রোকেয়া রহমান
চন্দ্রযান-৩ এখন চাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উড্ডয়নের কয়েক মুহূর্ত পরেই পৃথিবীর পাশের কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছে যায় চন্দ্রযান। এরপর শুরু হয় চাঁদের পথে পাড়ি।
পৃথিবী থেকে ৪১ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার দূরে যাচ্ছে এটি। আগামী ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি একটি স্থানে এটির অবতরণ করার কথা রয়েছে। চন্দ্রযান-৩-এ থাকছে একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ আর রোভার ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে।
এই অভিযান সফল হলে ভারত হবে চতুর্থ দেশ, যারা চাঁদের পিঠে পৌঁছাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছে।
যদিও সবাই চন্দ্রযান-৩-এর মসৃণ অবতরণের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু এর যাত্রার আগে গোটা বিষয় ছিল জটিলতায় ভরা, অনেকটা ইউলিসিসের ইথাকার পথে যাত্রার মতো। আর এই সবকিছু আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে।
সারা দেশের মানুষ চন্দ্রযান-৩-এর এই যাত্রা দেখেছে। এলভিএম-৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি ছিল অসাধারণ। শ্রীহরিকোটায় হাজার হাজার স্কুলের বাচ্চা উল্লাসে মেতে ওঠে, যা সারা দেশে স্কুলের মাঠ, বাজার-ঘাট, মানুষের ভিড়ে এবং পরিবারজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেন ভারতের জাতীয় দল একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ জিতেছে। করোনা মহামারির পর থেকে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রবেশ, অনলাইন আলোচনা এবং সংবাদ প্রচার ব্যাপক হয়ে উঠেছে। সবাই এই উৎক্ষেপণ দেখেছে এবং তারা উল্লাস করেছে।
১৯৫৭ সালে রাশিয়া স্পুতনিক উৎক্ষেপণ করার সময় ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানের জনক বিক্রম সারাভাই বলেছিলেন: ‘এমন অনেক লোক আছেন, যাঁরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমাদের কাছে এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। চাঁদ বা গ্রহ অনুসন্ধানে বা মানববাহী মহাকাশ ফ্লাইট নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার বিলাসী কল্পনা আমাদের নেই। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে আমরা যদি জাতীয়ভাবে একটি অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চাই, তবে মানুষ ও সমাজের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই কারোর পেছনে থাকা চলবে না।’
এই বিক্রম সারাভাই ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছিল।
ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জন্য চন্দ্রযান-৩-এর তাৎপর্য অপরিসীম। মিশনটি ভারতের চন্দ্র-অন্বেষণ কর্মসূচির একটি বড় পদক্ষেপ এবং এটি চাঁদ সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে নিশ্চিত। এটা এই কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে এটি ভারতের সক্ষমতা দেখাবে এবং বিশ্ব মহাকাশ সম্প্রদায়ের কাছে তার খ্যাতি বয়ে আনবে, যা দেশের মহাকাশশিল্পে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সহায়তা করবে।
তবে এটা খুবই বেদনাদায়ক যে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ভারতের বেসরকারি খাতের মহাকাশ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ খুবই সামান্য। অথচ মহাকাশ নিয়ে ব্যবসার আন্তর্জাতিক বাজার এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের। এর পরিবর্তন করতেই হবে এবং ভারতীয় শিল্প খাতকে অবশ্যই বিশ্বের একটি বড় খেলোয়াড় হতে হবে।
সরকারের সদ্য প্রকাশিত মহাকাশ নীতি ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিকে হতে হবে সক্ষম, অনুপ্রেরণামূলক এবং মহাকাশে বাণিজ্যিক উপস্থিতিকে বিকশিত করতে হবে। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে, চন্দ্রযান-৩ এর একটি পরিষ্কার উদাহরণ।
চন্দ্রযান-৩ মিশনটি ইসরো এবং ভারতীয় বেসরকারি খাতের একটি যৌথ প্রকল্প। এই প্রথমবার ভারত সরকার একটি বড় মহাকাশ মিশনে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে। যে ল্যান্ডার ও রোভার চাঁদে যুক্ত করা হয়েছে, তা তৈরি করেছে ইসরোর গবেষণাগারগুলোর সহযোগিতায় কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। মিশনের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় ইসরো তৈরি করেছে এবং মিশনের বেশির ভাগ ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করবে বেসরকারি একটি সংস্থা।
ভারত এখন আর্তেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। আর্তেমিস চুক্তি বিশ্বের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মহাকাশ সংস্থার (নাসা, ইএসএ, সিএসএ, জেএএক্সএ) সঙ্গে একটি চুক্তি। এই চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদে অনুসন্ধান চালানো। চন্দ্রযান-৩ যদি এই চ্যালেঞ্জিং অঞ্চলে পথ দেখাতে পারে, তবে ইসরোর অগ্রগামী ভূমিকা ও কাজের ওপর ভিত্তি করে এসব সংস্থার ভবিষ্যতের মহাকাশচারীরা এই অঞ্চলগুলো থেকে মূল নমুনা এবং উদ্বায়ী বস্তু সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। এটি ভবিষ্যতে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের বিজ্ঞানীরা এখন বিশ্বব্যাপী কয়েকটি প্রথম সারির প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন, যা প্রযুক্তির সীমাকে ভেঙে ফেলছে। ভারত সুইজারল্যান্ডের সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের সহযোগিতায় থার্টি মিটার টেলিস্কোপ প্রকল্পে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। সম্প্রতি অনুমোদিত লেজার ইন্টারফেরোমেট্রিক গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি ইন ইন্ডিয়া (LIGO-India) এবং রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারেতে ভারতের অংশগ্রহণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা এবং মহাকাশ খাতে ভারতের প্রযুক্তিগত সাফল্য এখন বিশ্ব দেখার অপেক্ষায়।
একজন জ্যোতির্পদার্থবিদ হিসেবে, আমি এই প্রকল্পের প্রত্যাশিত বৈজ্ঞানিক ফলাফল দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি। চাঁদ ও পৃথিবী একই সময়ে, একই পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল। চাঁদের গঠন বুঝতে পারলে আমাদের গ্রহ কীভাবে গঠিত হয়েছিল, তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।
যে তিনটি দেশ সফলভাবে চাঁদে মানুষ বা যন্ত্র অবতরণ করাতে পেরেছে, তাদের মধ্যে কেউই এর দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি দূর যেতে পারেনি। ল্যান্ডার ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করবে, দক্ষিণ মেরুর বেশ কাছাকাছি। কেন এ জায়গাটা বেছে নেওয়া হলো?
চাঁদের পৃষ্ঠে অনেক ভৌগোলিক বৈচিত্র্য রয়েছে এবং এর অনেকগুলো খুঁজে দেখার মতো। দক্ষিণ গোলার্ধে অনেক উঁচু পর্বত এবং গভীর গর্ত রয়েছে, যেগুলো উত্তরের তুলনায় অনেক বেশি চরম প্রকৃতির। এগুলো সূর্যালোককে অবরুদ্ধ করে, আর এ কারণে মেরুগুলোর কাছাকাছি স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত বিশাল এলাকা রয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এগুলো উদ্বায়ী পদার্থের আবাসস্থল, যা রাসায়নিক উপাদান বা যৌগ, যা মাঝারি তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্প হয়ে যায়। এর মধ্যে পানি রয়েছে, যা আমরা সন্দেহ করি, সুপার কুলড বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। এই উদ্বায়ী পদার্থ সৌরজগতের ইতিহাসে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।
লোকজন প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ভারতের মতো একটি দরিদ্র দেশ চাঁদে মিশনে ৬০০ কোটি রুপি ব্যয় করতে পারে কি না। আমি বলতে চাই, এই পরিমাণ অর্থ কিছু বড় সিনেমার বাজেটের চেয়ে কম এবং একটি বোয়িং-৭৪৭ বিমানের দামের এক-পঞ্চমাংশ। এটি এত ব্যয়বহুল নয়, বরং এটি দেশ এবং স্থানীয় শিল্পের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে অনেক বেশি অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে।
চন্দ্রযান-৩-এর মতো মিশন পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অনুপ্রাণিত করবে, শুধু এই কারণে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়।
চন্দ্রযানটি উৎক্ষেপণের দিন আমাদের ক্যাম্পাসে এবং রাস্তায় তরুণদের উজ্জ্বল মুখ দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য সারা দেশের তরুণদের কাছে একটি বার্তা পাঠাবে যে ভারতের মাটিতে মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা সম্ভব। এর দাম নির্ধারণ করা কঠিন।
সোমক রায়চৌধুরী, উপাচার্য, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
(দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
চন্দ্রযান-৩ এখন চাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উড্ডয়নের কয়েক মুহূর্ত পরেই পৃথিবীর পাশের কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছে যায় চন্দ্রযান। এরপর শুরু হয় চাঁদের পথে পাড়ি।
পৃথিবী থেকে ৪১ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার দূরে যাচ্ছে এটি। আগামী ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি একটি স্থানে এটির অবতরণ করার কথা রয়েছে। চন্দ্রযান-৩-এ থাকছে একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ আর রোভার ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে।
এই অভিযান সফল হলে ভারত হবে চতুর্থ দেশ, যারা চাঁদের পিঠে পৌঁছাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছে।
যদিও সবাই চন্দ্রযান-৩-এর মসৃণ অবতরণের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু এর যাত্রার আগে গোটা বিষয় ছিল জটিলতায় ভরা, অনেকটা ইউলিসিসের ইথাকার পথে যাত্রার মতো। আর এই সবকিছু আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে।
সারা দেশের মানুষ চন্দ্রযান-৩-এর এই যাত্রা দেখেছে। এলভিএম-৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি ছিল অসাধারণ। শ্রীহরিকোটায় হাজার হাজার স্কুলের বাচ্চা উল্লাসে মেতে ওঠে, যা সারা দেশে স্কুলের মাঠ, বাজার-ঘাট, মানুষের ভিড়ে এবং পরিবারজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেন ভারতের জাতীয় দল একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ জিতেছে। করোনা মহামারির পর থেকে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রবেশ, অনলাইন আলোচনা এবং সংবাদ প্রচার ব্যাপক হয়ে উঠেছে। সবাই এই উৎক্ষেপণ দেখেছে এবং তারা উল্লাস করেছে।
১৯৫৭ সালে রাশিয়া স্পুতনিক উৎক্ষেপণ করার সময় ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানের জনক বিক্রম সারাভাই বলেছিলেন: ‘এমন অনেক লোক আছেন, যাঁরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমাদের কাছে এর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। চাঁদ বা গ্রহ অনুসন্ধানে বা মানববাহী মহাকাশ ফ্লাইট নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার বিলাসী কল্পনা আমাদের নেই। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে আমরা যদি জাতীয়ভাবে একটি অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চাই, তবে মানুষ ও সমাজের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই কারোর পেছনে থাকা চলবে না।’
এই বিক্রম সারাভাই ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছিল।
ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জন্য চন্দ্রযান-৩-এর তাৎপর্য অপরিসীম। মিশনটি ভারতের চন্দ্র-অন্বেষণ কর্মসূচির একটি বড় পদক্ষেপ এবং এটি চাঁদ সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে নিশ্চিত। এটা এই কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে এটি ভারতের সক্ষমতা দেখাবে এবং বিশ্ব মহাকাশ সম্প্রদায়ের কাছে তার খ্যাতি বয়ে আনবে, যা দেশের মহাকাশশিল্পে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সহায়তা করবে।
তবে এটা খুবই বেদনাদায়ক যে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ভারতের বেসরকারি খাতের মহাকাশ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ খুবই সামান্য। অথচ মহাকাশ নিয়ে ব্যবসার আন্তর্জাতিক বাজার এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের। এর পরিবর্তন করতেই হবে এবং ভারতীয় শিল্প খাতকে অবশ্যই বিশ্বের একটি বড় খেলোয়াড় হতে হবে।
সরকারের সদ্য প্রকাশিত মহাকাশ নীতি ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিকে হতে হবে সক্ষম, অনুপ্রেরণামূলক এবং মহাকাশে বাণিজ্যিক উপস্থিতিকে বিকশিত করতে হবে। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে, চন্দ্রযান-৩ এর একটি পরিষ্কার উদাহরণ।
চন্দ্রযান-৩ মিশনটি ইসরো এবং ভারতীয় বেসরকারি খাতের একটি যৌথ প্রকল্প। এই প্রথমবার ভারত সরকার একটি বড় মহাকাশ মিশনে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে। যে ল্যান্ডার ও রোভার চাঁদে যুক্ত করা হয়েছে, তা তৈরি করেছে ইসরোর গবেষণাগারগুলোর সহযোগিতায় কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। মিশনের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় ইসরো তৈরি করেছে এবং মিশনের বেশির ভাগ ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করবে বেসরকারি একটি সংস্থা।
ভারত এখন আর্তেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। আর্তেমিস চুক্তি বিশ্বের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মহাকাশ সংস্থার (নাসা, ইএসএ, সিএসএ, জেএএক্সএ) সঙ্গে একটি চুক্তি। এই চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদে অনুসন্ধান চালানো। চন্দ্রযান-৩ যদি এই চ্যালেঞ্জিং অঞ্চলে পথ দেখাতে পারে, তবে ইসরোর অগ্রগামী ভূমিকা ও কাজের ওপর ভিত্তি করে এসব সংস্থার ভবিষ্যতের মহাকাশচারীরা এই অঞ্চলগুলো থেকে মূল নমুনা এবং উদ্বায়ী বস্তু সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। এটি ভবিষ্যতে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের বিজ্ঞানীরা এখন বিশ্বব্যাপী কয়েকটি প্রথম সারির প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন, যা প্রযুক্তির সীমাকে ভেঙে ফেলছে। ভারত সুইজারল্যান্ডের সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের সহযোগিতায় থার্টি মিটার টেলিস্কোপ প্রকল্পে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। সম্প্রতি অনুমোদিত লেজার ইন্টারফেরোমেট্রিক গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি ইন ইন্ডিয়া (LIGO-India) এবং রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারেতে ভারতের অংশগ্রহণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা এবং মহাকাশ খাতে ভারতের প্রযুক্তিগত সাফল্য এখন বিশ্ব দেখার অপেক্ষায়।
একজন জ্যোতির্পদার্থবিদ হিসেবে, আমি এই প্রকল্পের প্রত্যাশিত বৈজ্ঞানিক ফলাফল দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি। চাঁদ ও পৃথিবী একই সময়ে, একই পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল। চাঁদের গঠন বুঝতে পারলে আমাদের গ্রহ কীভাবে গঠিত হয়েছিল, তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।
যে তিনটি দেশ সফলভাবে চাঁদে মানুষ বা যন্ত্র অবতরণ করাতে পেরেছে, তাদের মধ্যে কেউই এর দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি দূর যেতে পারেনি। ল্যান্ডার ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করবে, দক্ষিণ মেরুর বেশ কাছাকাছি। কেন এ জায়গাটা বেছে নেওয়া হলো?
চাঁদের পৃষ্ঠে অনেক ভৌগোলিক বৈচিত্র্য রয়েছে এবং এর অনেকগুলো খুঁজে দেখার মতো। দক্ষিণ গোলার্ধে অনেক উঁচু পর্বত এবং গভীর গর্ত রয়েছে, যেগুলো উত্তরের তুলনায় অনেক বেশি চরম প্রকৃতির। এগুলো সূর্যালোককে অবরুদ্ধ করে, আর এ কারণে মেরুগুলোর কাছাকাছি স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত বিশাল এলাকা রয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এগুলো উদ্বায়ী পদার্থের আবাসস্থল, যা রাসায়নিক উপাদান বা যৌগ, যা মাঝারি তাপমাত্রায় গলে বা বাষ্প হয়ে যায়। এর মধ্যে পানি রয়েছে, যা আমরা সন্দেহ করি, সুপার কুলড বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। এই উদ্বায়ী পদার্থ সৌরজগতের ইতিহাসে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।
লোকজন প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে ভারতের মতো একটি দরিদ্র দেশ চাঁদে মিশনে ৬০০ কোটি রুপি ব্যয় করতে পারে কি না। আমি বলতে চাই, এই পরিমাণ অর্থ কিছু বড় সিনেমার বাজেটের চেয়ে কম এবং একটি বোয়িং-৭৪৭ বিমানের দামের এক-পঞ্চমাংশ। এটি এত ব্যয়বহুল নয়, বরং এটি দেশ এবং স্থানীয় শিল্পের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে অনেক বেশি অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে।
চন্দ্রযান-৩-এর মতো মিশন পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অনুপ্রাণিত করবে, শুধু এই কারণে এটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়।
চন্দ্রযানটি উৎক্ষেপণের দিন আমাদের ক্যাম্পাসে এবং রাস্তায় তরুণদের উজ্জ্বল মুখ দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য সারা দেশের তরুণদের কাছে একটি বার্তা পাঠাবে যে ভারতের মাটিতে মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা সম্ভব। এর দাম নির্ধারণ করা কঠিন।
সোমক রায়চৌধুরী, উপাচার্য, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
(দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে