে মনিরুজ্জামান মিন্টুর (৩৫) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সামছুদ্দীন দফাদারের ছেলেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, শামছুন্নাহার লিলির ছেলে মনিরুজ্জামান মিন্টুর (৩৫) সঙ্গে সোমবার রাতে সামছুদ্দীন দফাদারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ হয়। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় শামছুন্নাহার লিলির ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মশিয়ার রহমান দফাদার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী সামছুদ্দীন দফাদারের ছেলে আমজেদ হোসেনসহ (৪০) কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মশিয়ার রহমানের দাবি, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সাতবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতবাড়িয়া বাজারে সোমবার রাতে তাঁর ভাগনেকে মারধর করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সামছুদ্দীন দফাদার।

কেশবপুর থানার ওসি বোরহান উদ্দিন বলেন, মনিরুজ্জামান মিন্টুর মরদেহ উদ্ধার করে যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনায় কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় মামলা
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় কলেজছাত্র নাছিম হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিহত কলেজছাত্রের বাবা নায়েব আলী ৩-৪ জনের নামোল্লেখ করে সোমবার রাতে একটি মামলা করেছেন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান খান তাঁর প্রচারণায় হামলার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন। পুলিশ এ মামলায় আব্দুল মতিন ও আব্দুল কুদ্দুস নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত