নাগালের বাইরে ইলিশ

নুসরাত জাহান শুচি
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ৫০
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ২১

মাজেদা চাচির আবদার, তাঁর একটি ইলিশ মাছের মতো দেখতে মাটির ব্যাংক চাই।মাটির ব্যাংক দিয়ে কী হবে, চাচার প্রশ্ন। চাচি হেসে উত্তর দিলেন: বছরখানেক হলো ইলিশ মাছ খাই না। সারা বছর খুচরা ৫-১০ টাকা জমিয়ে নাহয় সামনের বছরই ইলিশ মাছ খাব। নিজেরা না খেলেও তো ছেলেমেয়ের মুখে তুলে দিতে হয় নাকি!আসুন, একটু পেছনে গিয়ে ব্যাংকের ইতিহাস জেনে আসি।

মজিদ চাচা পেশায় শিক্ষক। তিনি রাজধানী ঢাকায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ান। চাচা বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছ নেড়েচেড়ে একটি পাঙাশ মাছ নিয়ে বাসায় ফিরলেন। ফিরে চাচিকে বললেন, দ্রব্যমূল্যের এই চড়া বাজারে দুবেলা ডাল-ভাত জোটানোই কঠিন, সেখানে ইলিশ মাছ তো নিছকই বিলাসিতা।

চাচি বললেন, বিলাসিতা কেন হবে? ইলিশ তো আমাদের জাতীয় মাছ। জাতীয় মাছ খাওয়ার অধিকার কি জাতি হারিয়েছে?চাচা হেসে উত্তর দিলেন, পশুর রাজা সিংহ, বনের রাজা বাঘ তারা যদি মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে হয়, তবে মাছের রাজা ইলিশ কেন সস্তা হবে? এই রম্য তর্কে হেরে গিয়েই চাচির মাটির ব্যাংকের আবদার। জাতীয় মাছ হলেও ইলিশ খাওয়া এখন নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত সবার কাছেই স্বপ্নের মতো বৈকি!

তবে চক্ষু চড়কগাছ হতে তখনই বাধ্য, যখন আপনারা পরিসংখ্যান দেখবেন। আসুন, ইলিশের ইতিহাস দেখে আসি।ইলিশ শুধু আমাদের জাতীয় মাছই নয়; বরং ইলিশ উৎপাদনেও বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। আরও অবাক করা বিষয়, বিশ্বে মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশের জোগানদাতা বাংলাদেশ। ইলিশ আমাদের ভৌগোলিক নির্দেশক। যার রপ্তানি আয় জিডিপির ১ শতাংশ।

বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো উৎসবে ইলিশের চাহিদা বাড়ে। পদ্মার ইলিশের ঘ্রাণে যেন উৎসব-বাড়ি ম ম করে। তবে সেই গন্ধ সোনার বাংলায় আর পাওয়া যায় না। কেননা এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ কিনতে গেলেই গুনতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি। বাঙালির সাধ থাকলেও সাধ্য কই?

অর্ধমাসের খরচের টাকা দিয়ে একটি ইলিশ মাছ কিনলে বাকি সময়টা তাঁরা খাবেন কী? কীভাবে চলবে তাঁদের? অগত্যা ইলিশ মাছ এখন বইয়ের পাতায়ই থাক। যে ইলিশ আমরা রপ্তানি করি, সেই ইলিশ নিজেরা কিনে খেতে পারি না। আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি নবান্ন—কোথাও ঠাঁই নেই ইলিশের। হয়তো এভাবে চলতে থাকলে ইলিশের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

বাঙালির পান্তা-ইলিশের ঐতিহ্য হয়তো এভাবে একসময় মুছে যাবে। এ ছাড়া আর কীই-বা করার আছে আমাদের?
হয়তো করার ছিল, নির্ধারিত বাজারদর করে দেওয়া যেত বা বাজারের সঠিক তদারকি করা যেত যেন ব্যবসায়ীরা চাইলেই ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাতে না পারেন। হয়তো সবাই মিলে বলা যেত, আমার দেশের ইলিশ বিদেশিরা কেন আমাদের চেয়ে কম দামে কিনে খাবে? কিন্তু এত কিছু আমরা কেন করব? আমরা চুপ করে টিভি চ্যানেল খুলে খবর দেখব, ‘এ বছর জাতির নাগালের বাইরে তাদের জাতীয় মাছ ইলিশ।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত