Ajker Patrika

ধানের দামে হতাশ দিনাজপুরের কৃষকেরা

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
ধানের দামে হতাশ দিনাজপুরের কৃষকেরা

চলতি বছর বোরো মৌসুম প্রায় শেষ হলেও ধানের দাম না বাড়ায় হতাশ কৃষক। সেচ, সার ও কীটনাশকের মূল্য অনেক বাড়লেও বাড়েনি ধানের দাম। ফলে দুদিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। 

গতকাল সোমবার সকালে দিনাজপুরের গোপালগঞ্জে ধানের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি২৮ জাতের ধান (শুকনা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (দুই মণ) ২৩০০ থেকে ২৪০০, ব্রি২৯ ধান প্রতি বস্তা ২০০০-২১৫০, জিরা-৯০ ধান প্রতি বস্তা ২৪০০-২৫০০, বগুড়া সম্পা ২৩০০-২৪৫০, ব্রি৫১ ধান ২৪৫০-২৫০০ টাকা দরে। তবে এসব জাতের ধান কাঁচায় বস্তাপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। 

গত শুক্রবার সকালে একই হাটে কথা হয় সদর উপজেলার উ. ভবানীপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ধানের যে দাম চলছে, এ দাম হিসাবে তো পোষায় না। গোটা ধানের মৌসুমটাত কোনো পানি (বৃষ্টি) নাই, আর কাটিবার সময় ধান তো শুতি (হেলে পড়েছে) গেল। এক বিঘা জমির ধান কাটিতে আট-নয় হাজার টাকা লাগিছে। ধানের দাম চলেছে আটশ-সাড়ে আট শ টাকা মণ। তো গেরস্তক (জমির মালিক) দিমো কী, আর হামার থাকিবে কী? জমি যদি নিজের হয় তাইলে কিছুটা পোষায়, কিন্তু হামরা (আমরা) তো ওইন্যের জমিত আবাদ করি। কেংকরি পোষাইবেন। এবার খালি খরচ আর খরচ।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টরে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৮ হেক্টরের ধান কর্তন করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৫ টন। 

জেলার বিরল উপজেলার রাজারামপুর থেকে বাজারে ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন খবির উদ্দিন। গতকাল তিনি বলেন, ‘কৃষক লাভের দেখা পায় না। এবার অতিরিক্ত খরায় সেচ খরচ বেশি পড়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। পরে শেষ দিকে ঝড়বৃষ্টিতে গাছ হেলে পড়ায় কাটামাড়াই খরচ বাড়ল দেড় হাজার টাকা। দুই পাশে প্রায় আড়াই হাজার টাকা ধরা। গতবারের চেয়ে এবার সব ধরনের ধান বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। যাঁরা বর্গাচাষি, এবার তাঁদের লোকসান হিসাব করা যাবে না। যে জমি ১০-১২ হাজার টাকায় বর্গা পাওয়া গেছিল, সেই জমি এখন ১৮-২২ হাজার টাকায় চুক্তি নিতে হচ্ছে।’ 

গোপালগঞ্জ বাজারের ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমে প্রতি হাটে অন্তত চার শ থেকে হাজার বস্তা ধান বিক্রি হয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী বা পাইকার আছেন, যাঁরা গ্রামের প্রান্তিক চাষিদের কাছে ধান কাঁচাই কিনেছেন। পরে নিজস্ব চাতালে শুকিয়ে হাটে বিক্রি করছেন। কেউ আছেন ওই সব স্বল্পপুঁজির ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধান কিনে মিলমালিকের প্রতিনিধির কাছে বিক্রি করছেন। আবার কিছু কৃষক আছেন, যাঁরা উৎপাদন ও ধান কেনাবেচার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। 

ধানের দাম কম পাওয়া কিংবা কৃষকদের লোকসানের বিষয়টি স্বীকার করছেন খোদ মিলমালিকেরাও। দিনাজপুর মক্কা অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মখলেছুর রহমান আজিম বলেন, ধানের আমদানি বেশি। সে অর্থে মিলমালিকেরা এখনো ধান কিনছে না। অনেক মিলে গতবারের ধানই রয়ে গেছে। চাল করতে পারেননি। এবার কৃষকেরা প্রতি বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা কম পাচ্ছেন। এ ছাড়া এবার বোরো আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে, ফলে বাজার যদি না বাড়ে তাহলে কৃষকেরা দুদিকেই ক্ষতির মুখে পড়বেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত