মহানবী (সা.)-এর শুভাগমন

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পুণ্যময় জন্মদিন। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের এই দিনে আরবের মক্কায় জন্ম নেন তিনি। তাঁর জন্ম বিশ্বের বুকে ইতিহাসের বাঁক বদলে দেওয়া এক অনুপম জীবনাদর্শের সূর্যোদয়। তাঁর হাত ধরে ইতিহাসে লেখা হয় একটি নতুন সভ্যতার নাম। তাঁর আনীত আদর্শ মানব জাতির জন্য আশীর্বাদ। তাই দিনটি মুসলমানদের জন্য আনন্দের নিঃসন্দেহে। 

ইসলামের ভাষ্যমতে, মহানবী (সা.) পৃথিবীতে আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাই আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীর সব মানুষকে পরকালীন সাফল্যের পথ দেখাতে রাসুল বানিয়ে পাঠান। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নবুয়তের আগেই আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিখাদ সোনার মানুষে পরিণত করেন। পুরো বিশ্বের ত্রাণকর্তা হিসেবে একজন মানুষের যত গুণাবলি দরকার, সব গুণই তাঁকে দান করেন। আদব-আখলাক, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত জীবনবোধে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। 

তাই আমরা দেখি, নবুয়ত লাভের আগেই মহানবী (সা.)কে আরবের মানুষ এক বাক্যে আল-আমিন বা বিশ্বস্ত হিসেবে মেনে নেয়। নবুয়ত পাওয়ার পর যখন মক্কার অধিকাংশ মানুষ তাঁর শত্রু হয়ে যায়, তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে, তখনো তারা তাঁর কাছেই নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র আমানত রেখেছে। এ ঘটনাই প্রমাণ করে, তাঁর চরিত্রমাধুর্য ও গ্রহণযোগ্যতা কেমন ছিল। 

৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের পুরোটাই মহানবী (সা.) মানুষের কল্যাণে নিবেদিত রেখেছেন। পুরো আরব যখন অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে ছিল; অশিক্ষা, কুসংস্কার, হানাহানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন যখন চরমে পৌঁছেছিল; তখন মুক্তির দিশারি হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। নবুয়তের ২৩ বছরের কঠিন মেহনতের মাধ্যমে তিনি এমন এক সোনালি প্রজন্ম তৈরি করেন, যাঁদের হাত ধরে ইসলাম ও মানবতার বাণী পৃথিবীর আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ে। 

ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য এক উদাহরণ পৃথিবীর সামনে পেশ করেছেন মহানবী (সা.)। মক্কার অবর্ণনীয় কষ্টের ১৩ বছর শেষে মদিনায় তিনি এমন আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে কোনো ধরনের জুলুম ও বর্ণবৈষম্য ছিল না। মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। দাস মুক্ত করেন। শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য বুঝিয়ে দেন। অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করেন। তাদের উপাসনালয়ের সুরক্ষা দেন। 

আজ আমরা এক অস্থির সময় পার করছি। মহানবী (সা.)-এর আদর্শ ভুলে, নিজেদের সোনালি অতীত ভুলে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ, হানাহানি, হিংসা ও অসহিষ্ণুতার চর্চায় ব্যস্ত। জোরজবরদস্তি, নিজের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এবং আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে দুঃখজনকভাবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে মহানবী (সা.)-এর আনীত শান্তি-সৌহার্দ্যের অমীয় বাণী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সম্প্রীতির বন্ধনে উদ্‌যাপিত হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত