প্রতাপ ভানু মেহতা
সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখাটা নরেন্দ্র মোদি সরকারের জম্মু ও কাশ্মীর নীতির ক্ষেত্রে একটি বিশাল আইনি বিজয়। এই রায়ের মাধ্যমে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন, ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি বা আইনগত জটিলতা জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতীয় গণরাজ্যের সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এই রায় সাধারণ মানুষ কীভাবে নেবে, তার ওপরই নির্ভর করবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের ভবিষ্যৎ গতিপথ পরিবর্তনের ধারা।
মোদি সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত কি জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর আরেকটি বিশ্বাসঘাতকতার অধ্যায়, যার ওপর সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর লেগে গেছে? সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থান কি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের ওপরও বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে?
নাকি এটিই ৩৭০ ধারা বাতিলের আগের ‘না ঘরকা না ঘাটকা’র চেয়ে উন্নত, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সংবিধানের মধ্যে একীভূত করার পথ? কিন্তু ক্ষুব্ধ নীরবতা কি জম্মু ও কাশ্মীরে চূড়ান্ত বিজয়ের সেই ইঙ্গিত দেয়? নাকি বিচারপতি কাউলের অভূতপূর্ব ও আন্তরিক আবেদনের কথাই ঠিক, এটি জম্মু ও কাশ্মীরকে সত্য ও সমঝোতার পথে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ দেবে?
জম্মু ও কাশ্মীর মানেই বিদ্রূপ আর বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস
জম্মু ও কাশ্মীরের অভিজ্ঞতা সব সময়ই করুণ। চুক্তি, আইন, প্রতিশ্রুতি ও পদ্ধতিগত রীতি-নীতিগুলো কঠোরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে সব সময়। এসব বিষয় অন্য যেখানে যুক্ত, সেখানে কিন্তু এগুলোকে এতটা অপ্রাসঙ্গিক করা হয়নি। এটি বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বিচারিতা, দুর্ভোগ ও সহিংসতার ইতিহাস।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানসমর্থিত ভাড়াটে সেনারা কাশ্মীরে ঢোকার সেই দিন থেকেই রাজনৈতিক বিকল্প এবং আইনি প্রক্রিয়া লাগাতার পরিবর্তনের সঙ্গে বাস্তবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে আসছে।
বছরের পর বছর ধরে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষা এবং এটিকে আরও স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য প্রণীত ৩৭০ ধারা কিছুই করতে পারেনি। কাশ্মীর নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড, স্থানীয় বিদ্রোহ, পাকিস্তানের উসকানিতে সৃষ্ট সহিংসতা—সব মিলিয়ে কাশ্মীরের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অংশে গণতন্ত্র বা মানবাধিকার—কোনোটাই রক্ষিত হয়নি। এটি একটি রাজনৈতিক সংকটও ছিল, যা তার ওই অবস্থাকে না সহ্য করতে পারে, আবার না পারে এটিকে কাটিয়ে উঠতে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ছিল, পরবর্তী সময়ে সেটাই মুক্তির উপায় হিসেবে ঐতিহাসিক বোঝা হয়ে ওঠে।
কাশ্মীর: পরিচয়ের বিনাশ, সত্যের জয়
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করার মাধ্যমে কাশ্মীরের পরিচয় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত নিয়মের সঙ্গে সত্যের ভারসাম্য রাখতে হয়। কিন্তু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে, সত্য প্রায়শই নিয়মে পরিণত হয়।
২০১৯ সালে ভারত সরকার দুটি সংবিধানিক আদেশ (২৭২ ও ২৭৩) ৩৭০ ধারা বাতিল করে এবং রাজ্য পুনর্গঠন করে কাশ্মীরের মর্যাদা কমিয়ে দেয়। ফলে সত্য আবার বদলে গেল। সুপ্রিম কোর্টও এই রায়ে আবার বাধ্য হয়েছেন নিয়ম পালনে। ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত উল্টে যাবে এমন রায় কেউই আশা করেনি। এই ঐতিহাসিক মামলা অস্পষ্ট এবং বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি ছিল অত্যন্ত দাপুটে। ১৯৬০-এর দশক থেকেই ৩৭০ ধারা কার্যত ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সব সময় প্রশ্ন ছিল কীভাবে এটি করা যায়—জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো উপযুক্ত সংস্থার স্পষ্ট সম্মতি ছাড়া এটি করা যেতে পারে কি না? এবং অসাম্যে ভরা কোনো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে কি জম্মু ও কাশ্মীরের ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতি ন্যায়বিচার করা সম্ভব?
আদালত বেশ জোর দিয়ে বলেছেন যে ৩৭০ ধারাটি অস্থায়ী প্রকৃতির হওয়ার কথা ছিল; জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার সম্মতি প্রয়োজন ছিল না। এটি আরও জোরালোভাবে বলেছে যে ভারতের গোটা সংবিধানই ওই রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এটি করতে গিয়ে আদালত তাঁর সাধারণ জাদুর খেল দেখিয়েছেন।
সাংবিধানিকভাবে আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা কিছুটা স্বস্তিদায়ক যে সাংবিধানিক আদেশ ২৭২ ও ৩৬৭ ধারার সংশোধন ৩৭০ ধারা সংশোধনের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি; কারণ, এটি সরকারকে সংবিধানের একটি ধারা সংশোধন করে অন্য ধারায় পেছনের দরজা দিয়ে সংশোধনের ব্যবস্থা করা থেকে বিরত করে। কোনো ধারা যদি সংশোধন করতে হয়, তাহলে সংশোধনটি অবশ্যই সেই ধারার জন্য নির্দিষ্ট হতে হবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও একই ধরনের ভেলকি দেখানো হয়েছে: জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পুনর্গঠন এবং এর মর্যাদা হ্রাস করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা। এই পুনর্গঠন একটি নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। সংবিধানের ৩ নম্বর ধারা রাজ্যের সীমানা, তাদের নাম, এমনকি পরিচয় পরিবর্তনের অনুমতি দেয়। কিন্তু এটি কোনো রাজ্যের মর্যাদা পরিবর্তন এবং এটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবনমন করার অনুমতি দেয় না।
আদালত কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার একটি সময়হীন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এভাবে আইনবিদ্যায় নতুন একটি বিষয় উদ্ভাবিত হয়েছে: আপনি নিশ্চিতভাবে অসাংবিধানিক জেনেও কিছু করতে পারেন, সেই কাজের সমস্ত বাস্তব পরিণতি ভোগ করতে পারেন এবং তারপরে অনির্দিষ্ট তারিখের কথা বলে আনুষ্ঠানিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারেন।
৩৭০ ধারা রদ করার পক্ষে যুক্তি তোলা যেতে পারে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯; যা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন অবনতির প্রতিনিধিত্ব করে। আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতকে এই বলে শেষ করতে হয়েছে: ‘ভারতের সংবিধান পুরোপুরি জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নয়।’ সত্যিই বড় অদ্ভুত একটি ঘটনা।
রায়ের পরিশিষ্টে যুক্ত বিচারপতি কাউলের সত্য ও সমঝোতা কমিশনের জন্য অভূতপূর্ব আহ্বান বিতর্কিত হতে পারে। কিন্তু তিনি জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যাকে কাগুজে বিষয়ের বাইরে দেখতে চেয়েছিলেন, যা সঠিক ছিল। রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের সঙ্গে একটি সৎ বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে দাবি করতে তিনি সঠিক বলেছেন। সম্প্রদায়গত পক্ষপাতের কারণে আমাদের সহানুভূতি বড়ই একতরফা হয়ে যায়। এ ধরনের অনুভূতি আমাদের প্রায়ই সহিংসতা ও প্রকৃত রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় বড় বাধা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরির মতো দূরবর্তী কোনো রাজনৈতিক শক্তি আছে বলেও মনে হয় না।
একদিক থেকে, ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি নিজের মতো করে সমাধান অসম্ভব জেনেও একটি প্রচেষ্টা। আমরা দেখব, এটি সফল হয় কি না। ভারতীয় রাজনীতি নিজেই বদলাচ্ছে। কাশ্মীর নিয়ে সরকারের নতুন প্রয়াসকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কাউকে এই বলে আশ্বস্ত করছে না যে এটা ভারতীয় সংবিধানের সংহতিকেই তুলে ধরেছে, যার কথা সে বলে।
প্রতাপ ভানু মেহতা, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখাটা নরেন্দ্র মোদি সরকারের জম্মু ও কাশ্মীর নীতির ক্ষেত্রে একটি বিশাল আইনি বিজয়। এই রায়ের মাধ্যমে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন, ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি বা আইনগত জটিলতা জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতীয় গণরাজ্যের সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এই রায় সাধারণ মানুষ কীভাবে নেবে, তার ওপরই নির্ভর করবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের ভবিষ্যৎ গতিপথ পরিবর্তনের ধারা।
মোদি সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত কি জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর আরেকটি বিশ্বাসঘাতকতার অধ্যায়, যার ওপর সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর লেগে গেছে? সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থান কি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের ওপরও বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে?
নাকি এটিই ৩৭০ ধারা বাতিলের আগের ‘না ঘরকা না ঘাটকা’র চেয়ে উন্নত, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সংবিধানের মধ্যে একীভূত করার পথ? কিন্তু ক্ষুব্ধ নীরবতা কি জম্মু ও কাশ্মীরে চূড়ান্ত বিজয়ের সেই ইঙ্গিত দেয়? নাকি বিচারপতি কাউলের অভূতপূর্ব ও আন্তরিক আবেদনের কথাই ঠিক, এটি জম্মু ও কাশ্মীরকে সত্য ও সমঝোতার পথে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ দেবে?
জম্মু ও কাশ্মীর মানেই বিদ্রূপ আর বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস
জম্মু ও কাশ্মীরের অভিজ্ঞতা সব সময়ই করুণ। চুক্তি, আইন, প্রতিশ্রুতি ও পদ্ধতিগত রীতি-নীতিগুলো কঠোরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে সব সময়। এসব বিষয় অন্য যেখানে যুক্ত, সেখানে কিন্তু এগুলোকে এতটা অপ্রাসঙ্গিক করা হয়নি। এটি বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বিচারিতা, দুর্ভোগ ও সহিংসতার ইতিহাস।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানসমর্থিত ভাড়াটে সেনারা কাশ্মীরে ঢোকার সেই দিন থেকেই রাজনৈতিক বিকল্প এবং আইনি প্রক্রিয়া লাগাতার পরিবর্তনের সঙ্গে বাস্তবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে আসছে।
বছরের পর বছর ধরে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষা এবং এটিকে আরও স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য প্রণীত ৩৭০ ধারা কিছুই করতে পারেনি। কাশ্মীর নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড, স্থানীয় বিদ্রোহ, পাকিস্তানের উসকানিতে সৃষ্ট সহিংসতা—সব মিলিয়ে কাশ্মীরের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অংশে গণতন্ত্র বা মানবাধিকার—কোনোটাই রক্ষিত হয়নি। এটি একটি রাজনৈতিক সংকটও ছিল, যা তার ওই অবস্থাকে না সহ্য করতে পারে, আবার না পারে এটিকে কাটিয়ে উঠতে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ছিল, পরবর্তী সময়ে সেটাই মুক্তির উপায় হিসেবে ঐতিহাসিক বোঝা হয়ে ওঠে।
কাশ্মীর: পরিচয়ের বিনাশ, সত্যের জয়
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করার মাধ্যমে কাশ্মীরের পরিচয় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত নিয়মের সঙ্গে সত্যের ভারসাম্য রাখতে হয়। কিন্তু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে, সত্য প্রায়শই নিয়মে পরিণত হয়।
২০১৯ সালে ভারত সরকার দুটি সংবিধানিক আদেশ (২৭২ ও ২৭৩) ৩৭০ ধারা বাতিল করে এবং রাজ্য পুনর্গঠন করে কাশ্মীরের মর্যাদা কমিয়ে দেয়। ফলে সত্য আবার বদলে গেল। সুপ্রিম কোর্টও এই রায়ে আবার বাধ্য হয়েছেন নিয়ম পালনে। ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত উল্টে যাবে এমন রায় কেউই আশা করেনি। এই ঐতিহাসিক মামলা অস্পষ্ট এবং বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি ছিল অত্যন্ত দাপুটে। ১৯৬০-এর দশক থেকেই ৩৭০ ধারা কার্যত ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সব সময় প্রশ্ন ছিল কীভাবে এটি করা যায়—জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো উপযুক্ত সংস্থার স্পষ্ট সম্মতি ছাড়া এটি করা যেতে পারে কি না? এবং অসাম্যে ভরা কোনো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে কি জম্মু ও কাশ্মীরের ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতি ন্যায়বিচার করা সম্ভব?
আদালত বেশ জোর দিয়ে বলেছেন যে ৩৭০ ধারাটি অস্থায়ী প্রকৃতির হওয়ার কথা ছিল; জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার সম্মতি প্রয়োজন ছিল না। এটি আরও জোরালোভাবে বলেছে যে ভারতের গোটা সংবিধানই ওই রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এটি করতে গিয়ে আদালত তাঁর সাধারণ জাদুর খেল দেখিয়েছেন।
সাংবিধানিকভাবে আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা কিছুটা স্বস্তিদায়ক যে সাংবিধানিক আদেশ ২৭২ ও ৩৬৭ ধারার সংশোধন ৩৭০ ধারা সংশোধনের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি; কারণ, এটি সরকারকে সংবিধানের একটি ধারা সংশোধন করে অন্য ধারায় পেছনের দরজা দিয়ে সংশোধনের ব্যবস্থা করা থেকে বিরত করে। কোনো ধারা যদি সংশোধন করতে হয়, তাহলে সংশোধনটি অবশ্যই সেই ধারার জন্য নির্দিষ্ট হতে হবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও একই ধরনের ভেলকি দেখানো হয়েছে: জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পুনর্গঠন এবং এর মর্যাদা হ্রাস করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা। এই পুনর্গঠন একটি নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। সংবিধানের ৩ নম্বর ধারা রাজ্যের সীমানা, তাদের নাম, এমনকি পরিচয় পরিবর্তনের অনুমতি দেয়। কিন্তু এটি কোনো রাজ্যের মর্যাদা পরিবর্তন এবং এটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবনমন করার অনুমতি দেয় না।
আদালত কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার একটি সময়হীন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এভাবে আইনবিদ্যায় নতুন একটি বিষয় উদ্ভাবিত হয়েছে: আপনি নিশ্চিতভাবে অসাংবিধানিক জেনেও কিছু করতে পারেন, সেই কাজের সমস্ত বাস্তব পরিণতি ভোগ করতে পারেন এবং তারপরে অনির্দিষ্ট তারিখের কথা বলে আনুষ্ঠানিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারেন।
৩৭০ ধারা রদ করার পক্ষে যুক্তি তোলা যেতে পারে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯; যা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন অবনতির প্রতিনিধিত্ব করে। আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতকে এই বলে শেষ করতে হয়েছে: ‘ভারতের সংবিধান পুরোপুরি জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নয়।’ সত্যিই বড় অদ্ভুত একটি ঘটনা।
রায়ের পরিশিষ্টে যুক্ত বিচারপতি কাউলের সত্য ও সমঝোতা কমিশনের জন্য অভূতপূর্ব আহ্বান বিতর্কিত হতে পারে। কিন্তু তিনি জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যাকে কাগুজে বিষয়ের বাইরে দেখতে চেয়েছিলেন, যা সঠিক ছিল। রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের সঙ্গে একটি সৎ বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে দাবি করতে তিনি সঠিক বলেছেন। সম্প্রদায়গত পক্ষপাতের কারণে আমাদের সহানুভূতি বড়ই একতরফা হয়ে যায়। এ ধরনের অনুভূতি আমাদের প্রায়ই সহিংসতা ও প্রকৃত রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় বড় বাধা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরির মতো দূরবর্তী কোনো রাজনৈতিক শক্তি আছে বলেও মনে হয় না।
একদিক থেকে, ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি নিজের মতো করে সমাধান অসম্ভব জেনেও একটি প্রচেষ্টা। আমরা দেখব, এটি সফল হয় কি না। ভারতীয় রাজনীতি নিজেই বদলাচ্ছে। কাশ্মীর নিয়ে সরকারের নতুন প্রয়াসকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কাউকে এই বলে আশ্বস্ত করছে না যে এটা ভারতীয় সংবিধানের সংহতিকেই তুলে ধরেছে, যার কথা সে বলে।
প্রতাপ ভানু মেহতা, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে