যৌনকর্মীদের মাতৃত্ব: উদ্‌যাপনের বদলে অবজ্ঞা

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ১১: ০৩

‘পেটে বাচ্চা নিয়া তিন দিন রেললাইনের পাশে পইড়া ছিল মেয়েটা। ব্যথায় কাতরাইতেছিল। কিন্তু চিকিৎসা পায় নাই। শেষমেশ মইরাই গেল।’ 

বলছিলেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একজন যৌনকর্মী। তিনি জানান, যৌনকর্মে যুক্ত বেশির ভাগ নারী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রয়োজনীয় সেবা পান না। একই রকম কথা জানান যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠক ও এই কর্মে যুক্ত নারীরা।

যেকোনো নারীর জীবনেই মাতৃত্বকালীন সময়ে প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্ন এবং সেবা। তবে মাতৃত্বকালীন সময়ে যৌনকর্মীদের ভাগ্যে যত্ন আর সেবার বদলে জোটে কেবল অবজ্ঞা আর অবহেলা। মা হওয়ার পরেও মেলে না প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা। সন্তানকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে সেখানেও জোটে অপমান।
এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাতৃত্ব উদ্‌যাপন: এক নিরন্তর নিরবধি বন্ধন’।

২০০১ সাল থেকে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন দুর্জয় নারী সংঘের সভাপতি রিনা বেগম। তিনি জানান, তানিয়া বেগম নামে অন্তঃসত্ত্বা এক যৌনকর্মীকে গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তাঁরা মুগদার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন সেই অন্তঃসত্ত্বা মা। হাসপাতালের সেবাপ্রদানকারীদের অবহেলায় তানিয়া বা তাঁর গর্ভের সন্তান কাউকেই বাঁচানো যায়নি।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যৌনকর্মীদের মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে প্রায় দুই যুগ ধরে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা রিনা বেগম জানান, তিনি শুধু ঢাকাতেই শতাধিক যৌনকর্মীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যেতে দেখেছেন বা শুনেছেন।

২৫ বছর ধরে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন মিরপুরের উল্কা নারী সংঘের সভাপতি হেনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে কোনো সেবা নিতে গেলে ডাক্তার এবং নার্সরা আমাদের ধরতে চায় না। বহুবার দেখছি, অন্তঃসত্ত্বা মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি। এইডস আক্রান্ত এই শঙ্কায় ডাক্তার-নার্সরা তাকে ঠিকমতো দেখছে না।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভাবস্থায় একজন মা অন্তত চারবার চিকিৎসকের কাছে যাবে, অ্যান্টিনেটাল চেকআপ নেবে। কিন্তু যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে এই চেকআপগুলো হয় না বলে জানান যৌনকর্মে যুক্ত নারীরা। যৌনকর্মী ইসমত আরা বলেন, ‘আমরা যৌনকর্ম করে খাই, এটা বুঝলে হাসপাতালের লোকরা আমাদের সাহায্য না করে উল্টো টিটকারি দেয়।’

মানবাধিকারকর্মী ও নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের সমাজ ও বাস্তবতা একজন নারীকে যৌনকর্মে যুক্ত করায়। কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জন্মেছি বলে আমি এখানে, আর সে কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জন্মায়নি বা তার জীবনে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সে ওখানে। একজন মানুষের যে অধিকার প্রাপ্য, তারও সেটা প্রাপ্য। তাকে অবজ্ঞা না করে তার প্রাপ্যটুকু দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত