জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলায় এসে সেন বংশীয়দের কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেন ১২০৪ সালে। কিন্তু বাংলায় মুসলমানদের সেটিই প্রথম প্রবেশ নয়। এর অনেক আগে থেকেই আরব বণিকেরা বাণিজ্যের স্বার্থে বাংলায় আসতেন। চট্টগ্রামে আরবদের একটা উপনিবেশও ছিল। দক্ষিণের সমুদ্র পথেই ছিল বণিকদের যাওয়া-আসা।
মুসলিম জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডে তাদের স্বকীয় ভাষা, ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আসে। সে সময় এই অঞ্চলে হিন্দু রাষ্ট্রকাঠামোর অনেক দুর্বলতা ছিল। বর্ণপ্রথা-বিড়ম্বিত মানুষ সহজ মুক্তির পথ খুঁজছিল। হিন্দু সমাজপতিরা সহজে মুসলমানদের মেনে নেননি। বিশেষ করে প্রচলিত ধর্মব্যবস্থার জায়গায় একেবারে নতুন ধরনের ধর্মের আবাহন এই বৈরিতাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। ফলে বহিরাগত সংস্কৃতির সঙ্গে প্রচলিত সংস্কৃতির সংঘাত ছিল অনিবার্য। নতুনকে সহজে কেউ পথ ছেড়ে দেয় না। কিন্তু সেই সংঘাত ক্রমে সমন্বয়ের দিকে যেতে পারল স্রেফ এই কারণে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন ও অবক্ষয় নতুন একটা কিছু চাইছিল।
রাষ্ট্রশক্তি মুসলমানের হাতে চলে আসায় ইসলামের ভ্রাতৃত্বের আহ্বানে স্থানীয় অনেকেই আকৃষ্ট হন। ফলে সে সময় শুরু হয়ে যায় সামাজিক পুনর্গঠন। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষাগত বিনিময় ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকে। সাংস্কৃতিক বিনিময় মিলন ও ঐক্যের নির্ধারক হয়ে ওঠে। দুটি ভিন্ন সমাজব্যবস্থা পরস্পরের কাছাকাছি হলে প্রথমে সংঘাত অনিবার্য, এরপর থাকে সংশ্লেষণের পর্যায়। বাংলায় সমাজব্যবস্থাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ রকম সংঘাত ও সংশ্লেষণের মাধ্যমে এগিয়েছে।
সমাজে যে সংশ্লেষণ চলছিল, তা বোঝা যায় সাহিত্যের দিকে নজর দিলে। বাংলা জয় করে নিল মুসলিমরা। কিন্তু এরপর প্রায় দুই শ বছর অপেক্ষা করতে হলো মুসলমানদের হাতে সাহিত্য প্রকাশের জন্য। সে সময় মুসলমান সম্প্রদায় বাংলা ভাষার মধ্যে নিজেকে প্রকাশের অবলম্বন খুঁজে পেল। বলা হয়ে থাকে, বাংলায় মুসলিম বিজয়ের আড়াই শ বছর পর রুকুনউদ্দিন বারবক শাহের (১৪৫৫-৭৬) আমলে বাংলা কবিতার পুনর্জন্ম হয়। তাতে মনে হয়, এই সময়টায় যে ভাঙন, সমন্বয়, পরিবর্তন, বিবর্তনের খেলা চলে, তা স্থিত হওয়ার পরই কেবল উন্নত সাহিত্যের দেখা মেলে।
গোটা বাংলা জয় করতে মুসলিমদের লেগেছিল প্রায় দুই শ বছর। ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে ভাববার অবকাশ ছিল না। বাংলা যাঁরা জয় করেছিলেন, তাঁরা বাঙালি ছিলেন না; কিন্তু যে বাঙালি মুসলমানরা সাহিত্য রচনায় নিবিষ্ট হলেন, তাঁরা ছিলেন নির্ভেজাল বাঙালি। ধর্ম প্রচারের জন্য যে সুফি-সন্তরা বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁরাই মূলত ইসলামকে নিয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। সুফি সম্প্রদায় যেভাবে ইসলাম প্রচার করেছে এ দেশে, তা গোঁড়া সুন্নি আলেমদের মতো ছিল না। সুফিদের মরমিয়া রীতির সঙ্গে ভারতীয় তন্ত্রের সাযুজ্য সমাজে সুফি মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছিল। সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উদাহরণ দিতে গেলে সত্যনারায়ণী, মাইজভান্ডারি ও বাউল সম্প্রদায়ের কথা বলতে হবে। এই সম্প্রদায়গুলো যে হিন্দু-মুসলমানের ভেদরেখা তুলে দেওয়ার জন্য হার্দিকভাবে কাজ করেছে, সেটা বলতে হবে। যে সময় বাঙালি মুসলমানের সংখ্যা বহিরাগত তুর্কি, পাঠান, মোগলদের ছাড়িয়ে গেল, তখনই বাংলা সাহিত্যে মুসলমান লেখক-কবিদের আবির্ভাব ঘটল।
ষোড়শ শতকে মুসলিম সমাজের স্তরবিন্যাসের বর্ণনা দিয়েছিলেন মুকুন্দরাম। সে স্তরবিন্যাসে যেমন বিত্তবান অভিজাত মুসলমানদের দেখা পাওয়া যায়, তেমনি দরিদ্র বৃত্তিজীবীদেরও দেখা যায়। সমাজের অভিজাতরা ছিলেন পাঠান, মোগল, তুর্কি, আরব। তাঁরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফারসিকে। বলা যায়, সুলতানি আমলের শুরু থেকেই ফারসি ভাষা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ-সেতু। সুলতানদের অনেকেই ছিলেন ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত। সমগ্র ভারতবর্ষেই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সুপণ্ডিতেরা ফারসি ভাষায় অনেক বই লিখেছেন।
ফারসির ওই আধিপত্য চলেছে ঊনবিংশ শতকের গোড়া অবধি।
পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আলোচনাকে যখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি, তখনো উর্দু বলে কোনো ভাষার সন্ধান মিলছে না। অথচ ভাষা-প্রশ্নটি যখন এল, তখন বাংলা ও উর্দুই হয়ে উঠল মূল বিতর্কের বিষয়।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলায় এসে সেন বংশীয়দের কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেন ১২০৪ সালে। কিন্তু বাংলায় মুসলমানদের সেটিই প্রথম প্রবেশ নয়। এর অনেক আগে থেকেই আরব বণিকেরা বাণিজ্যের স্বার্থে বাংলায় আসতেন। চট্টগ্রামে আরবদের একটা উপনিবেশও ছিল। দক্ষিণের সমুদ্র পথেই ছিল বণিকদের যাওয়া-আসা।
মুসলিম জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডে তাদের স্বকীয় ভাষা, ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আসে। সে সময় এই অঞ্চলে হিন্দু রাষ্ট্রকাঠামোর অনেক দুর্বলতা ছিল। বর্ণপ্রথা-বিড়ম্বিত মানুষ সহজ মুক্তির পথ খুঁজছিল। হিন্দু সমাজপতিরা সহজে মুসলমানদের মেনে নেননি। বিশেষ করে প্রচলিত ধর্মব্যবস্থার জায়গায় একেবারে নতুন ধরনের ধর্মের আবাহন এই বৈরিতাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। ফলে বহিরাগত সংস্কৃতির সঙ্গে প্রচলিত সংস্কৃতির সংঘাত ছিল অনিবার্য। নতুনকে সহজে কেউ পথ ছেড়ে দেয় না। কিন্তু সেই সংঘাত ক্রমে সমন্বয়ের দিকে যেতে পারল স্রেফ এই কারণে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন ও অবক্ষয় নতুন একটা কিছু চাইছিল।
রাষ্ট্রশক্তি মুসলমানের হাতে চলে আসায় ইসলামের ভ্রাতৃত্বের আহ্বানে স্থানীয় অনেকেই আকৃষ্ট হন। ফলে সে সময় শুরু হয়ে যায় সামাজিক পুনর্গঠন। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষাগত বিনিময় ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকে। সাংস্কৃতিক বিনিময় মিলন ও ঐক্যের নির্ধারক হয়ে ওঠে। দুটি ভিন্ন সমাজব্যবস্থা পরস্পরের কাছাকাছি হলে প্রথমে সংঘাত অনিবার্য, এরপর থাকে সংশ্লেষণের পর্যায়। বাংলায় সমাজব্যবস্থাও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ রকম সংঘাত ও সংশ্লেষণের মাধ্যমে এগিয়েছে।
সমাজে যে সংশ্লেষণ চলছিল, তা বোঝা যায় সাহিত্যের দিকে নজর দিলে। বাংলা জয় করে নিল মুসলিমরা। কিন্তু এরপর প্রায় দুই শ বছর অপেক্ষা করতে হলো মুসলমানদের হাতে সাহিত্য প্রকাশের জন্য। সে সময় মুসলমান সম্প্রদায় বাংলা ভাষার মধ্যে নিজেকে প্রকাশের অবলম্বন খুঁজে পেল। বলা হয়ে থাকে, বাংলায় মুসলিম বিজয়ের আড়াই শ বছর পর রুকুনউদ্দিন বারবক শাহের (১৪৫৫-৭৬) আমলে বাংলা কবিতার পুনর্জন্ম হয়। তাতে মনে হয়, এই সময়টায় যে ভাঙন, সমন্বয়, পরিবর্তন, বিবর্তনের খেলা চলে, তা স্থিত হওয়ার পরই কেবল উন্নত সাহিত্যের দেখা মেলে।
গোটা বাংলা জয় করতে মুসলিমদের লেগেছিল প্রায় দুই শ বছর। ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে ভাববার অবকাশ ছিল না। বাংলা যাঁরা জয় করেছিলেন, তাঁরা বাঙালি ছিলেন না; কিন্তু যে বাঙালি মুসলমানরা সাহিত্য রচনায় নিবিষ্ট হলেন, তাঁরা ছিলেন নির্ভেজাল বাঙালি। ধর্ম প্রচারের জন্য যে সুফি-সন্তরা বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁরাই মূলত ইসলামকে নিয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। সুফি সম্প্রদায় যেভাবে ইসলাম প্রচার করেছে এ দেশে, তা গোঁড়া সুন্নি আলেমদের মতো ছিল না। সুফিদের মরমিয়া রীতির সঙ্গে ভারতীয় তন্ত্রের সাযুজ্য সমাজে সুফি মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছিল। সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উদাহরণ দিতে গেলে সত্যনারায়ণী, মাইজভান্ডারি ও বাউল সম্প্রদায়ের কথা বলতে হবে। এই সম্প্রদায়গুলো যে হিন্দু-মুসলমানের ভেদরেখা তুলে দেওয়ার জন্য হার্দিকভাবে কাজ করেছে, সেটা বলতে হবে। যে সময় বাঙালি মুসলমানের সংখ্যা বহিরাগত তুর্কি, পাঠান, মোগলদের ছাড়িয়ে গেল, তখনই বাংলা সাহিত্যে মুসলমান লেখক-কবিদের আবির্ভাব ঘটল।
ষোড়শ শতকে মুসলিম সমাজের স্তরবিন্যাসের বর্ণনা দিয়েছিলেন মুকুন্দরাম। সে স্তরবিন্যাসে যেমন বিত্তবান অভিজাত মুসলমানদের দেখা পাওয়া যায়, তেমনি দরিদ্র বৃত্তিজীবীদেরও দেখা যায়। সমাজের অভিজাতরা ছিলেন পাঠান, মোগল, তুর্কি, আরব। তাঁরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফারসিকে। বলা যায়, সুলতানি আমলের শুরু থেকেই ফারসি ভাষা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ-সেতু। সুলতানদের অনেকেই ছিলেন ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত। সমগ্র ভারতবর্ষেই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সুপণ্ডিতেরা ফারসি ভাষায় অনেক বই লিখেছেন।
ফারসির ওই আধিপত্য চলেছে ঊনবিংশ শতকের গোড়া অবধি।
পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আলোচনাকে যখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি, তখনো উর্দু বলে কোনো ভাষার সন্ধান মিলছে না। অথচ ভাষা-প্রশ্নটি যখন এল, তখন বাংলা ও উর্দুই হয়ে উঠল মূল বিতর্কের বিষয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে