বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে নেতাদের বাঁধে খাল হলো পুকুর

গনেশ দাস, বগুড়া
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০৯: ১৩

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খালে বাঁধ ও বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে তিন কিলোমিটার খালের বিভিন্ন স্থানে এভাবে মাছ  চাষ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা পানি ব্যবহার করতে পারেন না। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি খনন করেছে পাউবো।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েক নেতা খালটিতে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মানস নদী থেকে একটি সরু খাল বের হয়ে বাঙ্গালী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আশির দশকে সারিয়াকান্দিতে যমুনার বাঁধ ভেঙে গেলে পানির তোড়ে সেই সরু খালটি ভেঙে প্রশস্ত হয়ে যায়। সে সময় থেকেই খালটিতে নিয়মিত পানিপ্রবাহ থাকায় দুই তীরের বাসিন্দারা এই খালে মাছ শিকারের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিতেন। এ ছাড়া এই অঞ্চলে ব্যাপক পাট চাষ হওয়ায় খালের পানিতে সেই পাট জাগ দেওয়া হতো। দীর্ঘদিনে খালের তলদেশ ভরাট এবং বিভিন্ন স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়লে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রথমে পুরো খাল খনন ও সংস্কারের জন্য ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ হয় ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ওই টাকায় কুতুবপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত খাল খনন ও সংস্কার করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, কুতুবপুর থেকে শুরু হয়ে কালারতাইড় হয়ে বাঁশহাটা গ্রামে বাঙ্গালী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালটি খননের পরপরই সেখানে মাছ চাষ শুরু করেন এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁরা বাঁশের চাটাইয়ের সঙ্গে জাল দিয়ে ঘের তৈরি করে প্রথম দিকে মাছ চাষ শুরু করেন। পরে বাঁধ দিয়ে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে খণ্ড খণ্ড এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে মাছ চাষ করেন। খালে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করার ফলে দুই তীরের বাসিন্দা ও তীরবর্তী জমির মালিকদের আর খালের পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান, বিএনপি নেতা আলী ফকির, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মেহেদী হাসান, ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মণ্ডলসহ অনেকেই মাছ চাষ করছেন খাল দখল করে।

কুতুবপুর ফকিরপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, বন্যার সময় খালের মধ্যে তাঁদের ১০ শতাংশ জমি ভেঙে গেছে। অথচ তাঁদের কোনো অধিকার নেই সেই খালের পানি ব্যবহার করার। এখন মাছ চাষ করছেন এলাকার প্রভাবশালীরা।

অভিযোগ সম্পর্কে যুবদল নেতা মাহবুবর রহমান বলেন, খালের দুই পাড়ের যাঁরা জমির মালিক তাঁদের কাছ থেকে বার্ষিক ইজারা নিয়ে তাঁরা মাছ চাষ করছেন। একই দাবি করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মেহেদী হাসানের মাছ চাষ দেখাশোনাকারী ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই এখানে এলাকার লোকজন মাছ চাষ করতেন। তাঁরা যেভাবে জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন, আমরাও একইভাবে ইজারা নিয়েছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, খাল দখল করে মাছ চাষের বিষয়টি নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।

ইউএনও সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘কুতুবপুরে খাল দখলের বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাঁধ অপসারণ করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয় এবং স্থানীয় জনগণ যেন খালের পানি ব্যবহার করতে পারেন, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত