Ajker Patrika

জনবলসংকটে ভোগান্তি বগুড়ার দুই হাসপাতালে

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
জনবলসংকটে ভোগান্তি বগুড়ার দুই হাসপাতালে

বগুড়ার প্রধান দুই হাসপাতালে জনবলসংকটে চিকিৎসাসেবা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। এ কারণে এখানকার দুটি সরকারি হাসপাতাল- ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে সেবা এবং হাসপাতালও থাকছে অপরিচ্ছন্ন।

শজিমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাব সবচেয়ে বেশি। অস্ত্রোপচার কক্ষেরও সংকট। এ কারণে অস্ত্রোপচারের সুযোগ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

শজিমেকে ডারমাটোলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, পেড্রিয়াটিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি বিভাগে ইনডোর মেডিকেল অফিসার নেই। এই বিভাগগুলোতে নেই সহকারী রেজিস্ট্রারও। ডারমাটোলজি বিভাগে একজন সহকারী রেজিস্ট্রার থাকলেও তিনি বহির্বিভাগে রোগী দেখেন, ভর্তি রোগীদের দেখেন না।

চিকিৎসকের এই সংকটে দীর্ঘায়িত হচ্ছে রোগীদের অস্ত্রোপচারও। এমনকি জটিল অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পেতে সময় লাগছে। নিউরোসার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পেতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগছে।

সম্প্রতি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে ১ মাস ১০ দিন হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ছিলেন জেলি বেগম। তিনি বলেন, ‘ভর্তি থাকতে থাকতে ছেলের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। একসময় অজ্ঞান হয়্যা গেল। তবু অপারেশনের সিরিয়াল পাইনি। যখন সিরিয়াল পানু তখন আর অপারেশনে জ্ঞান ফেরেনি। পরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠাইছে ছেলেক। এখন ছেলের ক্যানসার ধরা পড়ছে। সময়মতো অপারেশন করলে হয়তো ছেলে সুস্থ হলোনি।’ 
শজিমেক উপাধ্যক্ষ নিউরো সার্জারি বিভাগের সুশান্ত কুমার বলেন, ‘সম্প্রতি রোগীর চাপ খুব বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। সপ্তাহে একদিন অপারেশন হয়। তাই সিরিয়াল দীর্ঘ হয়ে যায়।’

জানা গেছে, শজিমেক হাসপাতালে ২২৩ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে শূন্য আছে ৩৩টি। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার আটটি পদের পাঁচটিই শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ১৭২টি পদের মধ্যে শূন্য ৫৫টি। চতুর্থ শ্রেণির ৪১৫টি পদের মধ্যে শূন্য পদ ১১৮টি।

শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘হাসপাতালের শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে নিয়মিতই চিঠি দিচ্ছি। কিছু পদ পূরণ হয়েছে। ডাক্তারের পাশাপাশি হাসপাতালের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে, যেন প্রত্যেক বিভাগে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন অপারেশন করা যায়। সে লক্ষ্যে হাসপাতাল এক্সটেনশনের প্রক্রিয়া চলছে।’

এদিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং মেডিকেল টেকনোলজি বিভাগে জনবলসংকট তীব্র। চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে নাক কান গলা বিভাগ।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সালেহা বেগম (৪৫) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালটি বাড়ির কাছে হওয়ায় যেকোনো অসুখে পরিবারের সবাই এখানেই আসি চিকিৎসা নিতে। কিন্তু প্রায়ই কোনো জটিল সমস্যা হলে আমাদের রেফার করা হয় জিয়া মেডিকেলে। সেবা না পেয়েও সেখানে যেতে বাধ্য হই। কয়েক বছর আগেও এখানে আমার মেয়ের গলার টনসিল অপারেশন করিয়েছি। কিন্তু এখন শুনি, নাক কান গলা বিভাগে কোনো ডাক্তারই নেই এখানে।’

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের পদ শূন্য আছে ১০টি। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ৬০টি পদের মধ্যে শূন্য ২৪টি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১০৬টি পদের বিপরীতে শূন্য পদ ২৭টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, ‘শজিমেক হাসপাতাল হওয়ায় আমাদের এখানে এমনিতেই চাপ কমেছে। অনেক রোগী আগ্রহী হয়ে মেডিকেলে যান। কিছু চিকিৎসকও ট্রান্সফার নিয়ে মেডিকেলে জয়েন করেছেন। শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মিডিয়া ছুটায় দেব, চেনো আমাদের’—সাংবাদিককে হুমকি কুড়িগ্রামের এসপির

মেঘনা আলম ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’, কারণ জানাল পুলিশ

বান্দরবান, মণিপুর, মিজোরাম ও রাখাইন নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে: বজলুর রশীদ

ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি যোগ দিলেন জামায়াতে

যশোরে সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর মরদেহ: ভিসেরা প্রতিবেদনে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত