মর্জিনা ও আলীবাবা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ০৩

একজন গৃহকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৩ কোটি টাকা! একজন সর্বহারা মানুষের টাকা থাকতে পারবে না, এ কথা বলছি না। বরং রাষ্ট্রচিন্তা যাঁরা করেন, তাঁরা সব সময়ই শোষিত মানুষের মুক্তির স্বপ্নই দেখেন। দেশ ও দশের সেবা করাই তো রাজনীতির ধর্ম। কিন্তু আমাদের দেশে গণতন্ত্র চর্চার নামে জনগণের সেবার চেয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার সাধনাকেই প্রবল হতে দেখেছি। তাই, যখন একজন গৃহকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকার দেখা মেলে, তখন বিস্মিত হতে হয়।

বিস্ময়টি মনে আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় তখন, যখন জানা যায় এই ৩ কোটি টাকার মালিকটি এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদের গৃহকর্মী। আর তখনই ব্যাংক দখলসহ এই গ্রুপের ব্যবসায়িক নানা অপকর্মের বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। গৃহকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকা থাকার ঘটনাটি তখন বিশ্লেষণ করা সহজ হয়ে পড়ে।

এস আলম গ্রুপ কী পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ আছে, সে কথা প্রায় সবার জানা। যাঁরা জানেন না, কিংবা যাঁরা টাকার পরিমাণটা অনুধাবন করতে পারেন না, তাঁদের জন্য বলি, ৯৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে। এবার গৃহকর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকার পরিমাণটা দেখুন। মনে হবে, এ তো কোনো টাকাই নয়! মাত্র ৩ কোটি টাকা!

৩ কোটি টাকার মালিক এই গৃহকর্মীর নাম মর্জিনা। তাঁকে খাটো করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এই টাকা গৃহকর্ম বাবদ তিনি আয় করেছেন, এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কোনো না কোনো দুরভিসন্ধির কারণেই তাঁর অ্যাকাউন্টে এই টাকা ঢুকেছে বলে ধারণা করা যায়। একটি ব্যাংকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে ২২টি এফডিআর করা হলো মর্জিনার নামে, এটা কি কোনো সন্দেহের জন্ম দেয় না? আরেকটি ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে ১ কোটি ১০ হাজার টাকাইবা তাঁর নামে থাকে কী করে?

আরব্যরজনীখ্যাত ‘আলীবাবা ও ৪০ চোর’ গল্পটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিল মর্জিনা নামটি। মর্জিনা তাঁর অপূর্ব ছলাকলায় মুগ্ধ করেন ডাকাতের দলকে এবং তাঁরই সুবাদে ডাকাতদের হত্যা করে আলীবাবাকে বাঁচিয়ে দেন। আমাদের এস আলম-কাণ্ডেও সে রকম একটা পরিণতির কথাই কি ভাবা হয়েছিল? সেটা হতে পারত, যদি এস আলম গ্রুপ আলীবাবার মতো সৎমানুষ হতেন এবং ৪০ চোর (আসলে ডাকাত) হতো অন্য কেউ।

মর্জিনা আর আলীবাবার গল্পটি এখানে খাটল না শুধু এ কারণেই যে যিনি আলীবাবা হতে পারতেন, তিনিই ৪০ চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই মর্জিনার অ্যাকাউন্টে রাখা সেই টাকাও অসৎ পথে আয় করা টাকা বলে মনে করলে ভুল হবে না।

নাহ! একবিংশ শতাব্দীর আলীবাবা হতে পারল না এস আলম গ্রুপ। মাঝখান থেকে একজন নিরীহ মর্জিনা পড়ে গেলেন সংকটে!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত