তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার

আবদুল আযীয কাসেমি
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৫
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ০৮

মানুষ আল্লাহ তাআলার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষের শ্রেণিভেদ আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের দুজন থেকে অনেক নারী-পুরুষ আল্লাহ তাআলা ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা: ১) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মেয়ে দান করেন আর যাকে ইচ্ছা ছেলে।’ (সুরা শুরা: ৪৯) এ দুই আয়াত থেকে পরিষ্কার অনুমিত হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুভাগে ভাগ করেছেন। এমন কাউকে বানাননি, যার মধ্যে পুরুষত্ব ও নারীত্ব সমানভাবে বিদ্যমান থাকবে। তাই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ দুই শ্রেণির মানুষের বিধানই উল্লেখ করেছেন। (আল-মাবসুত লি-সারাখসি) 
মানুষ মৌলিকভাবে দুভাগে বিভক্ত—পুরুষ ও নারী। ইসলামের দৃষ্টিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আলাদা কোনো মানবশ্রেণি নয়; বরং তারা নারী বা পুরুষেরই অন্তর্ভুক্ত। ইসলামিক স্কলারগণ হিজড়া তথা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। 

১. পুরুষ হিজড়া। অর্থাৎ যেসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে পুরুষ হওয়ার প্রবণতাই প্রবল। যেমন কারও পুরুষাঙ্গ আছে, দাড়ি-গোঁফ আছে, স্বপ্নদোষ হয়, যৌনমিলনের সক্ষমতা আছে ইত্যাদি। এ শ্রেণির মানুষের নারীসুলভ কিছু লক্ষণ দেখা গেলেও পুরুষই গণ্য করা হবে। 

২. নারী হিজড়া। অর্থাৎ যাদের মধ্যে নারী হওয়ার আলামতই প্রবল। যেমন তাদের ঋতুস্রাব হয়, যোনি থাকে, গর্ভে সন্তান আসে ইত্যাদি। এদের মধ্যে পুরুষসুলভ কোনো আলামত দেখা গেলেও প্রবলতার বিবেচনায় তারা নারী হিসেবেই গণ্য হবে।

এ দুই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সাধারণ নারী-পুরুষের মতোই আচরণ করা হবে। শরিয়তের বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে তারা নিজ নিজ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে। স্বাভাবিক সুস্থ নারী-পুরুষের জন্য শরিয়ত যেসব অধিকার রেখেছে, সেসব তাদের জন্যও বরাদ্দ থাকবে। তাদের সব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. জটিল হিজড়া। অর্থাৎ যাদের পুরুষ বা নারী সুনির্দিষ্টভাবে কোনো শ্রেণিতে ফেলা যায় না। তাদের মধ্যে উভয় ধরনের লক্ষণই সমানভাবে দেখা যায়। যেমন কারও পুরুষাঙ্গ আছে, আবার যোনিও আছে; উভয় দিকেই প্রস্রাব হয়। ঋতুস্রাবও দেখা যায়, আবার দাড়ি-গোঁফ ও পুরুষসুলভ কণ্ঠও দেখা যায়। এদের সুনির্দিষ্টভাবে কোনো এক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা জটিল হয়ে পড়ে।

স্কলারগণ এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। যেমন ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে তাদের নারীদের মতো ইবাদত সম্পাদন করতে হয়। হজের সময় নারীদের মতো ইহরাম পরতে হয়। তাদের ওপর জুমা ফরজ হয় না। গাইরে মাহরাম পুরুষদের সঙ্গে পর্দা করতে হয়। মিরাসের ক্ষেত্রে তাদের তুলনামূলক কম অংশটি প্রদান করা হয়। অর্থাৎ তাকে পুরুষ ধরা হলে যদি তার অংশ বেশি হয়, তবে তাকে নারী ধরে হিসাব করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি নারী হিসাব করলে তার অংশ বেশি হয়ে যায় তবে তাকে পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করে মিরাস দিতে হবে। (আল-মাবসুত লি-সারাখসি)

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আমাদের সমাজের বাইরের কেউ নয়। তাদের সব মানবিক অধিকার রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাদের সমাজচ্যুত করা ইসলাম অনুমোদন করে না। এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তারা অধিকারবঞ্চিত হলে সরকারের দায়িত্ব হলো—তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা, তাদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন করা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এতে করে তৃতীয় লিঙ্গকে কেন্দ্রকে করে সমাজে চলমান বিশৃঙ্খলা, অপরাধ ও অমানবিকতার পথ রুদ্ধ হবে। 

লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত