শিক্ষায় প্রভাব বাড়ছে বেসরকারি খাতের: ইউনেসকো

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ২৪
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৪০

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ভূমিকা ও প্রভাব বাড়ছে। এখানে প্রাক্-প্রাথমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৫ ভাগই বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত। আর প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২৪ ভাগ, মাধ্যমিকের ৯৪ ভাগ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ৩৬ ভাগ বেসরকারি খাতের।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা যায়। বাংলাদেশের এনজিও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন দেশের মোট ছয়টি সংস্থা এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষায় অর্ধেকেরও বেশি শিশু নিবন্ধিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও স্কুল, ধর্মীয় স্কুলসহ বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। এ হার সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক স্তরে। এই পর্যায়ে কিন্ডারগার্টেন নামে পরিচিত ২৯ হাজার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান একই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২২ শতাংশ। বিশ্বের দেশে দেশে মাধ্যমিক শিক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৯৪ শতাংশ।

শিক্ষায় বাংলাদেশে জিডিপির আড়াই ভাগের কম ব্যবহার করছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের পর বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫ ভাগের কম ব্যয় করেছে। এটি প্রস্তাবিত ৪ ভাগ থেকে যথেষ্ট কম। এ কারণে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার মান ঠিক করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগ মেটাতে হয় পরিবার থেকে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ হার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বেসরকারি খাতের জোরালো অবস্থান রয়েছে। ২০১২ সালে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল তিন হাজার, ২০১৯ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজারে। অথচ সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ শতাধিক। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মান সব সময় একই ধরনের থাকে না। এসব প্রতিষ্ঠানের ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাত্র ৩৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী ভালো ফল করে।

বাংলাদেশে শিক্ষকেরা মূলত বেসরকারি খাত দ্বারা প্রশিক্ষিত জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ ভাগের বেশি শিক্ষকের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪০ ভাগের বেশি শিক্ষক বিএড ডিগ্রি পেয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষার জন্য ২০০০ সালে গ্রামের পরিবারগুলো থেকে অর্থ প্রদান করা হতো ২৮ শতাংশ। ২০১০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ ভাগ হয়েছে, শহরাঞ্চলে যা ৪৮ থেকে ৬৭ ভাগ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ ভাগ শিশুশিক্ষার্থী বেসরকারি শিক্ষায় অংশ নেয়।

প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে মোট পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো প্রাক্-প্রাথমিকে ১ বছর এবং প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট ১২ বছর বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া এবং মান নির্ধারণ করে দেওয়া; সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম এবং পরীক্ষার জন্য একই ধরনের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা; শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে উদ্ভাবনকে সহজ করা এবং শিক্ষানীতি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তি এবং অখণ্ডতা বজায় রাখা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বেসরকারি শিক্ষা বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু এ অঞ্চলে শেখার মাত্রা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বেসরকারি শিক্ষার প্রসারের কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার চাপ এবং সরকারি স্কুলগুলোর প্রতি অসন্তোষ বেসরকারি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারণ। আর বেসরকারি শিক্ষা খাত দক্ষিণ এশিয়ায় খুবই প্রভাবশালী।

প্রতিবেদনে ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিংয়ের পরিচালক মানোস আন্তোনিনিস বলেন, এই মুহূর্তে লাখ লাখ শিশুর কোনো শিক্ষাই থাকত না, যদি বেসরকারি খাত শূন্যস্থান পূরণ করতে না আসত। কিন্তু এ ব্যবস্থার ওপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস (আতশি কাচ) লাগানো উচিত, যাতে লাভ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য থাকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত