বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ০০

ডেঙ্গু ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা, বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোগীদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি থাকায় হাসপাতালে দেরিতে আসছে। এ কারণে মৃত্যু বাড়ছে। নগরবাসী মশকনিধন কার্যক্রমে স্থবিরতার অভিযোগ করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, মশকনির্ধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কীটতত্ত্ববিদদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জন মারা গেছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৬৩ জন হলো। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের ৩০ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৫২ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৯৩৮ জনে। এর মধ্যে সদ্য বিদায় নেওয়া সেপ্টেম্বরের ৩০ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭ জন রোগী।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য অধিশাখার যুগ্ম সচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা বেশি হওয়ার কারণ, মানুষ দেরিতে হাসপাতালে আসছে। এ ছাড়া যারা আসছে, তারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেয়ররা গা ঢাকা দিয়েছেন। এতে মশকনিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় নিয়মিত মশার প্রজনন কিংবা উড়ন্ত মশা মারার কার্যক্রম বন্ধ। তবে সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা মশকনিধন কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত বছরের সঙ্গে এ বছরের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলনা করলেই এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়। অধিদপ্তরের ভাষ্য, গত বছরের শুরু থেকে ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৮৯৩ জনের। এ বছর একই সময় ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে ১৫৮ জনের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৮টি স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। এতে ৭ হাজার ১৯৫টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও লার্ভিসাইড স্প্রে করা হয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৮টি স্থাপনায়। তবে কাগজে-কলমে স্প্রের তথ্য থাকলেও বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই বলে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আজিমপুরের বাসিন্দা ফাইজান আহমেদ বলেন, গত এক সপ্তাহে এলাকায় মশকনিধন কার্যক্রম তাঁর চোখে পড়েনি। তবে গত সপ্তাহে একদল যুবককে মশা মারার যন্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখেছেন। মশা ও প্রজননস্থল ধ্বংসে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা কার্যকর নয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।    

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত অনেক কম। মশকনিধন কার্যক্রমে ঢাকার দুই সিটিতে ১০ জন কীটতত্ত্ববিদকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে মশকনিধন ও প্রজননস্থল ধ্বংস করা হবে।

মশকনিধন ও প্রজননস্থল ধ্বংসে কীটতত্ত্ববিদদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব গবেষক দীর্ঘদিন ধরে মশক ও কীট নিয়ে গবেষণা করছেন, যাঁদের এ ব্যাপারে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে, তাঁদের সম্পৃক্ত করা দরকার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত