হাসান মামুন
গোমাংসের দাম আগের জায়গায় চলে যাওয়ার পর সরকার চাইছিল এটা নিয়ন্ত্রণ করতে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যেসব পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ বেঁধে দেয়, তাতে ছিল গোমাংসও। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। সাধারণভাবে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরেই গোমাংস বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের দিকে দাম অবশ্য কিছুটা কম। শহরাঞ্চলে গরুর হাতবদলেও দাম বাড়ে। পরিবহন ব্যয়ের ব্যাপার রয়েছে। চাঁদাবাজির কথাও সবার জানা। শহরে ব্যবসার ব্যয়ও বেশি।
নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজধানীর কিছু পয়েন্টে কম দামে গোমাংস বিক্রি শুরু হয়েছিল। সরকার তাতে উৎসাহ জোগায়। নির্বাচন পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট দামে গোমাংস বিক্রির বন্দোবস্তও হয়। এর আওতায় হাড়, চর্বিসহ যেভাবে গোমাংস বিক্রি হয়, তাতে দাম আসলে কত পড়ে—প্রশ্নটা তখনো উঠেছিল। এখনো আছে। কেননা, এখনো কয়েকজন বড় বিক্রেতা তুলনামূলক কম দামে গোমাংস বিক্রি করছেন। তবে ঈদের আগমুহূর্তে তাঁরাও দাম বাড়িয়ে দেবেন বলে ধারণা। গরু এখন চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বলে তাঁরাও অভিযোগ করছেন। খামারিরা কোরবানি ঈদের হাটে তোলার জন্য গরু ধরে রেখেছেন, এটা তো সহজেই অনুমেয়। তখন আরও বেশি দামে বিক্রির আশায় আছেন তাঁরা। গরু পালনকারী গৃহস্থরাও আশায় আছেন, দীর্ঘ খাটাখাটুনির পর কিছু লাভের মুখ দেখবেন। এ অবস্থায় কসাইদের জন্য গরুর সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যাওয়ারই কথা। একজন নামকরা মাংস বিক্রেতা এ অবস্থায় বলছিলেন, কিছুদিনের জন্য ‘সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক!’ এমনটা বলে তিনি আসলে আগের মতো সীমান্তপথে গরু আসার সুযোগ রচনার ওপরই জোর দিয়েছেন।
একটা সময় পর্যন্ত প্রধানত ভারত থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গরু আসত সীমান্তপথে। গরুতে আমাদের যে ঘাটতি ছিল, সেটা এভাবে পরিপূরণ হয়ে যেত। তাতে গোমাংসের দামও পড়ত কম। ২০১৪ সাল থেকে গরু আসা বন্ধ করে দেয় বিজেপি সরকার। মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটাও সম্ভবত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা গরুতে হয়ে উঠেছি ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’। সরকারপক্ষের এমন দাবি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। গোমাংসে আমাদের ঘাটতি আছে বলেই বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। সীমান্তপথে যেসব গরু এসে জবাই হতো—ওই সংখ্যক গরুর ঘাটতি নাকি মেটানো যায়নি গত এক দশকেও। ইতিমধ্যে গোমাংসের চাহিদাও বেড়ে ওঠার কথা। জনসংখ্যা বাড়ছে। গোমাংসের দাম লাফিয়ে বাড়লেও একশ্রেণির মানুষ কিন্তু সেটা ‘অ্যাফোর্ড’ করতে সক্ষম।
তাঁদের মধ্যে এর পরিভোগ বেড়েছেও হয়তো। তবে ৩০০ টাকার গোমাংস ৭৫০-৮০০ হয়ে যাওয়ায় বহু লোকের পাত থেকে এটা উঠে গেছে স্থায়ীভাবে। তাঁরা হয়তো ব্রয়লার মুরগি খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছেন। এই গ্রুপে বেড়েছে ‘সোনালি’ মুরগির চাহিদাও।
গোমাংসের দাম দ্রুত বাড়ার পেছনে এর উৎপাদন ব্যয়ের বিষয়টিও আলোচনার দাবি রাখে। সীমান্তপথে গরু আসা বন্ধের প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হয়ে উঠলেও এ প্রশ্ন থাকবে যে, খামারে ও ঘরে সহনীয় খরচে গরু পালন করতে আমরা পারছি কি না। দেশে গোচারণভূমি কমে এসেছে দ্রুত। কৃষিজমিও কমে আসছে বাড়তে থাকা অন্যান্য চাহিদার চাপে। বনভূমিও রেহাই পাচ্ছে না। এ অবস্থায় খামারে ব্যয়বহুল দানাদার খাদ্য খাইয়ে মোটাতাজা করা গরু কম দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। উন্নত জাতের গরু পালনও বেড়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম বাবদ খরচ কম নয়। ক্রমবর্ধমান দামের বিদ্যুতের ব্যবহারও রয়েছে। আছে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ ব্যয়। গরু পালনকারী গৃহস্থের ক্ষেত্রেও কমবেশি এসব ব্যয় রয়েছে। তাঁদের নিজেদের বিনিয়োজিত শ্রমও বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা এর বদলে অন্য কাজে নিয়োজিত হলে তাঁরা কিছু না কিছু আয় করতেন।
অনেক খামারিই এখন বলছেন, বিক্রির জন্য গরু পেলেপুষে পোষাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেকে দুধ উৎপাদনকারী গরুও একই সঙ্গে পালন করছেন। বাছুর বিক্রি করে খামার পরিচালন ব্যয় কমানোর প্রয়াসও নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে যে মাত্রার ব্যবস্থাপনা দক্ষতা প্রয়োজন, তা কিন্তু সিংহভাগ খামারিরই নেই। উদ্যোক্তা হিসেবে সংখ্যায় দ্রুত বাড়লেও, এমনকি অনেক শিক্ষিত তরুণ এ খাতে এলেও তাঁদের কতজন প্রশিক্ষিত? তাঁদের অনেকেরই উৎসাহে ভাটা পড়েছে বলে জানা যায়। অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও রয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে তরল দুধের দামও কিন্তু কম। যেসব কোম্পানি দুধ সংগ্রহপূর্বক বাজারজাত করে, তারা মাঝে মাঝে দাম কমিয়েও দেয়। এ অবস্থায় খামারিদের আবার বলা হচ্ছে বিশেষভাবে উৎপাদিত ঘাস খাইয়ে গরু পালন করতে। তা উৎপাদনের জন্যও তো জমি লাগবে। সে ক্ষেত্রেও দামসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকা বিচিত্র নয়।
মোদ্দাকথা, খামারে গরু পালন করে সহনীয় দামে গোমাংস পাওয়া কঠিন। গরু পরিবহন ও হাটে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলেও ৭০০ টাকার নিচে গোমাংস পাওয়া বোধ হয় যাবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও খুচরা পর্যায়ে এর দাম ৬৬৫ টাকায় স্থির করে দিয়েছে। তবে প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় কত দামে গোমাংস বিক্রি হচ্ছে, সেটা এখন সবারই জানা। ইন্টারনেট এসব তথ্য প্রাপ্তিকে তৃণমূলেও সহজ করে দিয়েছে। গরু পালন না করা মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশেও আমাদের চেয়ে কম দামে এটা পাওয়া যায়। এমন তথ্য দিয়ে গেল বছর একজন ব্যবসায়ী নেতা গোমাংস আমদানির ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। বিশ্ববাজারের বড় সরবরাহকারী দেশ ব্রাজিল সম্প্রতি বলেছে, তারা বাংলাদেশকে ৪৯৫ টাকা দরে গোমাংস দিতে চায়। আমরা অবশ্য আরও কমে ভারত থেকে এটা আনতে পারি। তারাও বিশ্বে অন্যতম প্রধান মাংস সরবরাহকারী। মধ্যপ্রাচ্যেও ভারত মাংস রপ্তানি করে আসছে। তারা অবশ্য প্রধানত জোগায় মহিষের মাংস। আমাদের দেশেও খুব সীমিতভাবে এটা আনা হয়ে থাকে। এখন পরিস্থিতির চাপে আমরা চাইলে মাংস আমদানিটা বাড়াতে পারি।
গরু ও মহিষের মাংস দুটোই আনা যেতে পারে উপযুক্ত উৎস থেকে। পাকিস্তানও একটা উৎস হতে পারে। ব্রাজিল থেকে আনতে পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ে যাওয়ার কথা। মূল প্রশ্ন অবশ্য—গোমাংস আমদানি কিছুটা ‘উদার’ করা হবে কি না। বেশি উদার করা অবশ্য যাবে না। কারণ ইতিমধ্যে যাঁরা এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন; আত্মকর্মসংস্থানেও নিয়োজিত, তাঁদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না। এ খাতে গোখাদ্য আর ওষুধের ব্যবসাও রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় রেখেও কিছু গরু ও মহিষের মাংস আমদানির ব্যবস্থা করা যায় এবং সেটা বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থে। শুধু রেস্তোরাঁয় ব্যবহারের জন্য মাংস আনা হলেও মন্দ হয় না। এ খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
রেস্তোরাঁয় খাদ্য গ্রহণকারীর সংখ্যাও কম নয়। বেশি গোমাংস আমদানি করা যাবে না চলমান ডলার-সংকটের কারণেও। কর্মসংস্থানে সহায়ক শিল্পের কাঁচামালও আমরা কম আনছি সক্ষমতা কমেছে বলে। ভবিষ্যতে আমদানি সক্ষমতা বাড়লেও সতর্কভাবেই গোমাংস আনতে হবে।
আসলে এই খাতসংশ্লিষ্ট সবারই খতিয়ে দেখা উচিত ছিল খামারে গরু পালনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের অভিজ্ঞতাটি। এর পরিণতিতে গোমাংসের দাম দ্রুততার সঙ্গে ও বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়া নিয়ে যে একসময় জোরালো প্রশ্ন উঠছে, এটা আমরা যেন ভুলেই ছিলাম। একটা সংরক্ষিত বাজারে গোমাংসের দাম বাড়তে বাড়তে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার একেবারে বাইরে চলে যাওয়াটা যে বেদনাদায়ক, এটাও চিন্তা করে দেখা হয়নি। তবে দেরিতে হলেও বিষয়টি সামনে এসেছে এবং তা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অন্তত সময়ে-সময়ে (অর্থাৎ সংকটকালে) গোমাংস আমদানিতে বিধিনিষেধ কমিয়ে আনতে পারে সরকার। পাশাপাশি ছোট-বড় খামার পরিচালন ব্যয় কমাতে কর-শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করতে পারে। সহজ শর্তে ঋণ জোগানোটাই যথেষ্ট নয়। তাঁদের বিদ্যুৎ বিলেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
সুনিয়ন্ত্রিতভাবে মাংস আমদানির ব্যবস্থা হলে খামারিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার মনোভাবও গড়ে উঠবে বলে আশা। তাঁদের কাছ থেকে সরবরাহ হওয়া গরুর তাজা মাংস কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হলেও দেশে এর একটা আলাদা ক্রেতাগোষ্ঠী কিন্তু থাকবে।
এদিকে পশু কোরবানির বিরাট বাজারটা তো তাঁদের জন্য সংরক্ষিতই থাকছে। গোটা পশু তো আর আমদানি হচ্ছে না। সীমান্তপথে অবৈধভাবে গরু আসাটাও তখন উদ্যোগী হয়ে বন্ধ রাখতে হবে। আর দ্রুত অধিক মাংস জোগাতে সক্ষম গরু পালনে সহায়তা জোগাতে হবে খামারিদের। এতে বাড়বে তাঁদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। অগ্রহণযোগ্য উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ অবশ্য কঠোরভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
গোমাংসের দাম আগের জায়গায় চলে যাওয়ার পর সরকার চাইছিল এটা নিয়ন্ত্রণ করতে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যেসব পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ বেঁধে দেয়, তাতে ছিল গোমাংসও। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। সাধারণভাবে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরেই গোমাংস বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের দিকে দাম অবশ্য কিছুটা কম। শহরাঞ্চলে গরুর হাতবদলেও দাম বাড়ে। পরিবহন ব্যয়ের ব্যাপার রয়েছে। চাঁদাবাজির কথাও সবার জানা। শহরে ব্যবসার ব্যয়ও বেশি।
নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজধানীর কিছু পয়েন্টে কম দামে গোমাংস বিক্রি শুরু হয়েছিল। সরকার তাতে উৎসাহ জোগায়। নির্বাচন পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট দামে গোমাংস বিক্রির বন্দোবস্তও হয়। এর আওতায় হাড়, চর্বিসহ যেভাবে গোমাংস বিক্রি হয়, তাতে দাম আসলে কত পড়ে—প্রশ্নটা তখনো উঠেছিল। এখনো আছে। কেননা, এখনো কয়েকজন বড় বিক্রেতা তুলনামূলক কম দামে গোমাংস বিক্রি করছেন। তবে ঈদের আগমুহূর্তে তাঁরাও দাম বাড়িয়ে দেবেন বলে ধারণা। গরু এখন চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বলে তাঁরাও অভিযোগ করছেন। খামারিরা কোরবানি ঈদের হাটে তোলার জন্য গরু ধরে রেখেছেন, এটা তো সহজেই অনুমেয়। তখন আরও বেশি দামে বিক্রির আশায় আছেন তাঁরা। গরু পালনকারী গৃহস্থরাও আশায় আছেন, দীর্ঘ খাটাখাটুনির পর কিছু লাভের মুখ দেখবেন। এ অবস্থায় কসাইদের জন্য গরুর সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যাওয়ারই কথা। একজন নামকরা মাংস বিক্রেতা এ অবস্থায় বলছিলেন, কিছুদিনের জন্য ‘সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক!’ এমনটা বলে তিনি আসলে আগের মতো সীমান্তপথে গরু আসার সুযোগ রচনার ওপরই জোর দিয়েছেন।
একটা সময় পর্যন্ত প্রধানত ভারত থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গরু আসত সীমান্তপথে। গরুতে আমাদের যে ঘাটতি ছিল, সেটা এভাবে পরিপূরণ হয়ে যেত। তাতে গোমাংসের দামও পড়ত কম। ২০১৪ সাল থেকে গরু আসা বন্ধ করে দেয় বিজেপি সরকার। মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটাও সম্ভবত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা গরুতে হয়ে উঠেছি ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’। সরকারপক্ষের এমন দাবি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। গোমাংসে আমাদের ঘাটতি আছে বলেই বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। সীমান্তপথে যেসব গরু এসে জবাই হতো—ওই সংখ্যক গরুর ঘাটতি নাকি মেটানো যায়নি গত এক দশকেও। ইতিমধ্যে গোমাংসের চাহিদাও বেড়ে ওঠার কথা। জনসংখ্যা বাড়ছে। গোমাংসের দাম লাফিয়ে বাড়লেও একশ্রেণির মানুষ কিন্তু সেটা ‘অ্যাফোর্ড’ করতে সক্ষম।
তাঁদের মধ্যে এর পরিভোগ বেড়েছেও হয়তো। তবে ৩০০ টাকার গোমাংস ৭৫০-৮০০ হয়ে যাওয়ায় বহু লোকের পাত থেকে এটা উঠে গেছে স্থায়ীভাবে। তাঁরা হয়তো ব্রয়লার মুরগি খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছেন। এই গ্রুপে বেড়েছে ‘সোনালি’ মুরগির চাহিদাও।
গোমাংসের দাম দ্রুত বাড়ার পেছনে এর উৎপাদন ব্যয়ের বিষয়টিও আলোচনার দাবি রাখে। সীমান্তপথে গরু আসা বন্ধের প্রেক্ষাপটে এরই মধ্যে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হয়ে উঠলেও এ প্রশ্ন থাকবে যে, খামারে ও ঘরে সহনীয় খরচে গরু পালন করতে আমরা পারছি কি না। দেশে গোচারণভূমি কমে এসেছে দ্রুত। কৃষিজমিও কমে আসছে বাড়তে থাকা অন্যান্য চাহিদার চাপে। বনভূমিও রেহাই পাচ্ছে না। এ অবস্থায় খামারে ব্যয়বহুল দানাদার খাদ্য খাইয়ে মোটাতাজা করা গরু কম দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। উন্নত জাতের গরু পালনও বেড়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম বাবদ খরচ কম নয়। ক্রমবর্ধমান দামের বিদ্যুতের ব্যবহারও রয়েছে। আছে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ ব্যয়। গরু পালনকারী গৃহস্থের ক্ষেত্রেও কমবেশি এসব ব্যয় রয়েছে। তাঁদের নিজেদের বিনিয়োজিত শ্রমও বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা এর বদলে অন্য কাজে নিয়োজিত হলে তাঁরা কিছু না কিছু আয় করতেন।
অনেক খামারিই এখন বলছেন, বিক্রির জন্য গরু পেলেপুষে পোষাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেকে দুধ উৎপাদনকারী গরুও একই সঙ্গে পালন করছেন। বাছুর বিক্রি করে খামার পরিচালন ব্যয় কমানোর প্রয়াসও নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে যে মাত্রার ব্যবস্থাপনা দক্ষতা প্রয়োজন, তা কিন্তু সিংহভাগ খামারিরই নেই। উদ্যোক্তা হিসেবে সংখ্যায় দ্রুত বাড়লেও, এমনকি অনেক শিক্ষিত তরুণ এ খাতে এলেও তাঁদের কতজন প্রশিক্ষিত? তাঁদের অনেকেরই উৎসাহে ভাটা পড়েছে বলে জানা যায়। অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও রয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে তরল দুধের দামও কিন্তু কম। যেসব কোম্পানি দুধ সংগ্রহপূর্বক বাজারজাত করে, তারা মাঝে মাঝে দাম কমিয়েও দেয়। এ অবস্থায় খামারিদের আবার বলা হচ্ছে বিশেষভাবে উৎপাদিত ঘাস খাইয়ে গরু পালন করতে। তা উৎপাদনের জন্যও তো জমি লাগবে। সে ক্ষেত্রেও দামসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকা বিচিত্র নয়।
মোদ্দাকথা, খামারে গরু পালন করে সহনীয় দামে গোমাংস পাওয়া কঠিন। গরু পরিবহন ও হাটে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলেও ৭০০ টাকার নিচে গোমাংস পাওয়া বোধ হয় যাবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরও খুচরা পর্যায়ে এর দাম ৬৬৫ টাকায় স্থির করে দিয়েছে। তবে প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় কত দামে গোমাংস বিক্রি হচ্ছে, সেটা এখন সবারই জানা। ইন্টারনেট এসব তথ্য প্রাপ্তিকে তৃণমূলেও সহজ করে দিয়েছে। গরু পালন না করা মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশেও আমাদের চেয়ে কম দামে এটা পাওয়া যায়। এমন তথ্য দিয়ে গেল বছর একজন ব্যবসায়ী নেতা গোমাংস আমদানির ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। বিশ্ববাজারের বড় সরবরাহকারী দেশ ব্রাজিল সম্প্রতি বলেছে, তারা বাংলাদেশকে ৪৯৫ টাকা দরে গোমাংস দিতে চায়। আমরা অবশ্য আরও কমে ভারত থেকে এটা আনতে পারি। তারাও বিশ্বে অন্যতম প্রধান মাংস সরবরাহকারী। মধ্যপ্রাচ্যেও ভারত মাংস রপ্তানি করে আসছে। তারা অবশ্য প্রধানত জোগায় মহিষের মাংস। আমাদের দেশেও খুব সীমিতভাবে এটা আনা হয়ে থাকে। এখন পরিস্থিতির চাপে আমরা চাইলে মাংস আমদানিটা বাড়াতে পারি।
গরু ও মহিষের মাংস দুটোই আনা যেতে পারে উপযুক্ত উৎস থেকে। পাকিস্তানও একটা উৎস হতে পারে। ব্রাজিল থেকে আনতে পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ে যাওয়ার কথা। মূল প্রশ্ন অবশ্য—গোমাংস আমদানি কিছুটা ‘উদার’ করা হবে কি না। বেশি উদার করা অবশ্য যাবে না। কারণ ইতিমধ্যে যাঁরা এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন; আত্মকর্মসংস্থানেও নিয়োজিত, তাঁদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা চলবে না। এ খাতে গোখাদ্য আর ওষুধের ব্যবসাও রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় রেখেও কিছু গরু ও মহিষের মাংস আমদানির ব্যবস্থা করা যায় এবং সেটা বিপুলসংখ্যক ভোক্তার স্বার্থে। শুধু রেস্তোরাঁয় ব্যবহারের জন্য মাংস আনা হলেও মন্দ হয় না। এ খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
রেস্তোরাঁয় খাদ্য গ্রহণকারীর সংখ্যাও কম নয়। বেশি গোমাংস আমদানি করা যাবে না চলমান ডলার-সংকটের কারণেও। কর্মসংস্থানে সহায়ক শিল্পের কাঁচামালও আমরা কম আনছি সক্ষমতা কমেছে বলে। ভবিষ্যতে আমদানি সক্ষমতা বাড়লেও সতর্কভাবেই গোমাংস আনতে হবে।
আসলে এই খাতসংশ্লিষ্ট সবারই খতিয়ে দেখা উচিত ছিল খামারে গরু পালনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের অভিজ্ঞতাটি। এর পরিণতিতে গোমাংসের দাম দ্রুততার সঙ্গে ও বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়া নিয়ে যে একসময় জোরালো প্রশ্ন উঠছে, এটা আমরা যেন ভুলেই ছিলাম। একটা সংরক্ষিত বাজারে গোমাংসের দাম বাড়তে বাড়তে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার একেবারে বাইরে চলে যাওয়াটা যে বেদনাদায়ক, এটাও চিন্তা করে দেখা হয়নি। তবে দেরিতে হলেও বিষয়টি সামনে এসেছে এবং তা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অন্তত সময়ে-সময়ে (অর্থাৎ সংকটকালে) গোমাংস আমদানিতে বিধিনিষেধ কমিয়ে আনতে পারে সরকার। পাশাপাশি ছোট-বড় খামার পরিচালন ব্যয় কমাতে কর-শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করতে পারে। সহজ শর্তে ঋণ জোগানোটাই যথেষ্ট নয়। তাঁদের বিদ্যুৎ বিলেও ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
সুনিয়ন্ত্রিতভাবে মাংস আমদানির ব্যবস্থা হলে খামারিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার মনোভাবও গড়ে উঠবে বলে আশা। তাঁদের কাছ থেকে সরবরাহ হওয়া গরুর তাজা মাংস কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হলেও দেশে এর একটা আলাদা ক্রেতাগোষ্ঠী কিন্তু থাকবে।
এদিকে পশু কোরবানির বিরাট বাজারটা তো তাঁদের জন্য সংরক্ষিতই থাকছে। গোটা পশু তো আর আমদানি হচ্ছে না। সীমান্তপথে অবৈধভাবে গরু আসাটাও তখন উদ্যোগী হয়ে বন্ধ রাখতে হবে। আর দ্রুত অধিক মাংস জোগাতে সক্ষম গরু পালনে সহায়তা জোগাতে হবে খামারিদের। এতে বাড়বে তাঁদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। অগ্রহণযোগ্য উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ অবশ্য কঠোরভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে