Ajker Patrika

রাতের ঢাকায় সাহ্‌রি পার্টি

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
রাতের ঢাকায় সাহ্‌রি পার্টি

মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় রাতের নীরবতা। পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে তখন যেন সন্ধ্যা। রেস্তোরাঁ আর বিরিয়ানির দোকানগুলোতে দিনের কর্মব্যস্ততা। পাশের নাজিরাবাজার, নাজিমউদ্দিন রোডেও একই চিত্র। কিছুটা দূরে বংশালে নর্থ সাউথ রোডের আল রাজ্জাক হোটেলও যেন প্রস্তুতি নিচ্ছে। কে বলবে, ঘড়ির কাঁটা রাত দেড়টার ঘর পেরিয়ে গেছে; দিন বদলে শুরু হয়েছে মঙ্গলবার।

পুরান ঢাকার হোটেল, রেস্তোরাঁর এই প্রস্তুতি সাহ্‌রিকে ঘিরে। সাহ্‌রির সময় দল বেঁধে আসবেন ভোজনরসিকেরা। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ পরিবার নিয়ে। কেউবা রাত জেগে কাজ করা সহকর্মীদের সঙ্গে। রাত জাগা এসব দোকানে মাঝে মাঝে বিদেশিদেরও দেখা মেলে।

বছরের অন্য সময়েও নাজিরাবাজার, কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিমউদ্দিন রোড ঘুমায় না। গভীর রাতে সেখানে ভোজন পুরোনো রীতি। রমজানে সাহ্‌রির সময় এসব এলাকা হয় আরও জমজমাট। শুধু ওই এলাকা বা আশপাশে নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন সাহ্‌রি খেতে। হালে যার নাম ‘সাহ্‌রি পার্টি’। ঠাটারিবাজারের স্টার হোটেলেও সাহ্‌রির সময় পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে আসেন অনেকে।

যাঁরা বাড়িতে সাহ্‌রি খাবেন, তাঁরা মধ্যরাতের পরেই চলে আসেন খাবার কিনতে। নাজিরাবাজারের হানিফ বিরিয়ানির সামনে ‘পার্সেল’ নিতে বেশ ভিড়। উল্টো পাশে হাজির বিরিয়ানির কর্মীরাও গলদঘর্ম পার্সেল দিতে। দুই দোকানের ভেতরেও খাচ্ছেন দূর থেকে আসা ভোজনরসিকেরা। বোখারি রেস্তোরাঁ, বিসমিল্লাহ কাবাব, অন্যান্য রেস্তোরাঁ—সর্বত্র ব্যস্ততা। বোখারির বিক্রয়কর্মী আনোয়ার হোসেন বললেন, আর কিছুদিন পর আরও জমজমাট হবে।

ঠাটারিবাজারের স্টার হোটেলে কথা হলো মোরশেদ চিশতীর সঙ্গে। পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা সাহ্‌রি খেতে এসেছেন পরিবার নিয়ে। বললেন, ‘বাচ্চারা বায়না ধরেছে সাহ্‌রি করবে। তাই চলে এলাম। সাহ্‌রি হলো, পরিবারের সবার একসঙ্গে একটু সময় কাটানো হলো।’
মোহাম্মদ খোকন বাবার সঙ্গে সাহ্‌রি খেতে স্টার হোটেলে আসতেন। এখন তিনি এসেছেন সন্তানদের নিয়ে। বললেন, পরিবার নিয়ে বাইরে সাহ্‌রি খাওয়া পুরান ঢাকার রীতি। এটা একটা আনন্দের ব্যাপার।

স্টার হোটেলে এমন আরও অনেক টেবিলে পরিবার ও বন্ধুদের একসঙ্গে সাহ্‌রি খেতে দেখা গেল। ওই রাতে স্টারের চেয়ে কিছু কম ভিড় ছিল নর্থ সাউথ রোডের আল রাজ্জাক হোটেলে। হোটেলের সাপোর্টিভ ম্যানেজার জামির হোসেন সৌরভ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনের আগের রাতে ভিড় বেশি হয়। অবশ্য কিছুদিন পর প্রতি রাতেই ভিড় হবে।

হোটেলে দল বেঁধে সাহ্‌রি খাওয়ার শুরু কবে থেকে, তা জানে না কেউ। তবে বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানাল, পুরান ঢাকার পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানায় রমজানে রাত জেগে কাজ হয়। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারী ও আশপাশের আবাসিক হোটেলে থাকা মানুষদের জন্য একসময় সাহ্‌রির আয়োজন হতো।

সাহ্‌রিতে এসব এলাকায় পাওয়া যায় সাদা ভাত, কাচ্চি, মোরগ পোলাও, তেহারি, ইলিশ পোলাও, মোরগ মাসাল্লাম, ঝাল ফ্রাই, খাসির গ্লাসি, মুরগির কারি, নান রুটি, চিকেন তন্দুরি, চিকেন চাপ, বিশেষ মোগলাই পরোটা, নানা রকম মাছ। সবজি-ভর্তা তো আছেই। ফিরনি, লাচ্ছি, ফালুদা, জুস। জুসের আলাদা দোকানও আছে।

পুরান ঢাকার দল বেঁধে সাহ্‌রি খাওয়ার এই চল ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, উত্তরাতেও ছড়িয়েছে। ঢাকায় বেড়ে ওঠা তরুণ ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম জানান, তিনি রমজানে ১০ থেকে ১২ দিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সাহ্‌রি খান। রাতের ঢাকায় বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাফেরা করে একসঙ্গে সাহ্‌রি খাওয়া তরুণদের কাছে আনন্দের ব্যাপার।

রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে বুফে সাহ্‌রির ব্যবস্থাও আছে। বিভিন্ন ব্যাংক বাই ওয়ান গেট ওয়ান, টু এমনকি থ্রিরও ব্যবস্থা রেখেছে। সচ্ছল ও ধনী তরুণেরা সেদিকেও ঝুঁকছেন। ওয়েস্টিন, লা মেরিডিয়ান, আমারি ঢাকা, ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেও বুফে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মিডিয়া ছুটায় দেব, চেনো আমাদের’—সাংবাদিককে হুমকি কুড়িগ্রামের এসপির

সৌদি রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের ভিত্তিতেই মডেল মেঘনা কারাগারে

বান্দরবান, মণিপুর, মিজোরাম ও রাখাইন নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে: বজলুর রশীদ

ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি যোগ দিলেন জামায়াতে

যশোরে সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর মরদেহ: ভিসেরা প্রতিবেদনে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত