জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
সকালের সভাটি আমতলায় হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দরজা দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলগুলো বেরিয়েছিল একের পর এক, সে কথা আগেও বলেছি। সামনের রাস্তায় পুলিশের নৃশংসতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেতরের ছোট দরজা পেরিয়ে সবাই প্রথমে মেডিকেল কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন এবং এরপর মেডিকেলের ভেতর দিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে যেতে চাইছিলেন।
বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করতে পারেন, এখনকার অপরাজেয় বাংলার আশপাশে কোথাও ছিল সেই আমতলা, যেখানে দাঁড়িয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আবদুল মতিন বক্তৃতা করেছিলেন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে, সভার সভাপতি গাজীউল হকও ১৪৪ ধারা ভাঙার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেছিলেন এবং তখনই আবদুস সামাদের পরামর্শে ১০ জন করে একেকটি খণ্ড মিছিল বেরিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে। কিন্তু বর্তমান ‘আর্টস বিল্ডিং’ বা কলা ভবনের কাছে ওই ঘটনা ঘটেনি।
১৯৫২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বর্তমান মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের কাছে। অর্থাৎ এই বিশাল ভবনের একটা অংশ নিয়ে ছিল আর্টস বিল্ডিং, আর বাকি পুরোটা ছিল মেডিকেল কলেজ। তার মানে, বর্তমান জরুরি বিভাগের কাছেই গাজীউল হকের সভাপতিত্বে আমতলার বৈঠকটি হয়েছিল। মধুর ক্যানটিনও ছিল সেখানে। মেডিকেল ব্যারাকগুলো অর্থাৎ মেডিকেল ছাত্রাবাস ছিল বর্তমান শহীদ মিনার এবং মেডিকেল বহির্বিভাগের জায়গাগুলোতে। নার্স হোস্টেল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ব্যারাক নামের ছাত্রাবাসগুলো। ভাষাসংগ্রামী সাঈদ হায়দার তাঁর বইয়ে মেডিকেল ব্যারাকগুলোর ছবি দিয়েছেন, যা থেকে বোঝা যায়, কোথা থেকে কত দূর ছিল আন্দোলনের বিস্তৃতি।
আরও সহজ করে বলা যায়, বর্তমান মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের কাছ থেকেই আন্দোলনের শুরু। এরপর তা এগিয়েছে শহীদ মিনার পর্যন্ত। বহির্বিভাগের কাছে ছিল মেডিকেল ব্যারাকগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি আর ব্যারাকের মাঝখানে ছিল মেডিকেল কলেজ। এখনকার জগন্নাথ হলে ছিল প্রাদেশিক পরিষদ ভবন। সেখানেই তখন হচ্ছিল বাজেট অধিবেশন।
দুপুরের দিকে যখন সামনের রাস্তা দিয়ে পরিষদ সদস্যরা অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন ছাত্ররা তাঁদের থামিয়ে নিজেদের দাবি জানাচ্ছিলেন এবং পরিষদে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গটি তোলার জন্য তাঁদের কাছ থেকে কথা আদায় করছিলেন। সে সময় পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল মেডিকেল কলেজের সামনের দিকে।
আগের তুলনায় বায়ান্ন সালের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যোগদান অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বায়ান্ন সালে ভাষা আন্দোলন না হলে বিরোধী দল কখনো পূর্ব পাকিস্তান থেকে নূরুল আমীনের মুসলিম লীগ সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হতো না। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়ী হতে পারত না।
ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি নিজের সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়েছিল। কিংবা বলা যায়, বাঙালি মুসলমান তার মূল পরিচয় যে বাঙালি, সে কথা বুঝতে পেরেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের পূর্বপুরুষদের ঠিকানা খোঁজা বন্ধ করে নিজ দেশের ঐতিহ্য ও অর্জনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছিল।
আন্দোলনের প্রচারকাজের সুবিধার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে প্রথম ‘কন্ট্রোল রুম’ স্থাপিত হয়েছিল। পরিষদ ভবনের নিকটতম ব্যারাকের ১ নম্বর কক্ষের সেই কন্ট্রোল রুম থেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙার গতিবিধি পর্যালোচনা করা হচ্ছিল।
স্পিকার লাগানো হয়েছিল হোস্টেলের উত্তর-পশ্চিম কোণে আমগাছের ডালে, একেবারে পরিষদ ভবনের নাকের ডগায়। অনেকে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন পুলিশি জুলুমের। পরিষদ ভবনে গমনেচ্ছু সদস্যদের দেখা পেলেই ধরে নিয়ে আসা হচ্ছিল ব্যারাকে, বোঝানো হচ্ছিল পরিস্থিতির গুরুত্ব। গুলিবর্ষণের পর ছাত্র-জনতার দিক থেকে পুরো অবস্থার গুণগত পরিবর্তন দেখা গেল। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে হলেও সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণকে একই প্রতিবাদী বিন্দুতে নিয়ে আসে।
সকালের সভাটি আমতলায় হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দরজা দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলগুলো বেরিয়েছিল একের পর এক, সে কথা আগেও বলেছি। সামনের রাস্তায় পুলিশের নৃশংসতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেতরের ছোট দরজা পেরিয়ে সবাই প্রথমে মেডিকেল কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন এবং এরপর মেডিকেলের ভেতর দিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে যেতে চাইছিলেন।
বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করতে পারেন, এখনকার অপরাজেয় বাংলার আশপাশে কোথাও ছিল সেই আমতলা, যেখানে দাঁড়িয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আবদুল মতিন বক্তৃতা করেছিলেন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে, সভার সভাপতি গাজীউল হকও ১৪৪ ধারা ভাঙার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেছিলেন এবং তখনই আবদুস সামাদের পরামর্শে ১০ জন করে একেকটি খণ্ড মিছিল বেরিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে। কিন্তু বর্তমান ‘আর্টস বিল্ডিং’ বা কলা ভবনের কাছে ওই ঘটনা ঘটেনি।
১৯৫২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বর্তমান মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের কাছে। অর্থাৎ এই বিশাল ভবনের একটা অংশ নিয়ে ছিল আর্টস বিল্ডিং, আর বাকি পুরোটা ছিল মেডিকেল কলেজ। তার মানে, বর্তমান জরুরি বিভাগের কাছেই গাজীউল হকের সভাপতিত্বে আমতলার বৈঠকটি হয়েছিল। মধুর ক্যানটিনও ছিল সেখানে। মেডিকেল ব্যারাকগুলো অর্থাৎ মেডিকেল ছাত্রাবাস ছিল বর্তমান শহীদ মিনার এবং মেডিকেল বহির্বিভাগের জায়গাগুলোতে। নার্স হোস্টেল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ব্যারাক নামের ছাত্রাবাসগুলো। ভাষাসংগ্রামী সাঈদ হায়দার তাঁর বইয়ে মেডিকেল ব্যারাকগুলোর ছবি দিয়েছেন, যা থেকে বোঝা যায়, কোথা থেকে কত দূর ছিল আন্দোলনের বিস্তৃতি।
আরও সহজ করে বলা যায়, বর্তমান মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের কাছ থেকেই আন্দোলনের শুরু। এরপর তা এগিয়েছে শহীদ মিনার পর্যন্ত। বহির্বিভাগের কাছে ছিল মেডিকেল ব্যারাকগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি আর ব্যারাকের মাঝখানে ছিল মেডিকেল কলেজ। এখনকার জগন্নাথ হলে ছিল প্রাদেশিক পরিষদ ভবন। সেখানেই তখন হচ্ছিল বাজেট অধিবেশন।
দুপুরের দিকে যখন সামনের রাস্তা দিয়ে পরিষদ সদস্যরা অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন ছাত্ররা তাঁদের থামিয়ে নিজেদের দাবি জানাচ্ছিলেন এবং পরিষদে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গটি তোলার জন্য তাঁদের কাছ থেকে কথা আদায় করছিলেন। সে সময় পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল মেডিকেল কলেজের সামনের দিকে।
আগের তুলনায় বায়ান্ন সালের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যোগদান অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বায়ান্ন সালে ভাষা আন্দোলন না হলে বিরোধী দল কখনো পূর্ব পাকিস্তান থেকে নূরুল আমীনের মুসলিম লীগ সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হতো না। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়ী হতে পারত না।
ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি নিজের সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকিয়েছিল। কিংবা বলা যায়, বাঙালি মুসলমান তার মূল পরিচয় যে বাঙালি, সে কথা বুঝতে পেরেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের পূর্বপুরুষদের ঠিকানা খোঁজা বন্ধ করে নিজ দেশের ঐতিহ্য ও অর্জনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছিল।
আন্দোলনের প্রচারকাজের সুবিধার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে প্রথম ‘কন্ট্রোল রুম’ স্থাপিত হয়েছিল। পরিষদ ভবনের নিকটতম ব্যারাকের ১ নম্বর কক্ষের সেই কন্ট্রোল রুম থেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙার গতিবিধি পর্যালোচনা করা হচ্ছিল।
স্পিকার লাগানো হয়েছিল হোস্টেলের উত্তর-পশ্চিম কোণে আমগাছের ডালে, একেবারে পরিষদ ভবনের নাকের ডগায়। অনেকে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন পুলিশি জুলুমের। পরিষদ ভবনে গমনেচ্ছু সদস্যদের দেখা পেলেই ধরে নিয়ে আসা হচ্ছিল ব্যারাকে, বোঝানো হচ্ছিল পরিস্থিতির গুরুত্ব। গুলিবর্ষণের পর ছাত্র-জনতার দিক থেকে পুরো অবস্থার গুণগত পরিবর্তন দেখা গেল। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে হলেও সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণকে একই প্রতিবাদী বিন্দুতে নিয়ে আসে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে