গণকবর চিহ্নিতে উদ্যোগ নেই

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৫
Thumbnail image

বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। অথচ এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ গণকবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোও পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়।

কোনোটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অরক্ষিত থাকায় বখাটেদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। আবার কোথাও গণকবরে বসেছে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। জেলার গণকবর সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগে নেই।

এদিকে, জেলায় কতটি গণকবর বা বধ্যভূমি আছে তার কোনো হিসাবই নেই জেলা প্রশাসনের কাছে।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে মোট ২০৯টি বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় সন্ধান মিলেছে মাত্র একটি গণকবরের। এটি হলো বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিল বধ্যভূমি।

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যমতে, হবিগঞ্জে অসংখ্য গণকবরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০টির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ সব বধ্যভূমিতে অসংখ্য মাথার খুলি, শরীরের হাড় ও চুল পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামবাসীর আন্তরিকতার কারণে সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র তিনটি বধ্যভূমি। সেগুলো হলো-বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি বধ্যভূমি, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর বধ্যভূমি ও চুনারুঘাট উপজেলার লালচাঁন্দ চা বাগান বধ্যভূমি।

মাকালকান্দি ও কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কৃষ্ণপুর বধ্যভূমি ও চলতি বছর মাকালকান্দি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভও। তবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাহুবলের ফয়জাবাদ হিল বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলেও সারা বছর সেটি অরক্ষিত থাকে। যে কারণে সেই বধ্যভূমি এখন বখাটেদের অভয়াশ্রম।

শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমিতে দীর্ঘদিন সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ছিল। যদিও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টায় ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এক বছর আগে সিএনজি স্ট্যান্ডটি বধ্যভূমি থেকে সরানো হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর আবারও সেখানে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চুনারুঘাটে হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে খেয়াই নদীতে ফেলে দিত। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও গণকবরের সেই নদীর অংশ এখন অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ি-মার্কেট। নদীর যে অংশ এখনো দখল হয়নি সেখানেও ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জন।

এ ছাড়া চুনারুঘাটের সুরমা চা বাগান বধ্যভূমি, গাজীপুর সাগরদিঘি বধ্যভূমি, নালুয়া চা বাগান বধ্যভূমি, টেকারঘাট বধ্যভূমি, বানিয়াচং উপজেলার নজিপুর বধ্যভূমি এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা বধ্যভূমির কোনো চিহ্নই নেই।

শায়েস্তাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক চৌধুরী মাহতাব বলেন, ‘যুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষকে গুলি করে শায়েস্তাগঞ্জের একটি একটি পুকুরে ফেলে দেয় পাকিস্তানিরা। যুদ্ধের পর সেই জায়গাটি চিহ্নিত হলেও সেটি অরক্ষিত রয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করার দাবি জানাই সরকারের কাছে। পাশাপাশি জেলার সবগুলো গণকবর যেন চিহ্নিত করা হয় সেই দাবিও জানাই।’

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের কাছে জানতে চাইলে বধ্যভূমির প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারেননি। এমনকি কতটি চিহ্নিত হয়েছে সেটিও তিনি জানেন না।

তবে জানালেন, ইতিমধ্যে জেলার তিনটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকিগুলো চিহ্নিত ও সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত