শয্যা খালি, রোগী বারান্দায়

মোস্তাকিম ফারুকী, মিটফোর্ড
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৭
Thumbnail image

কেরানীগঞ্জ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন তানহা (২২)। গত শুক্রবার ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। সিট না পেয়ে তানহার জায়গা হয় হাসপাতালটির বারান্দায়। পরবর্তী সময়ে এখানকার সুইপারকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি শয্যার ব্যবস্থা করেন তিনি। গভীর রাতে বাইরে শীত অনুভূত হওয়ায় রুমের ভেতরে যেতে চান তিনি। শনিবার রুমের ভেতরে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করা হলেও বিনিময়ে আনসার সদস্যকে দিতে হয় আরও ২০০ টাকা। রোববার হাসপাতালটির এক আয়া এসে নিজেই তানহাকে একটি ভালো শয্যা ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। বিনিময়ে ওই আয়াও ২০০ টাকা চান।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে বাকি রোগীদের অবস্থাও অনেকটা তানহার মতো। অথচ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটির ওপর লাখো মানুষের নির্ভরতা। পুরান ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের হাজারো চিকিৎসাপ্রত্যাশী ভরসা নিয়ে এখানেই ছুটে আসেন। গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ২ নম্বর ভবনের মেডিসিন বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মেঝে জায়গা করে নিয়েছেন অনেকে। যদিও হাসপাতালটির ২ নম্বর ভবনের অষ্টম তলায় ৮০টি শয্যা ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

টাঙ্গাইল থেকে আগত ব্যবসায়ী হাবিব (৪২) দুদিন ধরে মাকে নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে রোগীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন আসেন। কিন্তু টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। অসুস্থ হওয়ার জন্য এমন পরিবেশই যথেষ্ট।’ নানা সংকট নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের ডেঙ্গু ইউনিট প্রস্তুত করা ছিল। যেখানে ৮০ শয্যাবিশিষ্ট ওয়ার্ড ছিল। সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগী না থাকায় ওয়ার্ডটি ফাঁকা রয়েছে। তবে খুব শিগগির আমরা সেখানে একটি বিশেষ ইউনিট স্থানান্তর করব। তা ছাড়া, আমাদের ডাক্তার-নার্স রোগীর তুলনায় কম আছে। চাইলেই এক ওয়ার্ডের রোগী অন্য ওয়ার্ডে রেখে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর বেডে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয়, এমন কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ আসে, তবে অবশ্যই আমরা তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

যাত্রাবাড়ী থেকে আগত ইয়াসিন বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। একটা সিট পাওয়ার জন্য মানুষের পেছনে ঘুরেছি। টাকা ছাড়া এখানে কেউই সিট দেয় না। বাবার জন্য কোনো রকম মেঝে একটা সিট পেয়েছি। শীতকালে মেঝে থাকতে আমার বাবার খুব কষ্ট হয়। তারপরও কী আর করা।’ কর্তব্যরত আনসার সদস্য ইউসুফের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, ‘কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হয় না। কেউ যদি খুশি হয়ে আমাকে দেয়। সেটা আমি নিই।’

হাসপাতালটির ডেঙ্গু ইউনিটের প্রধান মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে আমরা আলাদা ইউনিট করেছিলাম এবং সেখানে সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে মানুষকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। নন কোভিড হাসপাতাল হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। তারপরও এখানে করোনা পরীক্ষা করা হয়। বিগত কয়েক দিনের তুলনায় করোনা পজিটিভের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া, হাসপাতালে রোগীর চাপও বাড়ছে।’

এদিকে হাসপাতালটির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ৮১ জনের করোনা টেস্ট করে ১৮ জনেরই পজিটিভ আসে। শুক্রবার ১২৯ জনের পরীক্ষা করে ২৩ জনের পজিটিভ আসে। এভাবে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যদি নির্দেশনা আসে, তবে আমরা এই ডেঙ্গু ইউনিটকে করোনার জন্য ডেডিকেটেড করে দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত আছি। সত্যি বলতে, ৮০টি বেড রিজার্ভ রাখা হয়েছে করোনাসহ অন্য যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায়। তবে এটা ঠিক, হাসপাতালে আমাদের নানা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এখানে ডাক্তার-নার্সের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত