Ajker Patrika

আন্দোলনটি ছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আন্দোলনটি ছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার

ঐতিহাসিক সত্য হলো, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের সাফল্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিল যে বাঙালি, সেই বাঙালিই ১৯৪৮ সালে প্রবলভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্ন সামনে এলে বাঙালি নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সবচেয়ে বড় বলে মনে করে এবং তাদের সেই উপলব্ধি এই জাতির বিকাশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই এ কথা বললে ভুল হবে না, আন্দোলনটি ছিল অধিকার প্রতিষ্ঠার।

ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গেলে আমরা ভাষাশহীদদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক, সালামের নামই উচ্চারিত হয় বেশি। এর সঙ্গে এখন ভাষাশহীদ অহিউল্লাহ, সিরাজুদ্দীন, আবদুল আওয়ালের নামও যুক্ত হয়েছে। প্রকৃত অর্থে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ ও ২২ তারিখে গুলিতে মোট কতজন শহীদ হয়েছিলেন, তার সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতিদানের আন্দোলন। বলা দরকার, পাকিস্তানি জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ ছিল পূর্ব বাংলায়, যাদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। উর্দু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেরই মাতৃভাষা ছিল না। কিন্তু সেই ভাষাটিকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার স্পৃহাই বুঝিয়ে দিয়েছিল, পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ কুক্ষিগত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই।

আগের কথা আগে বলি। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতের দুই প্রান্তের আলাদা ভূখণ্ডে জন্ম হয়েছিল যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের, তার দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব ছিল ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী, এই দুই ভূখণ্ডে দুটো আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। তাই দুই অংশে বিভক্ত দেশটির একমাত্র মিল ছিল ধর্মে। দুই অংশের মানুষের মধ্যে ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা কোনো কিছুতেই মিল ছিল না।

পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্মের আগে থেকেই কিন্তু ভাষা-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের ১৭ মের কথা বলা যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুকাল আগে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সে সময়ের সভাপতি চৌধুরী খালিকুজ্জামান ছিলেন মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল মোছলেমিনের বার্ষিক অধিবেশনের সভাপতি। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা।’

১৯৪৭ সালের ২২ জুন লেখক-সাংবাদিক আবদুল হক দৈনিক ইত্তেহাদে লিখেছিলেন ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি প্রবন্ধ। তাঁর আরেকটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক আজাদে একই বছরের ২৯ জুন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘পুরো পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা।’

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য জিয়াউদ্দিনও সে বছরের জুলাই মাসে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে অবস্থান নেন। আবদুল হক দৈনিক ইত্তেহাদে ২৭ জুলাই লেখেন, ‘উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে’ এবং ৩ আগস্ট সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় লেখেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামে আরও দুটি প্রবন্ধ।

তারই সূত্র ধরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মাহবুব জামাল জাহেদী, ড. কাজী মোতাহার হোসেন লেখালেখি করেন।

১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট বসেছিল পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন। সে অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৪ আগস্ট অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে পাকিস্তানের জাতির জনক জিন্নাহর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। জিন্নাহ তখন হন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। জিন্নাহ সেদিন তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, এখন থেকে মুসলমান মুসলমান থাকবে না, হিন্দু হিন্দু থাকবে না, সবাই হবে পাকিস্তানি।

একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ইঙ্গিত ছিল সে বক্তৃতায়। কিন্তু ঘটনার চাকা কোন দিকে গড়াল এরপর, সেটাই এখন দেখব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত