Ajker Patrika

মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর পাশেই অন্য রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেই ডেঙ্গু কর্নার। চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ডের অন্য রোগীদের সঙ্গে। এতে অন্য রোগীরাও ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আলাদা ওয়ার্ড না রাখায় ডেঙ্গু রোগীর স্বজনেরা যেমন ক্ষোভ জানিয়েছেন, শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্য রোগী ও তাঁদের স্বজনেরাও। গতকাল শনিবার হাসপাতালের নতুন ভবনের ছয় ও সাততলার চারটি ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতাল সূত্র বলেছে, গতকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ২২৪ জন। গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৫০ জন। ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এখানে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের নতুন ভবনের ছয়তলার ৫ নম্বর ইউনিটে অন্য সব রোগীর সঙ্গে ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের একজন মাহাদী হাসান। চাঁদপুরের এই মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্লাটিলেট নেমেছে ৬১ হাজারে, শরীর ভীষণ দুর্বল। পাশে তার বাবা-মা ও ছোট ভাই। শয্যা না থাকায় মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা। এ কারণে মশারি টানানো সম্ভব হয়নি। মাহাদীর বাবা মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘দুদিন হতে চলল, শয্যা পেলাম না। মশারিও টানাতে পারছি না। আমি ছোট ব্যবসা করি। টাকাপয়সা কম, তাই প্রাইভেট হাসপাতালেও নিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে।’

একই তলার ৫/৭ ইউনিটে ছয়জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে। তাদের কারও শয্যায় মশারি দেখা যায়নি।

দু-একজনের শয্যায় মশারি ঝুলতে দেখা গেলেও সেগুলো টানানো ছিল না। এই ইউনিটে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোরশেদ আলম। প্লাটিলেট নেমেছে ১৭ হাজারের নিচে। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে চিকিৎসা হচ্ছে সবার। আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নিয়মিত স্যালাইন পাচ্ছি। কিছু টেস্ট বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হচ্ছে।’ মশারি টানাননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গরম অনেক।’

সাততলার ভেতরের দুটি ইউনিট এবং বাইরেও একই চিত্র। ডেঙ্গু রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ায় অন্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা বেশ উদ্বিগ্ন। এক রোগীর স্বজন সোলেমান বলেন, ‘এভাবে আর সব রোগীর সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালের অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হতে পারে।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৫ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘ডেঙ্গু জ্বরে ভর্তি রোগীর মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’ কিন্তু স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে সেই নির্দেশনা মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

এই বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বলেন, ‘আমাদের এখানে অন্য রোগীই বেশি আসে। তাদের চিকিৎসা দিতে হয়। ডেঙ্গুর জন্য আলাদা ইউনিট বা ওয়ার্ড করতে গেলে এই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মশা কম। সব সময় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মশারিও দেওয়া আছে। এখন যারা মেঝে বা বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদের পক্ষে মশারি টানানো সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো মশা কামড় দিলে সেই মশা অন্য কোনো মানুষকে কামড়ালে সুস্থ মানুষটাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। এটা সংক্রমণের প্রাথমিক ধাপ। ডেঙ্গু রোগী এবং এই রোগ বহন করে এমন মশাকে সব সময় আলাদা রাখতে হবে। যেহেতু মশাকে আলাদা রাখা যায় না, তাই রোগীকেই আলাদা রাখতে হয়। এটা না করলে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়বে। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে।’ 

১৫ দিনে আক্রান্ত সাড়ে ১১ হাজার, মৃত্যু ৫৩ 
চলতি মাসের ১৫ দিনে ১১ হাজার ৪৭৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ে ডেঙ্গুতে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২৩ জন। মারা গেছে ৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ১৬৪ জন ঢাকার। বাকি ৪৫৫ জন অন্যান্য বিভাগের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮৮৯ জন। এই সময়ে মারা যাওয়া ৭ জনের মধ্যে ৪ জন ঢাকার, ৩ জন ঢাকার বাইরের। এ নিয়ে দেশে ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০০ জনের মৃত্যু হলো। মৃতদের মধ্যে ৭৮ জনই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত