বগুড়া ও নওগাঁ জেলায় আয়োজিত দুটি তাঁত ও কুটিরশিল্প মেলায় আয়োজন করা হয়েছে লটারির। মেলায় প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। প্রবেশের এই টিকিট একই সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে লটারির টিকিট হিসেবে। মেলার পণ্য বিক্রি যেমন তেমন হলেও লটারির টিকিট কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। মেলার প্রবেশমুখের পাশাপাশি মেলার ভেতরেও একাধিক জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে এসব লটারি।
নওগাঁ পৌরসভার রজাকপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল ট্রাক ও সিএনজি টার্মিনাল মাঠে গত ১৬ মে এবং বগুড়া শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে ২৩ মে শুরু হয়েছে তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প পণ্য মেলা।

মণিপুরি জামদানি, বেনারসি তাঁতি কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া কালেক্টরেট সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ জেলা প্রশাসক কার্যালয় বগুড়ার আয়োজনে মাসব্যাপী বগুড়ায় চলছে মেলা।

মেলার পাশাপাশি উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ইজিবাইকে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। লটারির ড্রতে থাকছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণের মালা, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ বিভিন্ন রকমের ৬১টি পুরস্কার।

লটারিতে ক্রেতার নাম ও ফোন নম্বর নেওয়া হয়। আর প্রতিদিন রাতে লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় কেব্‌ল নেটওয়ার্ক অপারেটরের চ্যানেলে ড্রয়ের দৃশ্য সম্প্রচার করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের ফোন নম্বরে কল দিয়ে তাঁদের ডেকে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি মোটরসাইকেল দেওয়া হয় ড্রতে।

গত শুক্রবার বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে অনুষ্ঠিত মেলায় ঘুরে দেখা যায়, তাঁতবস্ত্র, তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, খেলনা, ক্রোকারিজ সামগ্রীর মোট ৬২টি স্টল বসেছে। তবে এসব স্থানের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসা লটারির টিকিট বিক্রেতাদের ঘিরে।

মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মণিপুরি জামদানি বেনারসি তাঁতি কল্যাণ সমিতির সদস্যসচিব আলমগীর মাহমুদ আলম জানান, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছে মেলার প্রবেশমুখে।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় আবুল বরকত নামের কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি ১৫টি টিকিট কিনেছেন পুরস্কার পাওয়ার আশায়।

এদিকে, গত ২৪ মে থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাসভবনে সামনে থামে একটি মিনিবাস। ২৩ জন টিকিট বিক্রেতা বগুড়া থেকে আসেন। তাঁদের প্রত্যকের লক্ষ্য প্রতিদিন প্রতি গাড়ি থেকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার টিকিট বিক্রি করা।

ইউএনও ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গাড়িটি লক্ষ করেছি। তবে এটা লটারির বাস আমার জানা ছিল না।’
প্রতিটি উপজেলায় টিকিট বিক্রেতাদের সমন্বয় করার জন্য ২-৩ জন ম্যানেজার আছেন। প্রধান সমন্বয়কারী রুবেল হোসেন বলেন, ‘গত ৯ দিন ধরে আমরা বগুড়া জেলার সকল উপজেলায় লটারির টিকিট বিক্রি করছি।’  

শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অটোরিকশায় বসে মাইকে প্রচার করে টিকিট বিক্রয়কারী মো. রাব্বি বলেন, ‘২০ টাকা দরে প্রতিদিন ৫০০ থকে ৬০০ টিকিট বিক্রি করে থাকি। এ জন্য প্রতিদিন ৭০০ টাকা মজুরি পাই।’ 
বগুড়া কালেক্টরেট তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমরা শুধু মেলায় প্রবেশের টিকিট বিক্রি করছি।’

বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু বলেন, ‘আমরা তো লটারি করছি না। প্রবেশ টিকিটের ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এটাতে হাইকোর্টের অনুমোদন আছে। মেলার গেটে অধিক লোক সমাগম হওয়ায় বাইরেও টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।’

একইভাবে আদমদীঘি উপজেলাতেও চলছে বগুড়া ও নওগাঁর কুটিরশিল্প মেলার লটারি বিক্রি।

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আম্বিয়া লুলু বলেন, ‘সান্তাহার পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেলার লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট কিনে টাকা খোয়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’
জানা গেছে, শাজাহানপুর, ধুনট, গাবতলী, শিবগঞ্জ, কাহালু, সোনাতলা উপজেলাতেও প্রতিদিন অটোরিকশায় মাইকিং করে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
লটারিকে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবার মেলা কর্তৃপক্ষকে লটারি বন্ধ করার জন্য চিঠি দিয়েছি।’