জাতীয় পাট দিবস: জেল্লা নেই সোনালি আঁশে

সৌগত বসু, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৮: ২০

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কৃষক সুমন খাঁ। তাঁর নিজের ফসলি জমি ১৩০ শতাংশ। প্রতিবছরই পাটের মৌসুমে এ জমিতে তিনি পাট চাষ করেন। কিন্তু বিক্রি করে যা পান, তাতে গত কয়েক বছরে লাভের মুখ দেখেছেন খুব কম। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ হচ্ছে অনেক। এ কারণে লাভ কম হয়।

ফরিদপুরের বেশির ভাগ পাটচাষির অবস্থা এখন এমন। তাঁরা মনে করেন, খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি পাটকল বন্ধ থাকায়ও পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেক কৃষক। আগে যেখানে ধান চাষের পরই কৃষকেরা পাটের বীজ বুনতে আগ্রহী ছিলেন, এখন সে জায়গা দখল করেছে অন্য ফসল। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে পাট চাষের জমি। কমছে পাটের ফলন।

পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। কিন্তু এই সোনালি আঁশ ক্রমেই হারাচ্ছে জৌলুশ। পাটে আগের মতো আর জেল্লা নেই। এর মধ্যেই আজ সোমবার পালিত হচ্ছে জাতীয় পাট দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পাটশিল্পের অবদান—স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

কৃষক সুমনের পাট চাষের হিসাবটাই দেশে পাটের বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করেন একাধিক কৃষক। সুমন বলেন, পাটের আবাদে প্রতি পাকিতে (২৬ শতাংশ) শ্রমিক লাগে সাতজন, দিতে হয় ৮০০ টাকা করে। বীজ লাগে আড়াই কেজি, দাম ৭৫০ টাকা। বীজের চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। প্রতি শতাংশে সেচের খরচও বেড়েছে। আগে ছিল ২০ টাকা, এখন ৫০ টাকা।

সাধারণত চৈত্র মাসে পাটের বীজ বপন করেন সুমন। প্রতি পাকিতে (২৬ শতাংশ) যদি ৬ থেকে ৭ মণ পাট হয়, তবে মোট জমি থেকে পাট আসে প্রায় ৩৫ মণ। এই পাট বিক্রি হয় পরের বছর ভাদ্র মাসে। বিক্রির আগপর্যন্ত খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ছয় মাসের এ চক্র শেষে হাতে আসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এতে প্রতি মণে লাভ থাকে বড়জোর ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বর্তমানে দেশে পাট চাষ করেন এমন চাষি প্রায় ৪০ লাখ। আর চাষ হয় প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে। পাট অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে পাটকেন্দ্রিক পণ্যের উৎপাদন ও আয় কমেছে। ২০১৭-২০১৮ সালে মোট কাঁচা পাট উৎপাদন হয়েছিল ৯২ লাখ বেল। আর ২০২১-২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭১ লাখ বেল। কাঁচা পাট রপ্তানি ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১৪ লাখ বেল। তা ২০২১-২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ বেল।

পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পাটজাত দ্রব্য থেকে রপ্তানি আয় ২০১৭-১৮ সাল থেকে পরপর তিন বছর কমেছে। তবে ২০২১-২২ সালে বিশ্ববাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় রপ্তানি আয় বেড়ে হয় ৭ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।

অবশ্য পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তারের দাবি, ‘কোনো কিছুই কমেনি। বরং বেড়েছে।’ নিজের অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান পুরোপুরি সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদন দেখতে বলেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে দেশের আয় হয় ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ সালে ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার, ২০২০-২১ সালে ১১৬ কোটি ডলার এবং ২০২১-২২ সালে ১১২ কোটি টাকা।

সাধারণ ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে পাটের থলে ও বস্তা ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্যোগেও সাড়া নেই তেমন। এর উদ্ভাবক বিজেএমসির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমেদ খান বলেন, সোনালি ব্যাগ বাজারে আসতে অনেক সময় লাগবে।

দিবসটি উপলক্ষে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানান, দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের ওপর নির্ভরশীল। মোট পাটকলের সংখ্যা ২৬৮টি, যার মধ্যে সরকারি পাটকল ৩১টি ও বেসরকারি পাটকল ২৩৭টি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত