Ajker Patrika

শেবাচিম ও জেনারেল হাসপাতালে বিকল যন্ত্রে নাকাল রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
শেবাচিম ও জেনারেল হাসপাতালে বিকল যন্ত্রে নাকাল রোগীরা

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসাস্থল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। তবে এ হাসপাতালের রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগের অধিকাংশ রোগ নির্ণয় যন্ত্র বিকল। মেয়াদোত্তীর্ণ কিছু যন্ত্র চলছে জোড়াতালি দিয়ে। একই অবস্থা নগরের জেনারেল হাসপাতালেরও। এতে নাকাল হচ্ছেন রোগীরা। তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছুটছেন আশপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার শেবাচিম হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় দশমিনার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভরসা পান না। তাই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করিয়েছেন। সদর উপজেলার চরকাউয়ার আরেক রোগী শাওন বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীরাই হাসপাতালে এসে ভিড় করেন। নানাভাবে বুঝিয়ে তাঁরা রোগীদের নিয়ে যান ওইসব সেন্টারে।

শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের পাঁচটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের তিনটি অচল দুই-তিন বছর ধরে। বাকি দুটি মেশিন দিয়ে রোগীদের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

এক্স-রে বিভাগের ১৩টি মেশিনের মধ্যে বিকল আটটি। এ বিভাগের টেকনিশিয়ান বাবুল আক্তার জানান, পাঁচটি এক্স-রে মেশিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একমাত্র এমআরআই মেশিনটি ছয় বছর ধরে বিকল। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় মেশিনটি আর সচল হবে না। নতুন এমআরআই মেশিন দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে।

এদিকে হাসপাতালের দুটি সিটিস্ক্যান মেশিন অচল হওয়ায় আড়াই বছর সিটিস্ক্যান বন্ধ ছিল। ২০০৭ সালে স্থাপিত মেশিনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০ বছর আগে থেকে শেবাচিম হাসপাতালে বন্ধ ইকোকার্ডিওগ্রাম সেবা। ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে।

ক্যাথল্যাব বন্ধ থাকায় টানা তিন বছর এনজিওগ্রাম বন্ধ ছিল। টেকনিশিয়ান গোলাম মোস্তফা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিনটি বারবার সার্ভিসিং করে সচল রাখতে হচ্ছে। ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কোবাল্ট-৬০ মেশিনটি অচল চার বছর ধরে।

হাসপাতালের ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্ট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রের যেগুলোর গ্যারান্টি মেয়াদ রয়েছে, সেগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কোবাল্ট-৬০ ও এমআরআই মেশিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন সিটিস্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন কেনার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সুফল মিলছে না। নতুন এমআরআই মেশিন পাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে।

এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, এমআরআই মেশিনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রগুলো নতুন পেতে অথবা সচল করার জন্য মন্ত্রণালয়ে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালেও একই অবস্থা। ভবনের ছাদ এবং দেয়াল চুইয়ে পানি প্রবেশ করায় গত সপ্তাহে বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটির রেডিওলজি বিভাগের এক্স-রে মেশিন। হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবদুল জলিল জানান, এখানকার দুটি এক্স-রে মেশিনের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি মাত্র তিন মাস চলে অচল হয়ে পড়েছে, যা আছে, তাও বেশ পুরোনো। হাসপাতালের

প্যাথলজি বিভাগে উন্নতমানের অ্যানালাইজার (হরমোন পরীক্ষা) মেশিন নেই। এখানকার অপারেশন থিয়েটারও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। আলট্রাসাউন্ড মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে অচল।

জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসাউন্ড মেশিন পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।

বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়ক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রগুলো বিকল থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শেবাচিম হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তাঁরা সম্প্রতি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এবং স্মারকলিপি দিয়েছেন। জেনারেল হাসপাতালেও যন্ত্রপাতির সংকটে মানুষ সেবা পাচ্ছেন না। দুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত মন্ত্রণালয়ে দেনদরবার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র সচল করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের আগে বাংলাদেশ কী করেছিল, সেদিকে নজর দিন: ভারত

কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা

ভ্যাটিকানের মতো একটি ক্ষুদ্র মুসলিম রাষ্ট্র নিয়ে জোর জল্পনা

বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে নয়, বহুত্ববাদেরও বিপক্ষে

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত