নানা সংকটে ধ্বংসের মুখে টালিশিল্প

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ২২

রপ্তানি জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার ঐতিহ্যবাহী টালিশিল্প। অর্ধশতাধিক কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ।

টালি কারখানামালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রপ্তানিতে জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কারখানামালিকেরা। পাশাপাশি দেশি প্রকল্পে ভারতীয় রুপটালির ব্যবহার এ শিল্পকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে। ফলে দিন দিন কারখানার সংখ্যা কমে গেছে।

সরেজমিন ও সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কলারোয়া মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর গ্রামে টালি কারখানা রয়েছে ৭টি। এক দশক আগে একই এলাকায় টালি কারখানা ছিল ৫১টি। আগে কারখানাগুলোয় কমপক্ষে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করত। বর্তমানে ৭টি কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন সর্বোচ্চ ৩০০।

টালি কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি গোষ্ট চন্দ্র পাল জানান, পূর্বপুরুষদের পেশার ধারাবাহিকতায় এখানকার পালরা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করতেন। এই প্রতিমা তৈরি করে মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকার পাল বংশের লোকেরা সারা দেশে সুনাম কুড়ান। পরবর্তী সময়ে সেই মাটি দিয়ে এখানে নানা নকশার টালি ও টাইলস তৈরি করে বিপ্লব আনেন। দেড় দশক আগে সেই টালিশিল্প এতটাই সুখ্যাতি অর্জন করে, এখানকার টালি ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত রপ্তানি হতো। চাহিদা থাকায় একে একে গড়ে ওঠে ৫১টি ছোট-বড় টালি কারখানা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে নানা জটিলতায় সেই শিল্প শেষ হয়ে গেছে। টালিশি

ল্প ধ্বংসের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা টালি সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করি না। ঢাকার রপ্তানিকারকেরা আমাদের কাছ থেকে টালি কিনে ইতালি, দুবাই, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। সেই রপ্তানিকারকেরা কলারোয়া টালিশিল্প ধ্বংসের জন্য দায়ী। এখানকার কারখানামালিকদের কোটি কোটি টাকা তারা মেরে দিয়েছে। ফলে পুঁজি সংকটে ভুগতে ভুগতে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের টালি এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের ঠিকাদার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে ভারতের রুপটালি ব্যবহার করছেন, যেটা দুর্ভাগ্যজনক।’ তিনি ভারত থেকে টালি আমদানি নিষিদ্ধের দাবি জানান।

এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘টালিশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে।

অনেক সলিসও হয়েছে। কিন্তু টাকা আদায় করা যায়নি। এই অবস্থায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া টালিশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই।’

সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, ‘আমরা টালি কারখানায় জরিপ চালিয়েছি। পুঁজি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানামালিকদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রস্তাব আকারে ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত