নাটোরের বড়াইগ্রামে অফিসকক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পিটিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) ভাগনে ও তাঁর দলবল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আযম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনা তদন্তে একজন এসআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হামলার শিকার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার উপজেলা থেকে এমপিও আবেদন ছেড়ে দেওয়ার শেষ দিন হওয়ায় আমি অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। এমন সময় ১৫-১৬ জন যুবক হঠাৎ আমার রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তাদের আগমনের কারণ জানতে চাইলে রুবেল বালি নামে একজন এসে আমার ডান হাত ধরে বলতে থাকে, ‘‘এই হাতটা নেওয়ার হুকুম আছে, এই হাত নিয়ে এমপিকে দিতে হবে।” অপরজন বলে, “মেশিন বের কর, একে শেষ করে দে।” এই বলে তারা আমাকে চেয়ার থেকে তুলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং অফিসের টেবিল-চেয়ার তছনছ করে। এ সময় আরও ১৫-২০ জন বাইরে দরজা আটকে থাকে। ফলে অন্য কেউ আমার রুমে প্রবেশ করতে পারছিলেন না।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিচতলায় বসি। যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহায়ক করিমের মাধ্যমে খবর পাই স্যারকে (মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) রুমে আটকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে ধাক্কা দেই। এ সময় একজন বের হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে মোবাইল ফোনে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানাই।’

খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দিন মিঠু, বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম, এসআই শরিফুল ইসলাম, আব্দুল বারেক, ডিএসবির এসআই মিনার আলী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে উপজেলার সব কর্মকর্তা ইউএনওর রুমে বসে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

ইউএনও আবু রাসেল বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন নাটোর-৪ আসনের বর্তমান এমপি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর অনুসারী রুবেল বালি, এমপির ভাগনে জহির উদ্দিন, শামসুদ্দিন, জামাল উদ্দিন, বাহাউদ্দিনসহ আরও ২০-২৫ জন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বড়াইগ্রাম উপজেলায় এই প্রথম এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল। উপনির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে এমনটা ঘটল। এ ঘটনার পেছনে নিয়োগবাণিজ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই অবগত নই। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে আমি কেন এর দায়ভার নেব। অপরাধী যে-ই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’