ইজাজুল হক
খানজাহান আলীর আগমন: খানজাহান আলীর (রহ.) জন্ম দিল্লিতে, ১৩৬৯ সালে। দিল্লিতে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। দিল্লিতে তুঘলক সুলতানদের শাসনামলে তিনি আমিরের পদমর্যাদা লাভ করেন। ১৩৯৮ সালে তৈমুর লংয়ের দিল্লি আক্রমণের পর, পনেরো শতকের শুরুতেই তিনি বাংলার বৃহত্তর যশোর ও খুলনা অঞ্চলে আসেন। এখানে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন, একটি সমৃদ্ধ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার নাম দেন খলিফাতাবাদ। শাসক হিসেবে তাঁর উপাধি ছিল উলুঘ খান ও খান-ই-আজম। কথিত আছে, কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামের দুটি কুমিরের পিঠে চড়ে তিনি বাগেরহাটে এসেছিলেন। বাঘের হাট জাদুঘরে এখনো কুমির দুটির চামড়া সংরক্ষিত আছে। ঐতিহাসিক ঘোড়াদিঘির কুমিরগুলো এই দুই কুমিরের বংশজাত বলেও ধারণা করা হয়।
খলিফাতাবাদ প্রতিষ্ঠা: প্রথমে দিল্লির সুলতান থেকে, পরে গৌড়ের সুলতান থেকে খানজাহান আলী (রহ.) সুন্দরবন অঞ্চলের জায়গির লাভ করেন। তখন গৌড়ের শাসক ছিলেন নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ। সুন্দরবনের আশপাশের বন-জঙ্গল আবাদ করে সেখানে তিনি কয়েকটি শহর গড়ে তোলেন। সড়ক, সেতু, সরাইখানা, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেন এবং অনেক দৈত্যাকার দিঘি খনন করেন। যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইলের উত্তরের নলদি পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর শাসিত খলিফাতাবাদ পরগনা। ভৈরব নদীর তীরঘেঁষা বর্তমান বাগেরহাট শহরই ছিল খলিফাতাবাদ শহর তথা খলিফাতাবাদ রাজ্যের রাজধানী। এটি সেকালে দুর্গবেষ্টিত এক সুরক্ষিত ও পরিকল্পিত শহর ছিল। খলিফাতাবাদে একটি টাঁকশাল এবং প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিল। মারুলি কসবা, পৈগ্রাম কসবা ও বারো বাজার নামে আরও তিনটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ষাট গম্বুজ মসজিদ: ষাট গম্বুজ মসজিদের গায়ে কোনো শিলালিপি না থাকলেও অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এটি খানজাহান আলীরই (রহ.) নির্মাণ। শাসক হিসেবে এটিই ছিল তাঁর দরবার হল এবং আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে এটিই ছিল তাঁর খানকা। এখানে বসেই তিনি খলিফাতাবাদ পরিচালনা করতেন এবং নামাজের সময় সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলীতে নির্মিত মসজিদটি বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১৪৩ ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় সাড়ে ৮ ফুট। মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৮১টি। মসজিদের ভেতরে রয়েছে ৬০টি স্তম্ভ। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে রয়েছে সুপরিসর উঠোন। পশ্চিমে রয়েছে বিশাল ঘোড়াদিঘি। বের হওয়ার জন্য রয়েছে তিন পাশে ২৫টি খিলান দরজা। মেহরাবের সংখ্যা ১০টি। মাঝের মেহরাবটি কারুকাজ করা। এর পাশেই রয়েছে একটি ছোট দরজা। মসজিদে কোনো সমান্তরাল ছাদ নেই; গম্বুজই মসজিদের ছাদ। ষাট গম্বুজ মসজিদ কাছ থেকে দেখলে সেকালের নিখুঁত নির্মাণশিল্পের প্রশংসা না করে উপায় নেই।
অন্যান্য স্থাপনা: চট্টগ্রামের সুফিসাধক বায়েজিদ বোস্তামির সঙ্গে খানজাহান আলীর (রহ.) সখ্যের কথা জানা যায়। এ কারণেই বাগেরহাট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ করেছিলেন, যার কিছু অংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয় এবং সেটিকে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাংলা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো মহাসড়কের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া মসজিদকুড় মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, এক গম্বুজ মসজিদ, নিজের সমাধিসৌধ তাঁর উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। খলিফাতাবাদে অসংখ্য দিঘি খনন করেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত দিঘি হলো ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিমে ১০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ঘোড়াদিঘি এবং তাঁর সমাধির পাশে ১৮০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ঠাকুরদিঘি বা খানজাহান আলী দিঘি।
খলিফাতাবাদের অসংখ্য স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শহরটি ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে। খানজাহান আলী (রহ.) ১৪৫৯ সালের ২৫ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর নিজের তৈরি সৌধে সমাহিত হন।
সূত্র: স্থাপনাগুলোর লিপি এবং বাংলাপিডিয়া
খানজাহান আলীর আগমন: খানজাহান আলীর (রহ.) জন্ম দিল্লিতে, ১৩৬৯ সালে। দিল্লিতে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। দিল্লিতে তুঘলক সুলতানদের শাসনামলে তিনি আমিরের পদমর্যাদা লাভ করেন। ১৩৯৮ সালে তৈমুর লংয়ের দিল্লি আক্রমণের পর, পনেরো শতকের শুরুতেই তিনি বাংলার বৃহত্তর যশোর ও খুলনা অঞ্চলে আসেন। এখানে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন, একটি সমৃদ্ধ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার নাম দেন খলিফাতাবাদ। শাসক হিসেবে তাঁর উপাধি ছিল উলুঘ খান ও খান-ই-আজম। কথিত আছে, কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামের দুটি কুমিরের পিঠে চড়ে তিনি বাগেরহাটে এসেছিলেন। বাঘের হাট জাদুঘরে এখনো কুমির দুটির চামড়া সংরক্ষিত আছে। ঐতিহাসিক ঘোড়াদিঘির কুমিরগুলো এই দুই কুমিরের বংশজাত বলেও ধারণা করা হয়।
খলিফাতাবাদ প্রতিষ্ঠা: প্রথমে দিল্লির সুলতান থেকে, পরে গৌড়ের সুলতান থেকে খানজাহান আলী (রহ.) সুন্দরবন অঞ্চলের জায়গির লাভ করেন। তখন গৌড়ের শাসক ছিলেন নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ। সুন্দরবনের আশপাশের বন-জঙ্গল আবাদ করে সেখানে তিনি কয়েকটি শহর গড়ে তোলেন। সড়ক, সেতু, সরাইখানা, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেন এবং অনেক দৈত্যাকার দিঘি খনন করেন। যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইলের উত্তরের নলদি পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর শাসিত খলিফাতাবাদ পরগনা। ভৈরব নদীর তীরঘেঁষা বর্তমান বাগেরহাট শহরই ছিল খলিফাতাবাদ শহর তথা খলিফাতাবাদ রাজ্যের রাজধানী। এটি সেকালে দুর্গবেষ্টিত এক সুরক্ষিত ও পরিকল্পিত শহর ছিল। খলিফাতাবাদে একটি টাঁকশাল এবং প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিল। মারুলি কসবা, পৈগ্রাম কসবা ও বারো বাজার নামে আরও তিনটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ষাট গম্বুজ মসজিদ: ষাট গম্বুজ মসজিদের গায়ে কোনো শিলালিপি না থাকলেও অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এটি খানজাহান আলীরই (রহ.) নির্মাণ। শাসক হিসেবে এটিই ছিল তাঁর দরবার হল এবং আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে এটিই ছিল তাঁর খানকা। এখানে বসেই তিনি খলিফাতাবাদ পরিচালনা করতেন এবং নামাজের সময় সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলীতে নির্মিত মসজিদটি বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১৪৩ ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় সাড়ে ৮ ফুট। মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৮১টি। মসজিদের ভেতরে রয়েছে ৬০টি স্তম্ভ। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে রয়েছে সুপরিসর উঠোন। পশ্চিমে রয়েছে বিশাল ঘোড়াদিঘি। বের হওয়ার জন্য রয়েছে তিন পাশে ২৫টি খিলান দরজা। মেহরাবের সংখ্যা ১০টি। মাঝের মেহরাবটি কারুকাজ করা। এর পাশেই রয়েছে একটি ছোট দরজা। মসজিদে কোনো সমান্তরাল ছাদ নেই; গম্বুজই মসজিদের ছাদ। ষাট গম্বুজ মসজিদ কাছ থেকে দেখলে সেকালের নিখুঁত নির্মাণশিল্পের প্রশংসা না করে উপায় নেই।
অন্যান্য স্থাপনা: চট্টগ্রামের সুফিসাধক বায়েজিদ বোস্তামির সঙ্গে খানজাহান আলীর (রহ.) সখ্যের কথা জানা যায়। এ কারণেই বাগেরহাট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ করেছিলেন, যার কিছু অংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয় এবং সেটিকে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাংলা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো মহাসড়কের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া মসজিদকুড় মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, এক গম্বুজ মসজিদ, নিজের সমাধিসৌধ তাঁর উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। খলিফাতাবাদে অসংখ্য দিঘি খনন করেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত দিঘি হলো ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিমে ১০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ঘোড়াদিঘি এবং তাঁর সমাধির পাশে ১৮০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ঠাকুরদিঘি বা খানজাহান আলী দিঘি।
খলিফাতাবাদের অসংখ্য স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শহরটি ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে। খানজাহান আলী (রহ.) ১৪৫৯ সালের ২৫ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর নিজের তৈরি সৌধে সমাহিত হন।
সূত্র: স্থাপনাগুলোর লিপি এবং বাংলাপিডিয়া
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে