পুলিশ ফাঁড়ি এখন মার্কেট

‘রিপন দে, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১১: ০০

সাইনবোর্ডে লেখা পুলিশ ফাঁড়ি। তবে সেখানে নেই ফাঁড়ি কিংবা পুলিশের সেবাদাতা বা গ্রহীতার অস্তিত্ব। আছে কয়েকটি দোকান।সেগুলোতে বিক্রি হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এমন ফাঁড়ির দেখা মিলবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের পুরাতন বাজারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল থানার পাশাপাশি শহরের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুরাতন বাজারে ছিল একটি পুলিশ ফাঁড়ি। সেই ফাঁড়ি এখন মার্কেট। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে একেকটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মোট ১৫টি দোকান রয়েছে মার্কেটটিতে। তবে সেই টাকা সরকারি কোন কোষাগারে জমা হয়েছে, তার কোনো হদিস দিতে পারেননি জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা। তথ্য অধিকারে আবেদনের উত্তরে জানানো হয়, এই স্থাপনাগুলো থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ জেলা পুলিশের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

জেলা পুলিশের অর্গানোগ্রামে শ্রীমঙ্গল শহর পুলিশ ফাঁড়ি এখনো আছে। সেই পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে একজন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) তিনজন কনস্টেবলের পদায়নও রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই এসআই ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় অবস্থান করে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মাণাধীন দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া তোলার কাজ করেন।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মৌলভীবাজার থেকে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া এই জেলায় যোগদানের পর পুলিশ ফাঁড়িতে এই মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো প্রকার অনুমোদন ও দরপত্র ছাড়াই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে এই মার্কেট নির্মাণ করেন। তবে মার্কেটের নামে কত টাকা অনুদান নিয়েছেন এবং কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব মেলেনি।

ফাঁড়িকে মার্কেট রূপান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, সেটা জানাতে পারেননি জেলা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পুলিশের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে কানাঘুষা আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, শ্রীমঙ্গল ফাঁড়ির নামে একজন পরিদর্শক পদায়ন হওয়ার কথা। শহর অনেক বড় হওয়ায় এখানে ফাঁড়ি খুব প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল সার্কেল অফিসের কোনো নিজস্ব ভবন নেই।

 আবাসন সমস্যা রয়েছে পুলিশের। ফাঁড়ি অপ্রয়োজনীয় মনে হলে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন নিয়ে এই জায়গাটিতে প্রয়োজনে আবাসনের জন্য বা সার্কেল অফিস করা যেত।

দেখা গেছে, আগের শ্রীমঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির জমিতে পাকা ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক বরাদ্দ নিয়ে কয়েকজন ব্যবসা পরিচালনাও করছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁরা ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা আগাম দিয়ে একেকটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তাঁদের অগ্রিমের টাকা থেকে ৮০ শতাংশ ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে কাটা হবে।

এই মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়েছেন মিটন পাল। তিনি বলেন, ‘আমি অগ্রিম টাকা দিয়েছি। সেই টাকার ৮০ শতাংশ প্রতি মাসে ভাড়া হিসেবে কাটা হবে এবং বাকি ২০ শতাংশ প্রতি মাসে দিই।’

জানা গেছে, এই ফাঁড়িতে কাগজ-কলমে কর্মরত আছেন এসআই জিয়াউর রহমান। তাঁর বসার কোনো জায়গা না থাকলেও তিনি মার্কেটের ভাড়া তোলেন। জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে বদলি হয়ে গেছি এখান থেকে। এর আগে ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলাম। ভাড়া আমি তুলি না। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা খুরশেদ আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা কত টাকা অগ্রিম হিসেবে জমা দিয়েছেন এবং কোন অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে তাঁরা মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দেন।’

ফাঁড়ি থাকলে শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সহজ হতো কি না জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গির হোসেন সরদার বলেন, ‘ওপর মহলের সিদ্ধান্ত যেহেতু, তাই এ নিয়ে কিছু বলতেছি না। তবে চাইলে মার্কেটের পেছনে জায়গা আছে এবং থানাতেই প্রচুর জায়গা আছে, সেখানেও করা যাবে।’

বর্তমানে ফাঁড়িতে কাগজ-কলমে কেউ কর্মরত আছেন কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এসআই একজন ছিলেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে আছেন। তবে কনস্টেবল কর্মরত আছেন ফাঁড়িতে।’ তবে কয়জন কনস্টেবল আছেন তিনি সে তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি। 
এই বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। তবে ফাঁড়ির বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারছি না। যেহেতু আমি নতুন যোগদান করেছি তাই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত