স্বার্থ না থাকলে সে বহিরাগত হয়ে যাবে

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ৪৮

মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমার ট্রেলার রিলিজ হলো গত ৪ ডিসেম্বর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরচেনা গল্পের চিত্রায়ণ হলেও ট্রেলারেই মাত করেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। ছোট্ট মিনির চরিত্রে অভিনয় করেছে অনুমেঘা কাহালি, আর তার মা-বাবার চরিত্রে সোহিনী সরকার ও আবীর চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের মুখোমুখি হয়েছিলেন কাবুলিওয়ালা রহমত চরিত্রের মিঠুন চক্রবর্তী। তারই চুম্বক অংশ আজকের পত্রিকার পাঠকের জন্য।

গত বছর বড়দিনে ‘প্রজাপতি’ সিনেমার মুক্তির সময় বলেছিলেন, চিত্রনাট্যে চমক না থাকলে আপনি এখন আর রাজি হন না...। 
৪০০ সিনেমা করা হয়ে গেছে। গল্পে একটু কাতুকুতু না থাকলে এখন আর অভিনয় করতে ভালো লাগে না। একঘেয়েমি চলে এসেছে। শেষ যে কয়টা সিনেমা করেছি, সব আলাদা স্বাদের। 

‘কাবুলিওয়ালা’ তো সেই অর্থে আলাদা নয়। বাঙালির চেনা গল্প।
ত্রিশের বেশি যাঁদের বয়স, তাঁরা হয়তো পড়েছেন। কিন্তু ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে যাঁরা, তাঁদের নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমি তাঁদের অনুরোধ করব একবার দেখার। কারণ, এটা এমন এক গল্প, যেখানে ধর্মনির্বিশেষে আবেগ রয়েছে।

কম বয়সী যাঁদের কথা মাথায় রেখে সিনেমাটি করেছেন, তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথ এখন কতটা প্রাসঙ্গিক? 
রবীন্দ্রনাথ চিরকাল প্রত্যেকের কাছে প্রাসঙ্গিক। কারণ, রবীন্দ্রনাথ ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করতে শেখান না। আমিও সে মতাদর্শেই বিশ্বাস করি। বাবা-মায়েদের আগামী প্রজন্মকে শেখানো উচিত। আমি যেমন আমার ছেলেমেয়েদের শেখাই। 

আপনার বাড়িতে রবীন্দ্রচর্চা হয়? 
অবশ্যই। শুধু আমার ছেলেমেয়ে কেন, বাঙালি ঘরে সব বাচ্চাকেই এখনো শেখানো হয়। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে সময় কোথায়! সকালে ফোন হাতে নিয়ে ঘুম থেকে উঠছে! রাতে ঘুমোনোর সময়ও তাই। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আমার কাছে সোশ্যাল মিডিয়া শুধুই ট্র্যাশ। কারণ, যা থেকে আমার জ্ঞান বাড়বে না, আমার কাছে তার কোনো মূল্য নেই। 

এখন তো সবখানেই বহিরাগত নিয়ে নানা আলোচনা হয়। সেখানে আফগানিস্তান থেকে আসা এক ব্যবসায়ীকে কি মানুষ মেনে নেবে?
যেখানে স্বার্থ জড়িয়ে থাকে, সেখানে এই ধরনের আলোচনা হবেই। বাইরে থেকে কেউ এসে যদি আপনাকে ১ কোটি টাকা দেয়, আপনি ঠিক গলা জড়িয়ে আত্মীয়তা তৈরি করবেন। এক বছর নিজের বাড়িতে রেখে খাইয়েদাইয়ে সেই আত্মীয়তা পালন করবেন। কিন্তু কোনো স্বার্থ না থাকলেই সে বহিরাগত হয়ে যাবে। 

সুমন ঘোষের সঙ্গে আপনি আগেও ‘নোবেল চোর’ সিনেমাটি করেছিলেন। কীভাবে এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন? 
(রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে) সুমন ঝুঁকি নিতে জানে। নোবেল চুরি হয়েছিল। কিন্তু কয়জন তা নিয়ে সিনেমা করার কথা ভেবেছে! ও সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে কাজটা করেছিল। পাঁচ বছর ধরে ও ভাবছিল, কী করে দাদাকে বলি যে তোমায় ছাড়া কাবুলিওয়ালা করব না। দেড় বছর আগে সাহস করে মুম্বাই এসে বলল, ‘দাদা, একটা কথা বলে চলে যাব।’ আমি তখন ‘হুনারবাজ’-এর শুটিং করছি। ওর প্রস্তাব শুনে বললাম, ‘তুই কি পাগল হয়েছিস! দু-দুজন মহারথী (বলরাজ সাহনি ও ছবি বিশ্বাস) যে চরিত্র করেছেন, আমি তা করব! সরি, তুই চলে যা। পরে কথা হবে।’ ও হতাশ হয়ে চলে গেল। আবার ফোন করে একদিন বলল, ‘তুমি কোথায়? আমি একটা অন্য বিষয় ভেবেছি।’ সব মিথ্যা কথা! সেই ঘুরেফিরে কাবুলিওয়ালার কথাই বলে। এই সব কথা হতে হতে আমি জানতে চাইলাম, প্রযোজক কে। কারণ, সাহসী প্রযোজক না হলে এই সিনেমা হবে না।

এমন একটি চরিত্রের প্রস্তুতি নিলেন কী করে?
আমার জীবনে যে কটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আমি করেছি, বাস্তবে কাউকে না কাউকে পেয়ে গিয়েছিলাম, যাকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হতে পারি। কাবুলিওয়ালার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আফগানিস্তানের এক পাঠান আমার বন্ধু ছিল—জামাল, যে আমায় রান্না শিখিয়েছে। ১৯৮৩-৮৪ সালের কথা হবে। আমি যেখানেই শুটিং করতাম, ও ঠিক ওর ছোট্ট একটা ডাব্বা নিয়ে আমার জন্য কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে যেত। ও মিঠুন বলতে পারত না। বলত, ‘মঠন’। ও আমায় বলত, ‘আমি আল্লাহকে বলেছি, তুই এক দিন নম্বর ওয়ান হবিই।’ যখন আমি এক নম্বর হতে পেরেছিলাম, তখন ও দেশে ফিরে যায়। মেয়ের বিয়ে দেয়। আমি সে সময় ওকে কিছু আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও নেয়নি। ওর চরিত্র এতটাই দৃঢ় ছিল। আমি শুধু পরিচালককে ওর কথা বলার ধরনটা দেখিয়েছিলাম। সুমন বলল, ‘আমার এটাই চাই। আমার কাবুলিওয়ালা এ রকমই হবে।’ 

আপনার জীবনে কি মিনির মতো কোনো বন্ধু আছে?
আছে একজন। প্রদ্যোতের (সহকারী) ছেলে। এখন ওর ছয় বছর বয়স। আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ডস। খাবার নিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করি, চিৎকার-চেঁচামেচি লেগে থাকে! ওর নাম অগ্রদূত হালদার। তিন-চার বছর বয়স থেকেই ও আমার বন্ধু। ও আমায় ছাড়া থাকতে পারে না। যেখানেই থাকি, আমাদের একবার হলেও কথা হয়। ও আবার আমায় নাম ধরে ডাকে না। ‘জন সেনা’ (ডব্লিউডব্লিউই তারকা) বলে ডাকে। আমি নাকি জন সেনার মতো শক্তিশালী। 

গত বছর বড়দিনে ‘প্রজাপতি’ বেশ হিট হয়েছিল। এ বছরও কি কাবুলিওয়ালা একই জাদু দেখাতে পারবে? 
এই সিনেমায় সুন্দর একটা বার্তা আছে। অনেক অনুভূতি জড়িয়ে আছে। সেই দিক থেকে তো মনে হয়, এটাও বড়সড় হিট হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত