Ajker Patrika

পথের ধারে শখের পায়রা

শিপুল ইসলাম, রংপুর
পথের ধারে শখের পায়রা

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার গোবরা গ্রামের হেমন্ত রায়। বছর দশেক আগে শখের বশে একটি পায়রা কিনেছিলেন তিনি। সেই একটি থেকে এখন তিন শর বেশি পায়রা তাঁর। ভোরে সেগুলোর ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে। মাঝেমধ্যে খাঁচার সব কটি খোপের দরজা খুলে দেন তিনি। আকাশে উড়াল দেয় পোষা পায়রা। মাথার ওপর চক্কর দেয়, ডিগবাজি খায়। এ দৃশ্য দেখে তাঁর প্রাণ ভরে ওঠে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এক বসন্তবিকেলে রংপুরের লালবাগ এলাকায় গড়ে ওঠা পায়রা ও পাখির হাটে দেখা হেমন্ত রায়ের সঙ্গে। কথায় কথায় নিজের গল্প শোনালেন তিনি। জানালেন, ১০টি পায়রা বিক্রির জন্য হাটে এনেছেন। বিক্রির টাকায় অন্য কোনো জাতের পায়রা কিনবেন। ১০ বছর আগে প্রথম এই হাট থেকে একটি পায়রা কিনে পুষতে শুরু করেন। এখন নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি পায়রা হেমন্ত রায়ের।

ভিড় বাড়তে শুরু করে শাপলা-মডার্ন সড়কের লালবাগ মোড়ের পূর্ব ধারে। কেউ লোহার খাঁচায়, কেউ বাঁশের খাঁচায় আনা পায়রা আর পাখি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন সড়কের পাশে। ধীরে ধীরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। জমে ওঠে হাট। শুরু হয় পছন্দ করার পালা, দর-কষাকষি। দামে মিললেই বিক্রি, খাঁচা নিয়ে রওনা দেন সন্তুষ্ট ক্রেতা। রংপুর শহরের কারমাইকেল কলেজঘেঁষা লালবাগ এলাকায় প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার দেখা যায় এ দৃশ্য।

এ হাটে শুধু পায়রা নয়, বিক্রি হয় বিভিন্ন জাতের পাখিও। এখানকার বেশির ভাগ ক্রেতা শৌখিন। তাঁরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম থেকে এখানে আসেন পায়রা ও পছন্দের পাখি কিনতে। বিক্রেতারাও স্থানীয়। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাট থাকে জমজমাট। প্রতি হাটে ২০০ থেকে ৩০০ বিভিন্ন প্রজাতির পায়রা ও পাখি বিক্রি হয় এখানে।

 ঝরনা সেটিং, বুলু সেটিং, গিরিবাজ, লোটন পায়রা—কত যে নাম আর জাত, এখানে না এলে ঠিক জানা যায় না। এসব পায়রার সঙ্গে এখানে বিক্রি হয় বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া কিংবা ডায়মন্ড ডোভসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। প্রকারভেদে এসব পায়রা ও পাখির দাম ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ হাটের পাশেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার শিক্ষার্থী নাহিদুজ্জামান নাহিদ। দাম হাতের নাগালে বলে বন্ধুসহ বাড়িতে পোষার জন্য গিরিবাজ জাতের দুটি কবুতর কিনতে এসেছেন হাটে। সেখানেই কথা হয় কবুতর কিনতে আসা নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, মডার্নে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এ পথে নিয়মিত যাতায়াত তাঁর। সড়কের ধারে ভিড় দেখে একদিন দাঁড়িয়ে পড়েন। সেদিনই জানতে 
পারেন এটি পায়রা ও পাখির হাট। বেশ কিছুদিন পর সময় করে এসেছেন পায়রা কিনতে। এক জোড়া নোটন জাতের পায়রা কিনেছেন শখ মেটাতে।

গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের মানুষের এখন অন্যতম শখে পরিণত হয়েছে পায়রা ও পাখি পোষা। ছোট্ট ফ্ল্যাটের দেড় হাত চওড়া বারান্দায় অনেকে এখন খাঁচায় পুষছেন দামি পাখি। এর সঙ্গে যেমন শখ জড়িত, তেমনি এটি নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর একটি ভালো উপায়। তবে পায়রা পোষা এখন শুধু আর শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বলে মনে করেন রংপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।

তিনি জানান, অনেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে পায়রা পালন করছেন বাড়ির ছাদে। পায়রার পাশাপাশি পালন করছেন বিভিন্ন পাখিও। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত