বন্দরে নেওয়ার পথে পথে চুরি হচ্ছে রপ্তানির পোশাক

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০০
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০৮

রপ্তানির পোশাক চুরি হচ্ছে পথে পথে। মূলত জাহাজীকরণের জন্য কনটেইনার ডিপোতে নেওয়ার পথে গাড়ি থেকে এসব পণ্য চুরি করা হয়। চুরি করা এসব পোশাক দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি কুরিয়ারে করে দুবাই পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে আরেকটি চক্র। সম্প্রতি একটি চালানের পণ্য চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এসব পেয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করেছে বন্দর থানা-পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড থেকে বিটুপি গ্রুপের রপ্তানিযোগ্য পোশাক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে ইসহাক ডিপোতে নেওয়ার জন্য একটি কাভার্ড ভ্যান ভাড়া করে পরিবহন প্রতিষ্ঠান স্বপ্নীল কার্গো সার্ভিস। পরে আদমজী ইপিজেড থেকে ১১ হাজার ৯৮০টি পোশাক নিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। পরদিন অর্থাৎ গত ১ জানুয়ারি কাভার্ড ভ্যানের চালক চট্টগ্রাম বন্দরের ইসহাক ডিপোতে পণ্যগুলো বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। ওই পণ্য সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও কোরিয়া পৌঁছার পর সেখানকার বায়ারদের একজন ৪২৬টি তৈরি পোশাক কম দেখতে পান, যার দাম ১৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। সেখান থেকে অভিযোগ জানালে ১৮ মার্চ স্বপ্নীল কার্গো সার্ভিসের মালিক এম এ বারী বাবুল বাদী হয়ে কাভার্ড ভ্যানের চালক কালু মিয়াকে আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে বন্দর থানার পুলিশ চট্টগ্রামের আকবরশাহ, ডবলমুরিং, হালিশহর ও ঢাকার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন কাভার্ড ভ্যানের চালক কালু মিয়া, আবুল কাশেম পাইক, মাসুম বিল্লাহ, জামাল হোসেন ও শাহজালাল। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা পণ্য কীভাবে চুরি হয়, চুরি করা পণ্য কোথায়, কীভাবে বিক্রি হয়, তার সবকিছুই স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চুরি করা পোশাকগুলো মূলত ‘এইচঅ্যান্ডএম’ ব্র্যান্ডের। এগুলো চুরির পর কয়েক হাত ঘুরে দুবাইয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া চোর চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, মোট ৪ হাজার ১০০টি তৈরি পোশাক পণ্য চুরি হয়েছে। এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ১ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি।

পুলিশের তদন্তে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি কাভার্ড ভ্যানের চালক কালু মিয়া আরেক আসামি মাসুম বিল্লাহর সহযোগিতায় ভ্যান থেকে ৪ হাজার ১০০ পিস গার্মেন্টস পণ্য (প্যান্ট) চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে নামিয়ে রাখেন। এ সময় মাসুম বিল্লাহ ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় পণ্যগুলো হালিশহরের বাসিন্দা জামাল হোসেনের কাছে বিক্রি করেন। এদিকে জামাল হোসেন এসব পণ্য ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল ইসলাম নামে চক্রের আরেক সদস্যের কাছে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। মঞ্জুরুল আবার রাজধানীর ‘ওসাম বিডি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজালালের কাছে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় পণ্যগুলো বিক্রি করে দেন। শাহজালাল সেসব পণ্য সেফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিং, সেফ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) কামার আল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঠান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ২৪ মার্চ আসামি শাহজালালের অফিস থেকে পণ্য বিক্রি ও টাকা লেনদেন-সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়। তিনি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এর আগেও গার্মেন্টস পণ্য চুরির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত তাঁরা পেশাদার অপরাধী।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত