কুলাউড়ার ৪ রেলস্টেশন এখন ‘ভুতুড়ে বাড়ি’

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ১০: ৩২

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চারটি রেলওয়ে স্টেশন দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি ১৮ মাস ধরে, বাকিগুলো এক যুগের বেশি সময় বন্ধ আছে। রেলস্টেশনগুলোর অবস্থান সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শমশেরনগর-কুলাউড়ার মধ্যবর্তী স্থানে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের দূরের স্টেশনে গিয়ে রেলসেবা নিতে হচ্ছে। এতে তাঁরা ভোগান্তির  শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শমশেরনগর-কুলাউড়ার মধ্যবর্তী স্থানে মনু, টিলাগাঁও, ভাটেরা ও লংলা রেলস্টেশন বন্ধ রয়েছে। স্টেশনমাস্টারের সংকটে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ রয়েছে লংলা রেলস্টেশন। এই স্টেশনের মাস্টারকে মোগলাবাজার স্টেশনে বদলি করা হয়েছে। বাকি তিনটি স্টেশনমাস্টার, সিগন্যাল, অবকাঠামো ও লাইনের সংকটে এক যুগের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে। এসব রেলস্টেশনে শুধু মেইল ট্রেন ১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের লংলা, ভাটেরা, টিলাগাঁও ও মনু স্টেশনগুলো জনমানবহীন নীরব ভূতের বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ঝোপজঙ্গলে ভরে গেছে স্থানগুলো। ব্রিটিশ আমলের তৈরি স্থাপনাগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো স্টেশনে একাধিক লাইন থাকলেও ট্রেন থামে না। নেই সিগন্যাল বাতি। আবার কোনো কোনো স্টেশনে একটিমাত্র লাইন রয়েছে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে রেলের ভূমি দখল করে নিয়েছেন। এসব স্টেশনে সরাসরি (ওয়ানওয়ে) লাইন করে দেওয়া হয়েছে এখন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্টেশনগুলো চালু না থাকায় তাঁরা বাসে করে দূরবর্তী গন্তব্যে চলাচল করেন।

টিলাগাঁও স্টেশন এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা নোয়াব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখেছি এই স্টেশন আগে চালু ছিল। এখানে নিয়মিত ট্রেন থামত। ১৫ বছর ধরে মেইল ছাড়া আর কোনো ট্রেন থামে না।’

মনু স্টেশনসংলগ্ন বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, এখানে অনেক দিন  ধরে কোনো ট্রেন থামে না। নামেই শুধু স্টেশন। একটা মাত্র লাইন আছে।  আর সিগন্যাল বাতি বা অন্য কোনো কিছুই নেই।

এদিকে এসব স্টেশন বন্ধ থাকায় ক্রসিং সিস্টেমও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ওয়ানওয়ে লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। সবচেয়ে বেশি ক্রসিং বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আন্তনগর ট্রেনগুলোকে। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় যেকোনো ট্রেন শমশেরনগর থেকে ছেড়ে এলে এবং কুলাউড়া থেকে ছেড়ে যাওয়া যেকোনো ট্রেনকে মধ্যবর্তী স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ক্রসিং দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শমশেরনগর অথবা কুলাউড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে ক্রসিং নিতে হয়।

লংলা স্টেশনের সাবেক মাস্টার রজত রায় বলেন, ‘আমাকে প্রায় ১৮ মাস আগে এই স্টেশন থেকে বদলি করে সিলেটের মোগলাবাজার স্টেশনে আনা হয়েছে। এরপর থেকে লংলা স্টেশন বন্ধ রয়েছে।’

কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার রুমান আহমেদ বলেন, ‘শুনেছি মাস্টার সংকটের কারণে বেশ কিছু স্টেশন বন্ধ রয়েছে। শমশেরনগর-কুলাউড়া লাইনটি ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু স্টেশনে সিগন্যাল বাতি ও লাইনে সমস্যা রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত