একজন ‘ভাড়া’ শিক্ষকে চলে ৫ শিক্ষকের স্কুল

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ১০

বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেসপাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার শিক্ষকের প্রায় ৯ মাস ধরে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অনুপস্থিত চার শিক্ষকের মধ্যে তিনজন বান্দরবান সদর ও অন্যজন চট্টগ্রামে থাকেন।

এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আছেন রুমা সদরের থানাপাড়ায়। অনুপস্থিত শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে একজনকে ভাড়ায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে না গিয়েও এসব শিক্ষক নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে ভোগ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রুমায় স্থানীয়ভাবে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) স্কুল হিসেবে পরিচিত ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয়করণ করা হয়। এর মধ্যে কেসপাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান সাইপা খুমী ও জনথুমা ত্রিপুরা।

সাইপা খুমী বলেন, ‘চলতি বছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে গত জানুয়ারিতে প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেবজ্যোতি দাশ নামের তিনজন শিক্ষক যোগদান করেন। সব মিলিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচজনে। আর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৬ জন। সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া এই তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন না।

বান্দরবান সদরে শিক্ষক প্রশিক্ষণে রয়েছেন উল্লেখ করে সাইপা খুমী বলেন, ‘বান্দরবান থেকে আসা নতুন প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেবজ্যোতি দাশ নামের এই তিনজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের সময় এসেছিলেন। পরে তাঁদের বারবার বলার পরও বিদ্যালয়ে আসেননি। এরপর সবাই মিলে প্রাইভেট (ব্যক্তিগত) শিক্ষক হিসেবে এক ছেলেকে রেখেছিলেন জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।’

গত ১ জুলাই বান্দরবান শহরে প্রশিক্ষণে আসার সময় শিক্ষক জনথুমা ত্রিপুরাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে সাইপা খুমী বলেন, ‘এখন বিদ্যালয়ে কাকে বর্গা শিক্ষক রাখছে, নিয়োগপ্রাপ্ত চারজন শিক্ষক নিয়মিত উপস্থিত, নাকি অনুপস্থিতি, তা বলতে পারছি না।’

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনথুমা ত্রিপুরা বলছেন, তাঁর সহকর্মী প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেবজ্যোতি দাশকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময় কল করে বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে; কিন্তু তাঁরা আসেননি।

জনথুমা ত্রিপুরা আরও বলেন, ‘আমি একজন নারী। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বান্দরবান থেকে সহকর্মী তিন শিক্ষক না আসায় জুলাই থেকে আজকের (১৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ দাশ বলেন, ‘বিদ্যালয়টি দুর্গম এলাকা হওয়ার পাশাপাশি সেখানে থাকা খাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। শহরে ছোট থেকে বড় হয়েছি। ফলে সেখানকার পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারছি না। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি থাকার এটা অন্যতম কারণ।’

আরেক শিক্ষক দেবজ্যোতি বিদ্যালয়ে যোগদানের ১০ মাস পর অনুপস্থিত না থাকার বিষয়ে বলেন, ‘২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর যোগদানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। তবে ১৫ দিন আগে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত দরখাস্ত দিয়ে বেতন-ভাতা হালাল করে আসছি।’

বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক মোহাম্মদ আসরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লো-এ খুমী বলেন, ‘শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত না করা গেলে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

জানতে চাইলে রুমা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, ‘সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার এসব বিদ্যালয় দেখার দায়িত্ব। তিনি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবেন। পরে যাচাই-বাছাই করে তিনি না পারলে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন, এটিই নিয়ম।’

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার ধর বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। ফিরে তদন্ত করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত